সিলেটে ড. মঈন খান
“সাইফুর রহমান দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন”

- Update Time : ১০:৩৫:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৮৮ Time View
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, ’খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃত রূপকার। তার কনজারভেটিভ নীতি অনুসরণ করেই দেশের অর্থনীতি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছিল। অথচ পরবর্তী সরকার সেই নীতি থেকে সরে গিয়ে লুটপাট ও পাচারের মাধ্যমে অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে।’
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেট শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে এম সাইফুর রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
ড. মঈন খান আরো বলেন, ’বিএনপি সরকারের সময়ে সাইফুর রহমান আধুনিক ভ্যাট পদ্ধতি চালু করেছিলেন, যা ছিল অর্থনীতির রক্ষাকবচ। সে সময় আওয়ামী লীগ এর বিরোধিতা করে আন্দোলন-হরতাল করলেও সাইফুর রহমান বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে অর্থনীতিকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছিলেন।’
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তার বাবা আব্দুল মোমেন খান ছিলেন কেবিনেট সচিব, আর তিনি নিজে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনকালে সাইফুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হওয়ার সুযোগ পান। পরবর্তীতে মন্ত্রিসভায় থেকেও সাইফুর রহমানের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগের সময়ও তিনি পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে মঈন খান বলেন, ’সাইফুর রহমান ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এবং বিশ্বব্যাংকের গভর্নর হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। ৩৬ বছরে এক ডজন বাজেট উপস্থাপনের কৃতিত্ব তাঁর। সিলেটের একজন মানুষ দেশের অর্থনীতিকে আমূল পরিবর্তন করেছিলেন। তাঁর অর্থনৈতিক দর্শন ও নীতি নিয়ে তরুণদের গবেষণা করা উচিত।’
অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ’কৃষিনির্ভর অর্থনীতিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বনির্ভর অর্থনীতির মর্যাদা দিতে এম সাইফুর রহমান অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন।’
সভাপতির বক্তব্যে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ’সাইফুর রহমান আমাদের বারবার শিখিয়েছেন- দেশনেত্রীর সিদ্ধান্তই হবে মঙ্গলজনক, তাকে ছেড়ে যেও না। মুনাফিক সঙ্গ ত্যাগ করো। এ কথাই ছিল তাঁর শেষ উপদেশ।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম, নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. ইকবাল, ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা. জিয়াউর রহমান চৌধুরী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর মাহবুব এলাহী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি ডা. শামিমুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, মিফতাহ সিদ্দিকী, আবুল কাহের শামীম, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, এমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমেদ খান। এর আগে বন্দরবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও শিরনি বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, আজ শুক্রবার সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মো. সাইফুর রহমানের ১৬তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয় । তিন ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর একটি সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন। ১৯৩২ সালের ৬ অক্টোবর মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনে জন্মগ্রহণ করেন এম. সাইফুর রহমান। শিক্ষাজীবন শুরু করেন গ্রামের মক্তব ও পাঠশালা থেকে। ১৯৪০ সালে তিনি জগৎসী গোপালকৃষ্ণ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। পরে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে আইকম পাস করে ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন।
লন্ডনে প্রারম্ভিকভাবে ব্যারিস্টারি পড়ার পরিকল্পনা থাকলেও পরে তিনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইন ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস থেকে ফেলোশিপ অর্জন করেন। এছাড়া তিনি আর্থিক নীতি ও উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষা লাভ করেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি দলের গঠনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মৌলভীবাজার ও সিলেট থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালের ৮ জুন তিনি সংসদে দ্বাদশ বাজেট পেশ করে দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক বাজেট পেশকারীর রেকর্ড গড়েন। দীর্ঘদিন দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের নিজ বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঢাকা- সিলেট মহাসড়কের খড়িয়ালা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়