রংপুরে ৯১২ পূজামণ্ডপ ঢাকঢোল, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে মাতবে

- Update Time : ১২:৪২:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৪৩২ Time View
বছর ঘুরে শরতের শুভ্রতা নিয়ে কাশফুলের দোলায় ঢাকঢোল, শঙ্খ ও উলুধ্বনির সাজ সাজ রবে শুরু হয়ে গেছে দুর্গাপূজার আয়োজন। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় এই উৎসব ঘিরে মণ্ডপে মণ্ডপে প্রস্তুতির পর্ব এখন শেষ পর্যায়ে। রোববার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব। পাঁচ দিনব্যাপী এই মহোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে আগামী ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে।
এদিকে, রংপুরে ধর্মীয় সম্প্রীতির আবহে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব পালনে প্রশাসন ও মণ্ডপ কমিটি সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। রংপুরের আট উপজেলা ও মহানগর মিলিয়ে এবারে মোট ৯১২টি পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে।
পুলিশ ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রংপুর মহানগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে ১৫৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া, জেলার বাইরে আটটি উপজেলায় ৭৪১টি মণ্ডপে দুর্গোৎসব হবে। এর মধ্যে কোতোয়ালি থানায় ৯১টি, গঙ্গাচড়ায় ৯৬টি, তারাগঞ্জে ৬১টি, বদরগঞ্জে ১০৬টি, মিঠাপুকুরে ১৩৯টি, পীরগঞ্জে ৮৯টি, পীরগাছায় ৮৭টি এবং কাউনিয়ায় ৭২টি মণ্ডপ রয়েছে। এছাড়া বদরগঞ্জ পৌরসভায় ১০টি ও পীরগঞ্জ পৌরসভায় সাতটি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন রয়েছে।
পাঁচ দিনব্যাপী এই দুর্গোৎসবে মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী এবং বিজয়া দশমী যথাযথ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হবে।
এ বছর দেবী দুর্গার আগমন হবে গজে (হাতি) এবং প্রস্থান হবে দোলায় (পালকি)। শাস্ত্রমতে, গজে আগমন শান্তি, সমৃদ্ধি ও শস্য-শ্যামলার প্রতীক। তবে দোলায় প্রস্থানকে অশুভ ধরা হয়, যা মহামারী বা মড়কের ইঙ্গিত বহন করে।
শাস্ত্রকারদের ব্যাখ্যা অনুসারে, দুর্গা ভক্তদের সব ধরনের বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা ও যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করেন। ‘মহাচণ্ডী’তে উল্লেখ রয়েছে যে ত্রেতা যুগে রামচন্দ্র রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎকালে মহামায়ার পূজা করেছিলেন, যার ফলে তিনি যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন। সেই থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতিবছর শরৎকালে দুর্গাপূজা পালন করে আসছেন।
এদিকে, মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা নির্মাণ, প্যান্ডেল সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই প্রায় শেষ। উৎসব ঘিরে প্রত্যেক মণ্ডপেই ভক্ত, পূণ্যার্থী ও সাধারণ মানুষের ভিড় বাড়ছে।
শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদ রংপুর জেলা ও মহানগরের আহ্বায়ক ডা. নিখিলেন্দ্র শংকর গুহ রায় বলেন, ‘এবার রংপুর জেলার মোট ৯১২টি মণ্ডপে দুর্গোৎসব হচ্ছে। মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, বস্ত্র ও মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা এবং বিজয়া শোভাযাত্রার আয়োজন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, উত্তর জনপদের সম্প্রীতির শহর রংপুরে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ সব ধর্মাবলম্বীর সহযোগিতা চাই। এখন পর্যন্ত প্রস্তুতির সবকিছুই সম্পন্ন হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে। আমরা বিশ্বাস করি, শেষ পর্যন্ত উৎসব নির্বিঘ্নেই হবে। এ ব্যাপারে রংপুরবাসীরও সর্বাত্মক সহায়তা কামনা করছি।
রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ মন্দির-মণ্ডপগুলো চিহ্নিত করে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং সেল চালু, মন্দির-মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ মোবাইল টিমের মাধ্যম টহল জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সাথে জড়িতদের কঠোর হস্তে দমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকবে হবে।
রংপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আবু সাইম বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পূজা শুরুর আগ থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন। মণ্ডপ কমিটির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়েছে। আশা করছি, উৎসবমুখর পরিবেশেই পূজা উদযাপিত হবে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, প্রত্যেক মণ্ডপে স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার টহল জোরদার করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপগুলোতে থাকবে সিসিটিভি নজরদারি, নারী পুলিশ সদস্যসহ মোবাইল টহলদল এবং প্রয়োজনীয় আনসার সদস্য। এছাড়া, যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
সম্প্রতি রংপুরে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ও মন্দির পরিদর্শনে এসে র্যাবের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত আইজিপি একেএম শহিদুর রহমান বলন, দূর্গাপূজাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা চেষ্টার পায়তারা চলছে। আমরা এটি টের পাচ্ছি। এনিয়ে আমাদের আইসিটি বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে। আমরা স্যোসাল মিডিয়া মনিটর করছি।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া পূজা নিয়ে কিছু জানতে পারলে, সাধারণ জনগণকে অনুরোধ করছি আপনারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাবেন। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেটি ভেরিফাই করবো। যদি ঘটনা সত্য হয়, তাহলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আর যদি কেউ গুজবের উদ্দেশ্যে ছড়ায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা সকলে মিলে সতর্ক থাকলে পূজায় কোন বিশৃঙ্খলা হবে না।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে থেকে দল, মত, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে দূর্গা উৎসব উদযাপন করি। এই অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়