ঢাকা ০৯:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাকসুর ২২ বছরের টাকার হিসাব প্রশাসনের জানা নেই

রাবি প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৬:০৬:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১০০২ Time View

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের পর গতকাল (৪ নভেম্বর) প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হলেও, রাকসুর সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ ২২ বছরের ফান্ডের হিসাব দিতে পারেননি। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সেই হিসাবের হদিস না দেওয়ার ব্যাপারে গা-ছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছে।

গতকাল, রাকসু ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সহ-সভাপতি (ভিপি) মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের পূর্বের ২২ বছরের কোনো হিসাব নেই, যা নিয়ে প্রশাসন পুরোপুরি উদাসীন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাকসুর এজিএস সালমান সাব্বির। তিনি বলেন, শপথ গ্রহণের পর গতকাল রাকসুর প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল রাকসুর তহবিলকে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা। তিনি আরও বলেন, আমরা দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে তড়িঘড়ি আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, কিন্তু সেই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে রাকসু তহবিলের যে অর্থ প্রয়োজন, তা এখনও আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়নি।

এজিএস আরও বলেন, গতকাল আমরা আশা করেছিলাম, বিগত বছরগুলোর ব্যয়ের অডিটসহ রাকসু তহবিলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারব। কিন্তু রাকসুর বর্তমান সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ আমাদের সেই তথ্য দিতে পারেননি।

ইচ্ছেমতো তহবিলের অর্থ ব্যয় নিয়ে সালমান সাব্বির বলেন, দীর্ঘ ৩৬ বছর রাকসু অকার্যকর থাকলেও, নিয়মিতভাবে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। গত বছরগুলোতে রাকসুর সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ ইচ্ছেমতো তহবিলের অর্থ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করেছেন। তবে, গতকালের অধিবেশনে কীভাবে এই অর্থ ব্যয় হয়েছে এবং কিভাবে ফেরত আনা যাবে এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তবে রাকসু প্রতিনিধিরা এই কমিটির ওপর আস্থা রেখে কাজ করতে চাইছেন।

অর্থের কোনো হদিস নেই উল্লেখ করে রাকসুর এজিএস সালমান সাব্বির বলেন, প্রশাসন ২০১৩ সালের পূর্বের হিসাব দিতে পারছে না। ২০১৩ সালের আগে রাকসুর সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষরা যেভাবে তহবিলের অর্থ খরচ করেছেন, তার কোনো হদিস নেই। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে আমরা এর জবাব চাইবো। তবে, যেহেতু ছাত্রদের কল্যাণে এই টাকা ব্যবহৃত হতে হবে, সেক্ষেত্রে যারা এই টাকা অন্য কোনো খাতে খরচ করেছেন, তাদেরকে অবশ্যই সেই অর্থ ফেরত দিতে হবে।

রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ২০১৩ সালের পর থেকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট রয়েছে এবং ২০২১ সাল থেকে অনলাইন হিসাবও চালু হয়েছে। কিন্তু ১৯৯০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত প্রায় ২২ বছরের হিসাব নেই। মুজিব শতবর্ষ পালনে রাকসুর ফান্ড থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে, তবে এর পূর্বে ৩টি মেয়াদে তারা টাকা নিয়েছিল, যার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ায় সমস্যাগুলোর সমাধান শীঘ্রই হবে।

রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, নির্বাচনের পর আমরা এখনো পূর্ণরূপে কাজ শুরু করতে পারিনি, কারণ রাকসুর তহবিলের হিসাব এখনও আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়নি। গতকাল আমরা রাকসু তহবিলের অডিট কমিটি পাস করাতে পেরেছি, তবে এটি আগেই করা উচিত ছিল। নির্বাচনের আগে এ ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হলে আমরা এখনই কাজ শুরু করতে পারতাম।

তিনি আরও বলেন, ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও তহবিলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ থাকার কথা ছিল, তবে সেই অর্থের কোনো কিছুই এখনো আমরা পাচ্ছি না। ফলে শিক্ষার্থীদের আস্থা বজায় রাখতে যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করতে এখন শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

উল্লেখ্য, রাকসুর ১৪তম নির্বাচন ১৯৮৯-৯০ সেশনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং ৩৫ বছর পর গত ১৬ অক্টোবর ১৫তম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

