ঢাকা ০১:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
রূপগঞ্জ

ভূমিকম্পে নিহত শিশু ফাতেমাকে বাবা-মা ছাড়াই দাফন

 নাজমুল মিয়া, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৬:২৩:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৪৭ Time View
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া ইসলামবাগ ৫নম্বর ক্যানেল এলাকায় ভূমিকম্পে বাড়ির সীমানা প্রাচীর ধসে নিহত ফাতেমা খাতুনকে বাবা-মা ছাড়াই বাড়ির পাশের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। দাফনের খরচ হিসেবে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম ২২হাজার টাকা প্রদান করেছেন।
দশ মাস বয়সের শিশু ফাতেমা খাতুনের পিতা আব্দুল হক জানাযার নামাজে অংশ নিতে পারেনি। মেয়েকে চির বিদায় জানাতে পারেননি মা কুলসুমও। ফাতেমার সঙ্গে তার মা কুলসুম বেগম দেয়াল চাপায় গুরুতর আহত হয়। মা কুলসুমকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে দৌঁড়াচ্ছেন পিতা আব্দুল হক। যে কারণে মেয়ের জানাজা ও দাফনে অংশ নিতে পারেনি তিনি। মা কুলসুম বেগম জানেননা তার শিশু ফাতেমা খাতুন বেঁচে নেই। ঘটনার সময় ফাতেমা খাতুনের বোন নুসাইবা জান্নাত নানা বাড়িতে ছিলেন। পিতা আব্দুল হক পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে কাঁচামালের ব্যবসা করেন।
জানা গেছে, দুই সন্তানকে নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল আব্দুল হক ও কুলসুম বেগম দম্পতির। কিন্তু শুক্রবারের ভূমিকম্পে মুহূর্তেই ওলট-পালট হয়ে যায় তাদের সংসার।

এদিন সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে ভূমিকম্পে বাড়ির পাশের একটি উঁচু দেয়াল ধসে মারা যায় এ দম্পতির ১০ মাসের মেয়ে ফাতেমা। গুরুতর আহত হন কুলসুম। ঘটনার সময় পাশে নানাবাড়িতে ছিল আরেক মেয়ে দুই বছরের নুসাইবা জান্নাত। এ কারণে তার কিছু হয়নি।

আব্দুল হক পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে ব্যবসা করেন। আহত স্ত্রীকে ঢাকায় আনা হলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন তিনি।

প্রতিবেশী ইমতিয়াজ ভুঁইয়া রনি বলেন, ভূমিকম্পের সময় ফাতেমা মায়ের কোলে ছিল। ভুলতা গাউছিয়া মার্কেটে যাওয়ার পথে প্রতিবেশিদের বাড়ির সীমানা প্রাচীর ধসে পড়া অংশ সরিয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সেসময় মা কুলসুম বেগম অজ্ঞান ছিলেন। দুর্ঘটনায় আহত তাদের প্রতিবেশী জেসমিন আক্তারকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, গত শুক্রবার রাতে বাবা-মাকে ছাড়াই বাড়ির পাশে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে ফাতেমাকে দাফন করা হয়।

ফাতেমার খালু মোহাম্মদ হোসেন জানান, প্রথমে কুলসুমকে রূপগঞ্জের ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর শয্যা না থাকায় সেখানে ভর্তি নেওয়া হয়নি। পরে তাকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেও ভর্তি নেওয়া হয়নি।

মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমরা গরিব মানুষ, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার ক্ষমতা নাই। চিকিৎসকের পরামর্শে এখন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় আছি।

নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু নিহত শিশু ফাতেমার বাড়িতে গিয়ে শোকাহত পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দেন।

এদিকে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে পরিষদের এই গ্রামটিতে বহুতল ভবন নেই। অধিকাংশই একতলা বা দুইতলা, যা নিয়ম ও নকশা মেনে নির্মাণ করা হয়নি। যে দেয়ালটি ধসে পড়েছে সেটির কোনো পিলার ছিল না।

তিনি আরও বলেন, প্রাচীরটি অন্তত ১০ ফুট উঁচু ছিল। কিন্তু রডের কোনো কাজ সেখানে নেই। এমনকি উঁচু দেয়ালের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোনো পিলারও ছিল না। ইউপি এলাকাগুলোতে অনেকে নিয়ম-কানুন মেনে বাড়ি নির্মাণ করেন না। সেখানে তদারকিরও কিছু ঘাটতি আছে। আমরা আগামীকাল মাইকিং করে দেবো। গ্রাম পুলিশকে এ ধরনের অস্বাভাবিক রকম উঁচু দেয়াল বা অবৈধ স্থাপনা সম্পর্কে তদারকি করার জন্য। ঝুঁকিপূর্ণ দেয়ালগুলো আমরা ভেঙে দেবো।

তিনি আরও বলেন, নিহতের পরিবারকে দাফনের জন্য উপজেলা প্রশাসন ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্যও সহযোগিতা করা হবে।

আহত কুলসুমকে এখনো হাসপাতালে ভর্তি করতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও সাইফুল বলেন, স্বজনরা জানিয়েছিলেন, তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু তারা যে শয্যা পাচ্ছেন না বা কোথাও এখনো ভর্তি হতে পারেনি, এটা জানা ছিল না। হয়তো তথ্যের ঘাটতি হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

