ঢাকা ০১:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ভুয়া সেনা সদস্য পরিচয়ে প্রেম: অতপর সেনাবাহিনীর হাতে আটক ট্রেনের ভাড়া ৩২ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেছে জামায়াত ইন্টারনেট শাটডাউন রোধে আইন আসছে : ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য ভেঙে ফেলব : নাহিদ ইসলাম এনসিপির সমাবেশে হামলা: আ.লীগের দেড় হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা বাংলাদেশে স্টারলিংক কার্যক্রমের প্রশংসা করলেন লরেন ড্রেয়ার জুলাই সনদ তৈরির প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা ভারতে আশ্রিত আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য মমতার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার সুযোগ হারানো যাবে না : প্রধান বিচারপতি

রংপুরে ‘অর্জন’ ভাস্কর্যে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছবি মুছে দিয়েছে জুলাই যোদ্ধারা

কামরুল হাসান টিটুু, রংপুর ব‌্যুরো
  • Update Time : ০৫:৫১:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
  • / ২৩ Time View

রংপুর নগরীর প্রবেশ পথ মর্ডান মোড়ে স্বাধীনতার স্মারক ম্যুরাল ‘অর্জন’ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি কালি দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাত ১১টার দিকে স্প্রে ক্যান ও কালো রং দিয়ে মুছে দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত কয়েক শিক্ষার্থী। এই কাজে তারা রংপুর সিটি করপোরেশনের বিম লিফটার ব্যবহার করেন। তবে ম্যুরালে থাকা মুক্তিযুদ্ধের অন্য ছবি অক্ষত আছে।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় সিটি করপোরেশনের বিম লিফটার নিয়ে আসেন কয়েকজন জুলাই বিপ্লবী যোদ্ধা। তবে বিম লিফটাররা ছোট হওয়ায় কয়েকবার চেষ্টা করেও তারা ছবি মুছতে পারছিলেন না। পরে কাঠের মাথায় কাপড় পেঁচিয়ে তাতে রং ও স্প্রে মাখিয়ে শেখ মুজিবের ছবি মুছে দেন গণ-অভ্যুত্থানে আহত রাকিবুল ও পলাশ।

এ সময় তাদেরকে ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’, ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘জনে জনে খবর দে, আওয়ামী লীগের কবর দে’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিতে কালি লেপন করে উল্লাস প্রকাশ করেন তারা।

পরে রাজিবুল ইসলাম পলাশ বলেন, শেখ হাসিনার স্বৈরাচার সরকারের প্রতীক বিভিন্ন জায়গা থেকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। মডার্ন মোড়ের ভাস্কর্য থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি মুছে দেওয়ার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপিকে বলেছিলাম, কিন্তু তারা উদ্যোগ নেয়নি। তাই আমরা আহত জুলাই যোদ্ধারা ছবিটি মুছে দিলাম।

১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রংপুরের বীর জনতা বাউঙ্কা, লাঠি, বল্লম, তীর–ধনুক নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করেন। স্বাধীনতার স্মৃতিস্মারক হিসেবে ভাস্কর্য ‘অর্জন’-এ সেই ঐতিহাসিক ঘটনা উপস্থাপন করা হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে ১৯৯৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করা হয়। এর উচ্চতা প্রায় ৩৫ ফুট। উদ্বোধক হিসেবে ফলকে থাকা শেখ হাসিনার নামটি ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীরা মুছে দিয়েছে।

এদিকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি মুছে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব রাজিমুজ্জামান হৃদয় বলেন, যতদূর জানি, জুলাইয়ের গেজেটভুক্ত কয়েকজন আহত নিজ উদ্যোগে ওখানে যে শেখ মুজিবুর রহমানের অর্থাৎ ফ্যাসিস্টের যে প্রতীক আছে সেটাতে রং করেছে তারা। অর্জন ভাঙা হয়নি, কারণ এটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বহন করে।

এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর তাদের অফিসিয়াল পেজে ছবিসহ একটি পোস্ট করছেন। সেখানে লেখা রয়েছে _’গোপালগঞ্জে খবর পাঠাও— রংপুরে বাকশালি মুজিবের ছবিতে কালো রং মেখে দিয়েছে কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে সেখানে ‘অর্জন’ ভাস্কর্যে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। পরে, ঝড় বৃষ্টিতে পতাকাটি সরে গেলে আগের মতো ভাস্কর্যের দিকে তাকালে চোখে পড়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। দেশের কোথাও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত অর্জন ভাস্কর্যে তার ছবি চোখে না পড়লেও রংপুরে নানা ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এদিকে, গত বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ এনসিপির ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহএনসিপি, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠন। এরই রেশ ধরে শেখ মুজিবুরের ছবিতে কালি লেপনের ঘটনাটি ঘটেছে।

