শিক্ষা ক্যাডারে প্রথম হওয়া অলি উল্লাহ হতে চান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
- Update Time : ১২:৫৪:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
- / ৮৯১ Time View
৪৯তম বিসিএস (স্পেশাল) পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে গণিত বিভাগের হয়ে মেধাক্রমে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. অলি উল্লাহ। নিরলস পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস– এই তিন শক্তিকেই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি মনে করেন তিনি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে বর্তমানে তিনি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত।
বিসিএসের দীর্ঘ প্রস্তুতি, আত্মবিশ্বাসের চর্চা, সফলতার গল্প এবং সাফল্যের পর অনুভূতি সবকিছু নিয়েই কথা বলেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাজিদুর রহমানের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে।
প্রতিবেদক:
প্রথমেই আপনার এই গৌরবময় সাফল্যের জন্য অভিনন্দন। আপনি ৪৯তম বিসিএস (স্পেশাল) পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে গণিত বিভাগের হয়ে মেধাক্রমে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। আপনার অনুভূতি কী?
অলি উল্লাহ:
আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালো লাগছে। এই অনুভূতি আসলে বলে বোঝানো যাবে না। আমি নিজেও এতটুকু আশাবাদী ছিলাম না। আমি মনে করি বাবা-মা, বোন, শিক্ষক, সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র সবার দোয়া, আমার পরিশ্রম আর আল্লাহর রহমতেই ৪৯তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে গণিত বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অর্জন করতে পেরেছি। এটি আমার এবং আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি বড় পাওয়া। এজন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ।
প্রতিবেদক:
বিসিএস যাত্রাটা শুরু কবে থেকে?
অলি উল্লাহ:
আমি যখন মাস্টার্সের দ্বিতীয় সেমিস্টারে ছিলাম, তখন থেকেই অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি পুরোদমে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করি। এর আগে টুকটাক পড়তাম, তবে পুরোদমে শুরু করি মাস্টার্সের মাঝামাঝি সময় থেকে।
প্রতিবেদক:
এটি আপনার কততম বিসিএস?
অলি উল্লাহ:
বিসিএসের যাত্রাটা আমার ৪৫তম বিসিএস থেকে শুরু। ৪৫-এ আমার প্রিলিতে আসে নাই। ৪৬-এ প্রিলিতে টিকে রিটেন পরীক্ষা দিয়েছি। ৪৭-এও প্রিলিতে টিকেছি, রিটেন দিব। এখন ৪৯তম (স্পেশাল) বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে গণিত বিভাগের হয়ে প্রথম হয়েছি।
প্রতিবেদক:
প্রস্তুতি অর্থাৎ, শুরুটা কীভাবে করেছিলেন?
অলি উল্লাহ:
আমি আসলে কোনো কোচিং সেন্টারে ভর্তি হইনি। নিজে নিজেই প্রস্তুতি নিয়েছি, তবে আমরা কয়েকজন একসাথে কানেক্টেড ছিলাম—যারা একে অপরকে হেল্প করতাম। কিছু সিনিয়রও ছিলেন যারা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কিছু মডেল টেস্ট দিয়েছি, তবে কোনো কোচিং সেন্টারে ভর্তি হইনি।
প্রতিবেদক:
বিসিএসের জন্য অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
অলি উল্লাহ:
আমার অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট মোটামুটি। এত ভালোও না, আবার একেবারে খারাপও না। বিসিএসের জন্য আমি মনে করি অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট এতটা গুরুত্বপূর্ণ না। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একাডেমিক রেজাল্ট অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একাডেমিক রেজাল্ট খারাপ বলে কারও হতাশ হওয়ার কারণ নেই। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে রেজাল্ট ততটা প্রভাব ফেলে না।
প্রতিবেদক:
বিসিএস নামক ম্যারাথনে আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কী ছিল?
অলি উল্লাহ:
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবাই বিসিএসকেই প্রাধান্য দেয়। নির্দিষ্ট কোনো অনুপ্রেরণা ছিল না। বড় ভাই, শিক্ষকদের কাছ থেকেই আসলে যতটুকু অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আমার আসলে ব্যাংকার হওয়ার টার্গেট ছিল, সেটা হয়নি। বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না কারণ আমি আমার পরিবারের একমাত্র ছেলে। চেয়েছিলাম দেশে থেকেই, মা-বাবার সাথে থেকেই কিছু একটা করতে। সেই জায়গা থেকেই বিসিএস প্রস্তুতি শুরু।
প্রতিবেদক:
অ্যাকাডেমিক লাইফে টিউশন করাতেন কি না? টিউশন বিসিএস প্রস্তুতির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
অলি উল্লাহ:
হ্যাঁ, আমি অ্যাকাডেমিক লাইফে টিউশন করাতাম। গুরুত্বপূর্ণ বলতে, টিউশনি করালে দেখা যায় আপনার একটা চর্চা থাকে। আপনি যখন নবম-দশম শ্রেণির গণিত করাবেন, তখন গণিতের ওপর আপনার একটা প্র্যাকটিস চলতে থাকে। অনেকেই গণিতে দুর্বল হয়, কিন্তু টিউশন করালে সেই জায়গাটা শক্ত হয়। এতে কিছুটা সুবিধা পাওয়া যায়।
প্রতিবেদক:
আপনি তো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেন। তারপরও বিসিএসের দিকে ঝোঁকার কারণ কী ছিল?
অলি উল্লাহ:
আমি বর্তমানে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে আছি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে যে নিরাপত্তা বা বিসিএসের যে সম্মান, সেই জায়গা থেকেই বিসিএসের চেষ্টা করেছি। সবাই তো ভালো অবস্থানে যেতে চায়।
প্রতিবেদক:
ভালোদের মধ্যে আপনি ভালো করেছেন—অর্থাৎ, সেরাদের মধ্যে আপনি সেরা। এই সেরা হওয়ার জন্য জুনিয়রদের কী পরামর্শ দেবেন?
অলি উল্লাহ:
আমার জুনিয়ররা যদি ভালোভাবে পড়াশোনা করে, তারা আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে আমি আশা করি। আজ আমার এই সাফল্যে তারা যেমন খুশি হয়েছে, আমি তাদের সফলতাতেও তেমনি আনন্দিত হবো। আমি বলবো—যারা বিসিএস নিয়ে ভাবছেন, তারা অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা ঠিক রেখে প্রস্তুতি শুরু করুন। বিশেষ করে ইংরেজি আয়ত্ত করা খুবই জরুরি। বিসিএস একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রতিযোগিতা, এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক। তাই নিজেকে সেইভাবে তৈরি করতে হবে। সবার জন্য শুভকামনা।
প্রতিবেদক:
সামনের লক্ষ্য কী আপনার?
অলি উল্লাহ:
যদি কখনো সুযোগ পাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়াকেই সবার উপরে প্রাধান্য দেবো। আমি দুই বছরের মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আছি। শিক্ষকতা জায়গাটা আমার খুব পছন্দের। ইচ্ছে আছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। আরও কিছু বিসিএস বাকি আছে—যদি ভালো কিছু হয়, কাস্টমস ক্যাডারেও যেতে চাই।
নিজের সাফল্যকে দায়িত্ব হিসেবে দেখছেন অলি উল্লাহ। তিনি চান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অনেক শিক্ষার্থী যেন সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন।




























































































































































































