বিচার বিভাগে নারীর অংশগ্রহণ ন্যায়বিচারের গুণগত উৎকর্ষ ও জনআস্থার প্রতীক: প্রধান বিচারপতি

- Update Time : ০৩:৫৪:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
- / ৪৩৩ Time View

থাইল্যান্ডে এশিয়ার নারী বিচারকদের আঞ্চলিক সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ
থাইল্যান্ডে সফররত প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘বিচার বিভাগে নারীর অংশগ্রহণ কেবল প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন নয়, বরং এটি ন্যায়বিচারের গুণগত উৎকর্ষ ও জনআস্থার বিশেষ প্রতীক। নারী বিচারকরা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও পারিবারিক বিরোধের মতো সংবেদনশীল মামলায় মানবিক অন্তর্দৃষ্টি ও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচারপ্রক্রিয়াকে সমৃদ্ধ করে থাকেন।’ বৃহস্পতিবার ব্যাংককে এশিয়ার নারী বিচারকদের আঞ্চলিক সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ইউএনডিপি আয়োজিত এ সম্মেলনে তিনি বিচার বিভাগের নেতৃত্বে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার বিষয়গুলো তুলে ধরেন। সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘নারী বিচারকরা ক্ষমতার ভারসাম্য ও মর্যাদার সূক্ষ্ম দিকগুলো অনুধাবন করতে বেশি সক্ষম, যা বিচার ব্যবস্থাকে আরও ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলে। বিচার কর্ম বিভাগে সত্যিকারের সমতা শুধু নিয়োগের মাধ্যমে আসে না, বরং এটি একটি রূপান্তরের প্রক্রিয়া।’ এ লক্ষ্যে স্বচ্ছ নিয়োগপ্রক্রিয়া, নারীবান্ধব পেশাগত পরিবেশ ও মেন্টরশিপ নেটওয়ার্কের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে এশিয়ার বিচার বিভাগগুলোতে সমৃদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের জেলা আদালতগুলোতে ৬২৫ জন নারী বিচারক কর্মরত থাকলেও উচ্চ আদালতে তাঁদের সংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে ১১৭ জন বিচারকের মধ্যে মাত্র ১২ জন নারী বিচারক রয়েছেন। এখনও বাংলাদেশে কোনো নারী প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হননি। এছাড়া, বাংলাদেশে আইন পেশায় নারীর সংখ্যা ১২ শতাংশেরও কম, যা পেশাগত অগ্রগতিতে নারীর সীমিত অংশগ্রহণের ইঙ্গিত বহন করে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে ২৫ জনের মধ্যে মাত্র তিনজন নারী বিচারক নিযুক্ত হওয়া প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশে নারীবান্ধব বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় এখনও কিছু কাঠামোগত ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে তিনি নারীদের জন্য পেশাগত প্রস্তুতি, কার্যকর দিকনির্দেশনা ও নীতিগত সহায়তা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত হলে আইনি চিন্তাভাবনা আরও গভীর ও মানবিক হবে। বিচার বিভাগে নারী নেতৃত্ব আইনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে পারিবারিক, শ্রম, সম্পত্তি ও পরিবেশ সংক্রান্ত মামলায় অধিক ন্যায়সঙ্গত ফলাফল নিশ্চিত করা সক্ষম। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী ও দাতাগোষ্ঠীর ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, নারীর বিচারিক নেতৃত্ব বিকাশে তাদের ভূমিকা নিছক সহায়তা নয়, বরং এটি এক প্রকারের অংশীদারিত্ব। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইএনডিপি) প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইএনডিপি সুপ্রিম কোর্ট, সরকার ও সিভিল সোসাইটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে বিচার বিভাগের সক্ষমতা ও জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি, তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির অবদানকেও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
প্রধান বিচারপতি তাঁর বক্তৃতায় নারী বিচারকদের মেন্টরশিপ, প্রশিক্ষণ ও নেতৃত্ব বিকাশে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য আইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বার অ্যাসোসিয়েশন ও বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি মন্তব্য করেন, ন্যায়বিচার তখনই পূর্ণতা পায়, যখন বিচার বিভাগে সমাজের সকল স্তর ও লিঙ্গের প্রতিনিধিত্ব সুষমভাবে প্রতিফলিত হয়।

এর আগে বুধবার ব্যাংককে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে থাইল্যান্ডের বিচারমন্ত্রী রুত্তাফন নাওয়ারাতের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। এছাড়া একই দিন তাঁর সঙ্গে ইএনডিপির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক ক্রিস্টোফ বাহুয়েট এবং নেপালের ডেপুটি প্রধান বিচারপতি স্বপ্না প্রধান মাল্লা’র পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হন।
উল্লেখ্য, এশিয়ায় নারী বিচারকদের বিচার বিভাগীয় নেতৃত্ব বিষয়ক ‘পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত- টেকসই উন্নয়নের জন্য লিঙ্গভিত্তিক অগ্রগতি’ শীর্ষক ইউএনডিপি আয়োজিত একটি কনফারেন্সে যোগ দিতে প্রধান বিচারপতি ব্যাংককে অবস্থান করছেন। ১৮ অক্টোবর তিনি দেশে ফিরবেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়