সম্রাটের খ্যাতিমান হওয়া উচিত ছিল: আদালতের পর্যবেক্ষণ
- Update Time : ০৫:৪৭:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
- / ৪৭৪ Time View
ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিক হিসেবে যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের খ্যাতিমান হওয়া উচিত ছিল বলে পর্যবেক্ষণে মন্তব্য করেছেন বিচারক।
অবৈধভাবে গুলিসহ বিদেশি পিস্তল রাখার দায়ে মঙ্গলবার সম্রাটকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায়ের আগে পর্যবেক্ষণে বিচারক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, “রেকর্ডে উল্লেখ রয়েছে অভিযুক্ত মো. ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের যুব শাখা—যুবলীগ ঢাকা শহর দক্ষিণ ইউনিটের সভাপতি ছিলেন। সেই কারণে তাকে জনসাধারণের শান্তি, প্রগতি এবং জনস্বার্থ রক্ষাকারী নেতা হিসেবে তার আলাদাভাবে খ্যাতিমান হওয়া উচিত ছিল।
“কিন্তু রেকর্ডে আমি যা দেখতে পাচ্ছি, তা হলো—প্রসিকিউশন তাকে ক্ষমতার অপব্যবহারের একজন প্রতীকী চালক হিসেবে চিত্রিত করেছে।”
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, “তার (সম্রাট) কাছে বৈদ্যুতিক শক মেশিন, বিশেষ লাঠি এবং অ্যামফিটামিন ভিত্তিক মাদক ইয়াবা ট্যাবলেট ছিল, যা গোপন কক্ষে মানুষকে নির্যাতন করার জন্য ব্যবহৃত হত। আমরা নিশ্চিত নই, তিনি এগুলো ব্যবহার করে কতজনকে নির্যাতন করেছিলেন, যাদের তিনি তার রাজ্যের জন্য হুমকি বলে মনে করেছিলেন।
“শুধু তাই নয়, এফআইআরে তাকে ক্যাসিনোর সম্রাট হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং ক্যাসিনো ব্যবসার জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রায় ১০টি ক্লাবের সাথে তার সম্পৃক্ততা ছিল।”পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “তিনি সরকারি ও বেসরকারি অফিসে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী ক্যাডার বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং তাদেরকে তিনি পাপের রাজতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ ছাড়াই বজায় রাখার জন্য ব্যবহার করেছিলেন।
“অভিযুক্ত ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট একটি অত্যাধুনিক ৭.৬৫ পিস্তল এবং পাঁচ রাউন্ড তাজা গুলি রাখার কারণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ব্যতীত অন্য কোনও শাস্তি আইনের উদ্দেশ্য পূরণে যথেষ্ট হবে না।”
পরে বিচারক তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন।
বিভিন্ন অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে, তার প্রথম রায়ে যাবজ্জীবন সাজার ঘোষণা এল।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আত্মগোপনে চলে যান ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। এরপর ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সেদিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।
ওইদিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের তরফে।
ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই দিনই রমনা থানায় অস্ত্র আইন ও মাদকদ্রব্য আইনে দুটি মামলা করেছিলেন র্যাব-১ এর ডিএডি আব্দুল খালেক।
তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর আদালতে অস্ত্র মামলায় অভিযোগ পত্র জমা দেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১ এর উপপরিদর্শক (এসআই) শেখর চন্দ্র মল্লিক। ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর মাদক মামলায় সম্রাট ও সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১ এর এসআই আব্দুল হালিম।
গত ১৬ জানুয়ারি অস্ত্র মামলায় অভিযোগ গঠন করে সম্রাটের বিচার শুরু হয়। ওই দিন তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হওয়ায় তাকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চলে।
বিচার চলাকালে মোট ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল। গত ৭ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ২৮ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলাতেও গত ১৭ জুলাই সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ১৯৫ কোটি টাকা পাচারের আরেক মামলায় তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।







































































































































































































