বিএনপি নেতা বাচ্চুর বিরুদ্ধে আ.লীগকে শেল্টার দেওয়ার অভিযোগ, ব্যবহৃত লাল গাড়ি ভাইরাল

- Update Time : ১০:১৪:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
- / ১১ Time View
গাজীপুরের শ্রীপুরে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি লাল গাড়ি নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা ডাঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু। একাধিক আওয়ামীলীগ নেতাকে শেল্টার দেয়ার অভিযোগ ও আওয়ামীলীগের মন্ত্রী এনামূর রহমানকে বিএনপির লোক বলে দাবী করে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ডাঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু এসব কথা বলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি শ্রীপুরে এক আওয়ামীলীগ নেতা কর্তৃক বিএনপি নেতা বাচ্চুকে একটি লাল গাড়ি উপহার দেয়া ও একাধিক আওয়ামীলীগ নেতার সাথে বাচ্চুর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা এখন তুঙ্গে। গাড়ি উপহার দেয়া আওয়ামীলীগ নেতা বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলার আসামী হয়ে এখন পলাতক।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল পোস্টে দুটি ছবির মাঝে একটি লাল গাড়ির ছবি। ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৪-৬৪১৩ নম্বর গাড়িটির উপহার দাতা শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ মো: নাজমূল হুদা। উপহার গ্রহীতা গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ডা: রফিকুল ইসলাম বাচ্চু। সূত্রমতে, নাজমুল হুদাকে নিরাপদে রাখতে বাচ্চু এই গাড়িটি উপহার নিয়েছেন। উপহার পাওয়ার পর ডা: বাচ্চু নাজমুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পত্রে প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশাল মঞ্চ আর ঢাকঢোল পিটিয়ে এই অনুষ্ঠান হয়। এতে নাজমুল হুদা প্রকাশ্যে থাকার গ্যারান্টি পেয়ে যান। এই গাড়ি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে সম্প্রতি নাজমুল হুদার নামে একটি বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলা হলে তিনি গা ঢাকা দেন। লাল গাড়ি ও উপহার দাতা-গ্রহীতার ছবিসহ একটি ফটোকোট এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। একই সঙ্গে বিভিন্ন আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে বিএনপি নেতা ডা: বাচ্চুর একাধিক ছবিও ভাইরাল হচ্ছে। লাল গাড়িটি তার বাড়ির সামনে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাচ্চুকে বহন করতেও দেখা গেছে।
এই বিষয়ে গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ডা: রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, আলোচিত লাল গাড়িটি আমি কিছুদিন ব্যবহার করেছি। গাড়িটি একজন বিএনপি নেতার। আওয়ামীলীগ নেতা নাজমুল হুদাকে আমি চিনিনা বলে জানালেও তিনি নাজমূল হুদার অনুষ্ঠানে যাননি বলে জানান। একসাথে ছবি থাকলেও আওয়ামীলীগ নেতা খোকনকে তিনি চিনেন না বলে জানান। আওয়ামীলীগ নেতা আ: জলিলসহ বহু আওয়ামীলীগ নেতার সাথে বাচ্চুর ছবি থাকলেও তিনি তা অস্বীকার করেন।
আওয়ামীলীগের সাবেক মন্ত্রী এনামূর রহমানের এনাম মেডিকেলে চাকুরী করার কথা স্বীকার করে বাচ্চু বলেন, এনামূর রহমান বিএনপির লোক ছিলেন, এটা জেনে রাখেন। একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ তার।
ভাইরাল গাড়িটির কথিত উপহার দাতা শ্রীপুর পৌর আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ নাজমূল হুদাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এই গাড়িটির মালিক কে তা জানার জন্য ঢাকা ও গাজীপুর বিআরটিএতে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে বিআরটিএ। তবে একটি গোপন সূত্র জানায়, গাড়ির মালিক খায়রুল ইসলাম পিতা: জহুর আলী, ময়মনসিংহ রোড ঢাকা এই টুকু ঠিকানা বিআরটিএ র রেজিস্ট্রারে লেখা আছে। গাড়ির মালিকের হাতবদলের পর বর্তমান মালিক কে তা জানা যায়নি। কিন্তু বিএনপি নেতা বাচ্চু গাড়িটি ব্যবহার করেছেন বলে স্বীকার করায় গাড়িটি তার নিয়ন্ত্রণে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক শ্রীপুরের স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতৃবৃন্ধের মতে, ডা: বাচ্চু তৃনমূল থেকে বিএনপি করেননি। তিনি পেশাজীবী সংগঠনের কেন্দ্রিয় নেতা। আওয়ামীলীগের পুরো সময় তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের ত্রাণমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমানের সাভারস্থ এনাম মেডিকেলে চাকুরী করেছেন। মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করার কারণে বাচ্চু নিরাপদেই ছিলেন। আন্দোলনের শেষ সময়ে ডা: বাচ্চু মাঠে সক্রিয় হন মনোনয়নের জন্য। আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তারও হয়েছেন তিনি। সবশেষ গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক হওয়ার আগে রফিকুল ইসলাম বাচ্চুর গোপন ষড়যন্ত্রের কারণে গাজীপুর জেলা বিএনপির বড় বড় নেতাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হয়।
সূত্রের দাবি, নিজেকে গাজীপুর বিএনপির সবচেয়ে বড় নেতা হতে বড় বড় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন ডা: রফিকুল ইসলাম বাচ্চু। শ্রীপুরে বাচ্চুর সাথে সুবিধাভোগী ও আওয়ামীলীগের দোসরদের অসংখ্য ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।
অভিযোগ রয়েছে, নিজ দলের আর কেউ যেন প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হতে না পারে সেজন্য ডা: বাচ্চু সব ধরণের কাজ করছেন। বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যে সকল বিএনপির নেতা-কর্মী আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে সরাসারি মাঠে কাজ করেছেন, যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছেন তাদের নিয়ে একাধিক অনুষ্ঠানে কম্বলও বিতরণ করেছেন বাচ্চু। বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলসহ বিএনপির প্রতিষ্ঠিাকালীন সময়ের যে সকল নেতা-কর্মী রয়েছেন তাদের অনেকের সাথেই কোন যোগাযোগ নেই তার। আগামী সংসদ নির্বাচনে আর কেউ যেন ধানের শীষ চাইতে না পারে সেজন্য বাচ্চু এখন মরিয়া। অভিযোগ আছে, শ্রীপুরে প্রায় শতাধিক শিল্পকারখানায় নিজস্ব লোক ও সুবিধাভোগী কিছু নেতাকর্মীদের দিয়ে দিয়ে ঝুট ব্যবসা করাচ্ছেন বিএনপির এই নেতা।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়