ঢাকা ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাফিয়া চক্রের গুলিতে ভূমধ্যসাগরে হারিয়ে গেল মাদারীপুরের তিন তরুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০১:৪৮:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
  • / ২৫ Time View

মুন্না, ইমরান ও বায়েজিদ

ইতালি যাওয়ার স্বপ্নে বাড়ি ছেড়েছিলেন মাদারিপুরের তিন তরুণ। সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় তারা লিবিয়ার একটি মাফিয়া চক্রের হাতে গুলিতে নিহত হয়েছেন। তাদের মরদেহ সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। নিহতরা হলেন, মাদারীপুর সদরের আদিত্যপুর গ্রামের ২২ বছর বয়সী ইমরান খান; রাজৈর উপজেলার দুর্গাবদ্দি গ্রামের ২৪ বছর বয়সী মুন্না তালুকদার; এবং একই উপজেলার ঘোষালকান্দি গ্রামের ২০ বছর বয়সী বায়েজিদ শেখ। পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।

তিনজনই ৮ অক্টোবর বাড়ি ছাড়েন। তাদের আশা ছিল ইতালিতে গেলে উন্নত ভবিষ্যৎ পাবেন। প্রথমে তাদের লিবিয়ায় নেওয়া হয়। পরিবারগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল তারা একটি দালালের মাধ্যমে জানতে পারেন, তিনজনকেই গত ১ নভেম্বর সমুদ্র পারাপারের সময় হত্যা করা হয়েছে।

অভিযোগ, এক দশক ধরে লিবিয়ায় থাকা আদিত্যপুর গ্রামের শিপন খান ওই তিনজনের যাত্রার ব্যবস্থা করেছিলেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, তিনি মাদারীপুর এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে তরুণদের অবৈধভাবে ইতালিতে পাঠানোর জন্য পরিচিত। গত এক বছরেই তিনি আদিত্যপুর থেকে ৫০ জনেরও বেশি তরুণকে লিবিয়া হয়ে সেদেশে পাঠিয়েছেন।

এক্ষেত্রে তার ভাই সেলিম তাকে সহায়তা করেছেন বলে জানা গেছে। ইমরানের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর দুই ভাইয়ের পরিবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানান।

ইমরানের বড় বোন ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘একদিন আমার ভাই আমাকে বলল, শিপন দালালকে ২০ লাখ টাকা দিলে ইতালিতে নিয়ে যাবে। আমার ভাইয়ের বেশ কয়েকজন বন্ধুও যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। সে তাদের সঙ্গে যেতে চেয়েছিল।

তিনি জানান, তিনি শিপনকে বলেন তার ভাইকে যেন সরাসরি ইতালিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ‘আজ স্থানীয় মাফিয়াদের কারণে আমার ভাই ভূমধ্যসাগরে হারিয়ে গেছে।’

ফাতেমা বলেন, ইমরানকে মাফিয়ারা আটকে রেখে নির্যাতন করছে বলে দাবি করার পর তার পরিবার শিপনকে জমি বিক্রি করে ৪২ লাখ টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করেছে। ‘পরে সে আরও চেয়েছিল, কিন্তু আমরা তা দিতে পারিনি। আমরা টাকা দিতে না পারায় মাফিয়ারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে।’

মুন্নার খালা খাদিজা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, আমি ধারদেনা করে শিপনকে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। আমার ভাগ্নের মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা এই দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি এবং মরদেহ ফেরত দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

বায়েজিদের বাবা কুদ্দুস শেখ বলেন, আমার ছেলের এমন মৃত্যু কিভাবে মেনে নেব? দালাল প্রথমে স্বীকার করেনি, পরে লিবিয়া থেকে আমাদের জানানো হয়। এই দালাল এখন লাপাত্তা।

শিপনের চাচী সেতারা বেগম বলেন, ‘শিপন অনেক মানুষকেই নিয়েছে। কিন্তু গুলিতে কেউ মারা গেছে, বা শিপন কাউকে গুলি করে মেরে ফেলেছে, কখনোই শুনিনি। শিপন লিবিয়ায় থাকে। ওর পরিবারের লোকজনও এখন বাড়িতে নেই। ঘরে তালা দেওয়া। আমরা এর বেশি কিছু জানি না।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পুলিশ সদস্যদের পাঠিয়ে জানতে পেরেছি এক দালালের মাধ্যমে ইতালিতে যাওয়ার পথে লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে মাদারীপুরের তিনজনের প্রাণ গেছে। নিহতদের পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