রাকসুর ২২ বছরের টাকার হিসাব প্রশাসনের জানা নেই

রাবি প্রতিনিধি
Update Time : ০৬:০৬:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের পর গতকাল (৪ নভেম্বর) প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হলেও, রাকসুর সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ ২২ বছরের ফান্ডের হিসাব দিতে পারেননি। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সেই হিসাবের হদিস না দেওয়ার ব্যাপারে গা-ছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছে।

গতকাল, রাকসু ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সহ-সভাপতি (ভিপি) মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের পূর্বের ২২ বছরের কোনো হিসাব নেই, যা নিয়ে প্রশাসন পুরোপুরি উদাসীন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাকসুর এজিএস সালমান সাব্বির। তিনি বলেন, শপথ গ্রহণের পর গতকাল রাকসুর প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল রাকসুর তহবিলকে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা। তিনি আরও বলেন, আমরা দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে তড়িঘড়ি আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, কিন্তু সেই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে রাকসু তহবিলের যে অর্থ প্রয়োজন, তা এখনও আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়নি।

এজিএস আরও বলেন, গতকাল আমরা আশা করেছিলাম, বিগত বছরগুলোর ব্যয়ের অডিটসহ রাকসু তহবিলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারব। কিন্তু রাকসুর বর্তমান সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ আমাদের সেই তথ্য দিতে পারেননি।

ইচ্ছেমতো তহবিলের অর্থ ব্যয় নিয়ে সালমান সাব্বির বলেন, দীর্ঘ ৩৬ বছর রাকসু অকার্যকর থাকলেও, নিয়মিতভাবে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। গত বছরগুলোতে রাকসুর সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ ইচ্ছেমতো তহবিলের অর্থ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করেছেন। তবে, গতকালের অধিবেশনে কীভাবে এই অর্থ ব্যয় হয়েছে এবং কিভাবে ফেরত আনা যাবে এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তবে রাকসু প্রতিনিধিরা এই কমিটির ওপর আস্থা রেখে কাজ করতে চাইছেন।

অর্থের কোনো হদিস নেই উল্লেখ করে রাকসুর এজিএস সালমান সাব্বির বলেন, প্রশাসন ২০১৩ সালের পূর্বের হিসাব দিতে পারছে না। ২০১৩ সালের আগে রাকসুর সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষরা যেভাবে তহবিলের অর্থ খরচ করেছেন, তার কোনো হদিস নেই। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে আমরা এর জবাব চাইবো। তবে, যেহেতু ছাত্রদের কল্যাণে এই টাকা ব্যবহৃত হতে হবে, সেক্ষেত্রে যারা এই টাকা অন্য কোনো খাতে খরচ করেছেন, তাদেরকে অবশ্যই সেই অর্থ ফেরত দিতে হবে।

রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ২০১৩ সালের পর থেকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট রয়েছে এবং ২০২১ সাল থেকে অনলাইন হিসাবও চালু হয়েছে। কিন্তু ১৯৯০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত প্রায় ২২ বছরের হিসাব নেই। মুজিব শতবর্ষ পালনে রাকসুর ফান্ড থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে, তবে এর পূর্বে ৩টি মেয়াদে তারা টাকা নিয়েছিল, যার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ায় সমস্যাগুলোর সমাধান শীঘ্রই হবে।

রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, নির্বাচনের পর আমরা এখনো পূর্ণরূপে কাজ শুরু করতে পারিনি, কারণ রাকসুর তহবিলের হিসাব এখনও আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়নি। গতকাল আমরা রাকসু তহবিলের অডিট কমিটি পাস করাতে পেরেছি, তবে এটি আগেই করা উচিত ছিল। নির্বাচনের আগে এ ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হলে আমরা এখনই কাজ শুরু করতে পারতাম।

তিনি আরও বলেন, ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও তহবিলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ থাকার কথা ছিল, তবে সেই অর্থের কোনো কিছুই এখনো আমরা পাচ্ছি না। ফলে শিক্ষার্থীদের আস্থা বজায় রাখতে যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করতে এখন শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

উল্লেখ্য, রাকসুর ১৪তম নির্বাচন ১৯৮৯-৯০ সেশনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং ৩৫ বছর পর গত ১৬ অক্টোবর ১৫তম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।