মাস দুয়েকের মধ্যে’ চালু হচ্ছে সিলেট জেলা হাসপাতালের কার্যক্রম

- Update Time : ০৪:২৬:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৪৬ Time View
‘আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে জটিলতা কাটিয়ে সিলেট জেলা হাসপাতালের কার্যক্রম চালু হচ্ছে বলে জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। সিলেটে খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটি সয়ংসম্পূর্ণ ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরি করা হবে। যাতে করে সিলেটের ক্যান্সার আকান্ত রোগীদের ঢাকা কিংবা দেশের বাইরে যেতে না হয়। আগামী ৩ মাসের মধ্যে সিলেটের ক্যান্সার হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হবে ।’ বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্মিতব্য ক্যান্সার ইউনিটের কাঠামোগত উন্নয়ন পরিদর্শনে আসেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম। এ সময় তার সাথে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমসহ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছিলেন। পরিদর্শন শেষে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উন্নয়নে চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম জানান, ‘আমরা সবাই মিলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।’ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছেন। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিদর্শন করা। ক্যান্সার হাসপাতালের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। তারা দেখতে এসেছেন কাজ কতদূর অগ্রসর হয়েছে এবং সম্পূর্ণ হতে আর কত সময় লাগবে। আমরা আশা করছি আগামী ৩ মাসের মধ্যেই ক্যান্সার হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।’ তিনি বলেন, ‘ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গঠনমূলক ও কাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা এই সমস্যাগুলোর সমাধানে কাজ করছি।’ জেলা প্রশাসক বলেন, ‘৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন, যা একটি বিশাল চাপ সৃষ্টি করছে। প্রতিনিধি দল মূলত নতুন ভবনের কাজের অগ্রগতি দেখতে এসেছেন। আশা করছি আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে এই ভবনের কাজ সম্পন্ন হবে এবং রোগীদের সেখানে স্থানান্তর করা যাবে।’
মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘আগামী এক থেকে দুই মাসের মধ্যেই সিলেট জেলা হাসপাতালের কার্যক্রম চালু হবে। এতে করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেকটাই কমে আসবে। এর ফলে চিকিৎসার মান আরও উন্নত হবে এবং চিকিৎসকরাও স্বস্তিতে কাজ করতে পারবেন।’ জেলা প্রশাসক জানান, ‘ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে দালালমুক্ত করতে ইতোমধ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ’ জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, খুব শিগগিরই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্বিক সেবার মান উন্নত হবে এবং এ অঞ্চল একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতালসহ আধুনিক চিকিৎসা সুবিধায় সমৃদ্ধ হবে।’
এদিকে,নাগরিক সমাজের আপত্তি উপেক্ষা করে ঐতিহ্যবাহী আবু সিনা ছাত্রাবাস ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছিলো ২৫০ শয্যার সিলেট জেলা হাসপাতাল। তবে নির্মাণ কাজ শেষেও প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এ হাসপাতালটি। প্রায় ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই হাসপাতালের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালে শেষ হলেও এখন এর দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ। স্বাস্থ্য সংশ্লিস্টদের মতামত না নিয়ে স্থাপনা নির্মান করায় এই হাসপাতাল ভবনের দায়িত্ব নিতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা। ফলে হাসপাতাল কমপ্লেক্স বুঝিয়ে দেওয়ার মতো কর্তৃপক্ষ পাচ্ছে না গণপূর্ত বিভাগ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সিভিল সার্জন অফিসসহ কেউই এর দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছে না। ফলে হাসপাতাল চালু করা নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। তবে সিলেটের জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম জানান, দুই মাসের মধ্যে এই হাসপাতাল চালু করা হবে। এই হাসপাতালের দায়িত্ব হস্তান্তরসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে ৮ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকৌশলীসহ ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগ জানায়, ১৫ তলা হাসপাতাল ভবনে আনুমানিক ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আটতলা ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। হাসপাতাল ভবনের বেজমেন্টে রয়েছে কারপার্কিং; প্রথম তলায় টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম; দ্বিতীয় তলায় আউটডোর, রিপোর্ট ডেলিভারি ও কনসালট্যান্ট চেম্বার; তৃতীয় তলায় ডায়াগনস্টিক; চতুর্থ তলায় কার্ডিয়াক ও জেনারেল ওটি, আইসিসিইউ, সিসিইউ; পঞ্চম তলায় গাইনি বিভাগ, অপথালমোলজি, অর্থপেডিক্স ও ইএনটি বিভাগ এবং ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় ওয়ার্ড ও কেবিন।এর মধ্যে আইসিইউ বেড ১৯টি, সিসিইউ বেড ৯টি এবং ৪০টি কেবিন রয়েছে।জেলা হাসপাতাল প্রসঙ্গে সিলেট গণপূর্ত বিভাগের বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাফর জানান,‘নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখন পরিচ্ছন্নতাসহ আনুষাঙ্গিক সামান্য কিছু কাজ বাকি রয়েছে। যে কাজগুলো মাসখানেকের ভেতরে শেষ করা হবে। এগুলো শেষ হলেই পুরোপুরিভাবে ভবনের সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। তারা ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে। এই কমিটি হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দেবে, আমরা সেভাবেই কাজ করবো।’
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা.মো. আনিসুর রহমান জানান, মন্ত্রণালয় থেকে ৮ সদস্যের একটি কমিটি দেওয়া হয়েছে। কমিটি তাদের কাজ করে যাচ্ছে। কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে নব নির্মিত হাসপালকেই সিলেট শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হতে পারে।২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৬ দশমিক ৯৮ একর জমির ওপর হাসপাতালের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব পায় পদ্মা অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়। এর আগে আবু সিনা ছাত্রাবাস প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন উল্লেখ করে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন সিলেটের নাগরিক সমাজ।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়