মাফিয়া চক্রের গুলিতে ভূমধ্যসাগরে হারিয়ে গেল মাদারীপুরের তিন তরুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০১:৪৮:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫

ইতালি যাওয়ার স্বপ্নে বাড়ি ছেড়েছিলেন মাদারিপুরের তিন তরুণ। সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় তারা লিবিয়ার একটি মাফিয়া চক্রের হাতে গুলিতে নিহত হয়েছেন। তাদের মরদেহ সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। নিহতরা হলেন, মাদারীপুর সদরের আদিত্যপুর গ্রামের ২২ বছর বয়সী ইমরান খান; রাজৈর উপজেলার দুর্গাবদ্দি গ্রামের ২৪ বছর বয়সী মুন্না তালুকদার; এবং একই উপজেলার ঘোষালকান্দি গ্রামের ২০ বছর বয়সী বায়েজিদ শেখ। পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।

তিনজনই ৮ অক্টোবর বাড়ি ছাড়েন। তাদের আশা ছিল ইতালিতে গেলে উন্নত ভবিষ্যৎ পাবেন। প্রথমে তাদের লিবিয়ায় নেওয়া হয়। পরিবারগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল তারা একটি দালালের মাধ্যমে জানতে পারেন, তিনজনকেই গত ১ নভেম্বর সমুদ্র পারাপারের সময় হত্যা করা হয়েছে।

অভিযোগ, এক দশক ধরে লিবিয়ায় থাকা আদিত্যপুর গ্রামের শিপন খান ওই তিনজনের যাত্রার ব্যবস্থা করেছিলেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, তিনি মাদারীপুর এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে তরুণদের অবৈধভাবে ইতালিতে পাঠানোর জন্য পরিচিত। গত এক বছরেই তিনি আদিত্যপুর থেকে ৫০ জনেরও বেশি তরুণকে লিবিয়া হয়ে সেদেশে পাঠিয়েছেন।

এক্ষেত্রে তার ভাই সেলিম তাকে সহায়তা করেছেন বলে জানা গেছে। ইমরানের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর দুই ভাইয়ের পরিবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানান।

ইমরানের বড় বোন ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘একদিন আমার ভাই আমাকে বলল, শিপন দালালকে ২০ লাখ টাকা দিলে ইতালিতে নিয়ে যাবে। আমার ভাইয়ের বেশ কয়েকজন বন্ধুও যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। সে তাদের সঙ্গে যেতে চেয়েছিল।

তিনি জানান, তিনি শিপনকে বলেন তার ভাইকে যেন সরাসরি ইতালিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ‘আজ স্থানীয় মাফিয়াদের কারণে আমার ভাই ভূমধ্যসাগরে হারিয়ে গেছে।’

ফাতেমা বলেন, ইমরানকে মাফিয়ারা আটকে রেখে নির্যাতন করছে বলে দাবি করার পর তার পরিবার শিপনকে জমি বিক্রি করে ৪২ লাখ টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করেছে। ‘পরে সে আরও চেয়েছিল, কিন্তু আমরা তা দিতে পারিনি। আমরা টাকা দিতে না পারায় মাফিয়ারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে।’

মুন্নার খালা খাদিজা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, আমি ধারদেনা করে শিপনকে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। আমার ভাগ্নের মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা এই দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি এবং মরদেহ ফেরত দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

বায়েজিদের বাবা কুদ্দুস শেখ বলেন, আমার ছেলের এমন মৃত্যু কিভাবে মেনে নেব? দালাল প্রথমে স্বীকার করেনি, পরে লিবিয়া থেকে আমাদের জানানো হয়। এই দালাল এখন লাপাত্তা।

শিপনের চাচী সেতারা বেগম বলেন, ‘শিপন অনেক মানুষকেই নিয়েছে। কিন্তু গুলিতে কেউ মারা গেছে, বা শিপন কাউকে গুলি করে মেরে ফেলেছে, কখনোই শুনিনি। শিপন লিবিয়ায় থাকে। ওর পরিবারের লোকজনও এখন বাড়িতে নেই। ঘরে তালা দেওয়া। আমরা এর বেশি কিছু জানি না।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পুলিশ সদস্যদের পাঠিয়ে জানতে পেরেছি এক দালালের মাধ্যমে ইতালিতে যাওয়ার পথে লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে মাদারীপুরের তিনজনের প্রাণ গেছে। নিহতদের পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।