এর আগে, এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালসহ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এছাড়াও রংপুর জেলা পরিষদ ও সদর উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন উপজেলায় থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি ভেঙ্গে ফেলা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

রংপুরে ‘অর্জন’ ভাস্কর্যে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছবি মুছে দিয়েছে জুলাই যোদ্ধারা

কামরুল হাসান টিটুু, রংপুর ব‌্যুরো
Update Time : ০৫:৫১:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

রংপুর নগরীর প্রবেশ পথ মর্ডান মোড়ে স্বাধীনতার স্মারক ম্যুরাল ‘অর্জন’ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি কালি দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাত ১১টার দিকে স্প্রে ক্যান ও কালো রং দিয়ে মুছে দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত কয়েক শিক্ষার্থী। এই কাজে তারা রংপুর সিটি করপোরেশনের বিম লিফটার ব্যবহার করেন। তবে ম্যুরালে থাকা মুক্তিযুদ্ধের অন্য ছবি অক্ষত আছে।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় সিটি করপোরেশনের বিম লিফটার নিয়ে আসেন কয়েকজন জুলাই বিপ্লবী যোদ্ধা। তবে বিম লিফটাররা ছোট হওয়ায় কয়েকবার চেষ্টা করেও তারা ছবি মুছতে পারছিলেন না। পরে কাঠের মাথায় কাপড় পেঁচিয়ে তাতে রং ও স্প্রে মাখিয়ে শেখ মুজিবের ছবি মুছে দেন গণ-অভ্যুত্থানে আহত রাকিবুল ও পলাশ।

এ সময় তাদেরকে ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’, ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘জনে জনে খবর দে, আওয়ামী লীগের কবর দে’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিতে কালি লেপন করে উল্লাস প্রকাশ করেন তারা।

পরে রাজিবুল ইসলাম পলাশ বলেন, শেখ হাসিনার স্বৈরাচার সরকারের প্রতীক বিভিন্ন জায়গা থেকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। মডার্ন মোড়ের ভাস্কর্য থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি মুছে দেওয়ার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপিকে বলেছিলাম, কিন্তু তারা উদ্যোগ নেয়নি। তাই আমরা আহত জুলাই যোদ্ধারা ছবিটি মুছে দিলাম।

১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রংপুরের বীর জনতা বাউঙ্কা, লাঠি, বল্লম, তীর–ধনুক নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করেন। স্বাধীনতার স্মৃতিস্মারক হিসেবে ভাস্কর্য ‘অর্জন’-এ সেই ঐতিহাসিক ঘটনা উপস্থাপন করা হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে ১৯৯৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করা হয়। এর উচ্চতা প্রায় ৩৫ ফুট। উদ্বোধক হিসেবে ফলকে থাকা শেখ হাসিনার নামটি ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীরা মুছে দিয়েছে।

এদিকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি মুছে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব রাজিমুজ্জামান হৃদয় বলেন, যতদূর জানি, জুলাইয়ের গেজেটভুক্ত কয়েকজন আহত নিজ উদ্যোগে ওখানে যে শেখ মুজিবুর রহমানের অর্থাৎ ফ্যাসিস্টের যে প্রতীক আছে সেটাতে রং করেছে তারা। অর্জন ভাঙা হয়নি, কারণ এটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বহন করে।

এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর তাদের অফিসিয়াল পেজে ছবিসহ একটি পোস্ট করছেন। সেখানে লেখা রয়েছে _’গোপালগঞ্জে খবর পাঠাও— রংপুরে বাকশালি মুজিবের ছবিতে কালো রং মেখে দিয়েছে কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে সেখানে ‘অর্জন’ ভাস্কর্যে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। পরে, ঝড় বৃষ্টিতে পতাকাটি সরে গেলে আগের মতো ভাস্কর্যের দিকে তাকালে চোখে পড়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। দেশের কোথাও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত অর্জন ভাস্কর্যে তার ছবি চোখে না পড়লেও রংপুরে নানা ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এদিকে, গত বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ এনসিপির ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহএনসিপি, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠন। এরই রেশ ধরে শেখ মুজিবুরের ছবিতে কালি লেপনের ঘটনাটি ঘটেছে।

এর আগে, এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালসহ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এছাড়াও রংপুর জেলা পরিষদ ও সদর উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন উপজেলায় থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি ভেঙ্গে ফেলা হয়।