Please Share This Post in Your Social Media

রূপগঞ্জ

ভূমিকম্পে নিহত শিশু ফাতেমাকে বাবা-মা ছাড়াই দাফন

 নাজমুল মিয়া, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
Update Time : ০৬:২৩:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া ইসলামবাগ ৫নম্বর ক্যানেল এলাকায় ভূমিকম্পে বাড়ির সীমানা প্রাচীর ধসে নিহত ফাতেমা খাতুনকে বাবা-মা ছাড়াই বাড়ির পাশের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। দাফনের খরচ হিসেবে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম ২২হাজার টাকা প্রদান করেছেন।
দশ মাস বয়সের শিশু ফাতেমা খাতুনের পিতা আব্দুল হক জানাযার নামাজে অংশ নিতে পারেনি। মেয়েকে চির বিদায় জানাতে পারেননি মা কুলসুমও। ফাতেমার সঙ্গে তার মা কুলসুম বেগম দেয়াল চাপায় গুরুতর আহত হয়। মা কুলসুমকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে দৌঁড়াচ্ছেন পিতা আব্দুল হক। যে কারণে মেয়ের জানাজা ও দাফনে অংশ নিতে পারেনি তিনি। মা কুলসুম বেগম জানেননা তার শিশু ফাতেমা খাতুন বেঁচে নেই। ঘটনার সময় ফাতেমা খাতুনের বোন নুসাইবা জান্নাত নানা বাড়িতে ছিলেন। পিতা আব্দুল হক পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে কাঁচামালের ব্যবসা করেন।
জানা গেছে, দুই সন্তানকে নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল আব্দুল হক ও কুলসুম বেগম দম্পতির। কিন্তু শুক্রবারের ভূমিকম্পে মুহূর্তেই ওলট-পালট হয়ে যায় তাদের সংসার।

এদিন সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে ভূমিকম্পে বাড়ির পাশের একটি উঁচু দেয়াল ধসে মারা যায় এ দম্পতির ১০ মাসের মেয়ে ফাতেমা। গুরুতর আহত হন কুলসুম। ঘটনার সময় পাশে নানাবাড়িতে ছিল আরেক মেয়ে দুই বছরের নুসাইবা জান্নাত। এ কারণে তার কিছু হয়নি।

আব্দুল হক পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে ব্যবসা করেন। আহত স্ত্রীকে ঢাকায় আনা হলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন তিনি।

প্রতিবেশী ইমতিয়াজ ভুঁইয়া রনি বলেন, ভূমিকম্পের সময় ফাতেমা মায়ের কোলে ছিল। ভুলতা গাউছিয়া মার্কেটে যাওয়ার পথে প্রতিবেশিদের বাড়ির সীমানা প্রাচীর ধসে পড়া অংশ সরিয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সেসময় মা কুলসুম বেগম অজ্ঞান ছিলেন। দুর্ঘটনায় আহত তাদের প্রতিবেশী জেসমিন আক্তারকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, গত শুক্রবার রাতে বাবা-মাকে ছাড়াই বাড়ির পাশে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে ফাতেমাকে দাফন করা হয়।

ফাতেমার খালু মোহাম্মদ হোসেন জানান, প্রথমে কুলসুমকে রূপগঞ্জের ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর শয্যা না থাকায় সেখানে ভর্তি নেওয়া হয়নি। পরে তাকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেও ভর্তি নেওয়া হয়নি।

মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমরা গরিব মানুষ, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার ক্ষমতা নাই। চিকিৎসকের পরামর্শে এখন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় আছি।

নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু নিহত শিশু ফাতেমার বাড়িতে গিয়ে শোকাহত পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দেন।

এদিকে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে পরিষদের এই গ্রামটিতে বহুতল ভবন নেই। অধিকাংশই একতলা বা দুইতলা, যা নিয়ম ও নকশা মেনে নির্মাণ করা হয়নি। যে দেয়ালটি ধসে পড়েছে সেটির কোনো পিলার ছিল না।

তিনি আরও বলেন, প্রাচীরটি অন্তত ১০ ফুট উঁচু ছিল। কিন্তু রডের কোনো কাজ সেখানে নেই। এমনকি উঁচু দেয়ালের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোনো পিলারও ছিল না। ইউপি এলাকাগুলোতে অনেকে নিয়ম-কানুন মেনে বাড়ি নির্মাণ করেন না। সেখানে তদারকিরও কিছু ঘাটতি আছে। আমরা আগামীকাল মাইকিং করে দেবো। গ্রাম পুলিশকে এ ধরনের অস্বাভাবিক রকম উঁচু দেয়াল বা অবৈধ স্থাপনা সম্পর্কে তদারকি করার জন্য। ঝুঁকিপূর্ণ দেয়ালগুলো আমরা ভেঙে দেবো।

তিনি আরও বলেন, নিহতের পরিবারকে দাফনের জন্য উপজেলা প্রশাসন ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্যও সহযোগিতা করা হবে।

আহত কুলসুমকে এখনো হাসপাতালে ভর্তি করতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও সাইফুল বলেন, স্বজনরা জানিয়েছিলেন, তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু তারা যে শয্যা পাচ্ছেন না বা কোথাও এখনো ভর্তি হতে পারেনি, এটা জানা ছিল না। হয়তো তথ্যের ঘাটতি হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি।