বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষে ভারতে গিয়েই সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার তরুণী

- Update Time : ১১:৩২:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪
- / ২৪১ Time View
মাস দেড়েক আগে বিশ্ব দেখতে দুটি মোটরসাইকেলে চেপে বেরিয়ে পড়েন এক দম্পতি। ইতোমধ্যে ৬৩টি দেশের ১ লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়িও দিয়েছিলেন তারা। দক্ষিণ এশিয়া পর্বে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ হয়ে তারা ঢুকেছিলেন ভারতে। এরপর ভারতের ঝাড়খন্ড ও বিহার হয়ে তাদের যাওয়ার কথা ছিল নেপালে। কিন্তু তার আগেই মসৃণ এই যাত্রায় পড়লো ছেদ। গত শনিবার মধ্যরাতে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যে করুণ ও চরম মাশুল দিতে হয়েছে ২৮ বছর বয়সী তরুণী, আর তার ৬৪ বছর বয়সী স্বামী স্প্যানিশ দম্পতিকে।
ঝাড়খন্ডের দুমকা নামক এক নির্জন এলাকায় সাত দুষ্কৃতকারী মিলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে ওই তরুণীকে। এ সময় তার স্বামীও হামলার শিকার হন, দুর্বৃত্তরা তাকেও প্রচণ্ড মারধর করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের পেজের নাম ছিল ‘ভুয়েলতা আল মুনডো এন মোটো’ মানে মোটরসাইকেলে চেপে বিশ্ব পরিক্রমা। ইনস্টাগ্রামে আড়াই লাখেরও বেশি ফলোয়ার ছিল তাদের। অন্যান্য প্ল্যাটফর্মেও তা-ই। সেখান থেকে জানা যায় তাদের ভ্রমণের চিত্র।
ঝাড়খন্ড রাজ্যের পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার মাত্র দেড় দিন আগে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার হিলি সীমান্ত দিয়ে ওই দম্পতি ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে (এমনকি এর আগে যখন তারা ভারতে এসেছিলেন, তখন ভারতেও) তাদের অভিজ্ঞতা ছিল দুর্দান্ত, কিন্তু ঝাড়খন্ডে এসেই তাদের চরম দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হতে হলো।
ওই দম্পতি কোনও হোটেল বা মোটেলে নয়, রাতযাপন করছিলেন ক্যাম্পিং টেন্ট (তাঁবু) খাটিয়ে। এর জন্য তারা বেছে নিয়েছিলেন দুমকা জেলার কুরুমাহাট নামে একটি টিলা দিয়ে ঘেরা নির্জন এলাকা, যা রাজ্যের রাজধানী রাঁচি থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে। ইউরোপ-আমেরিকায় যারা ট্রেকিং বা হাইকিং করেন, তাদের জন্য এভাবে খোলা আকাশের নিচে ক্যাম্পিং করে থাকা খুব স্বাভাবিক ঘটনা হলেও, ভারতে সব জায়গায় তা মোটেই নিরাপদ নয়। আর সেটা না জেনেই চরম মাশুল দিতে হলো ওই দম্পতিকে।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার মধ্যরাতের পর ওই এলাকার সাত দুষ্কৃতকারী স্প্যানিশ দম্পতির তাঁবুতে হামলা চালায়। পরে ওই তরুণী তার জবানবন্দিতে জানান, হামলাকারী সাত জনই তাকে ধর্ষণ করে এবং শারীরিক আক্রমণ চালিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। তার স্বামীকে মাথায় পাথর দিয়ে মেরে অচেতন করে দেওয়া হয়।
ভোরবেলার দিকে তাদের জ্ঞান ফিরলে তারা কোনোক্রমে ইমার্জেন্সি নম্বরে ডায়াল করলে দুমকা জেলার হাঁসডিহা থানার পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। মেডিক্যাল পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য তাদের দুজনকেই আপাতত দুমকা জেলা সদরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। নেপালের উদ্দেশ তাদের বাইকযাত্রাও আপাতত স্থগিত।
ঝাড়খন্ডে তাদের কী চরম নির্যাতন চালানো হয়েছে, তার বিবরণ দিয়ে ওই দম্পতি নিজেদের ইনস্টা হ্যান্ডলে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। কিন্তু এতে ‘তদন্ত ব্যাহত হতে পারে’ বলে পুলিশ জানানোর পর পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধে তারা ওই ভিডিওটি সরিয়ে নিয়েছেন।
পুলিশ এরই মধ্যে গোটা এলাকায় দোষীদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন তিন অভিযুক্তকে আটকও করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে দুমকার ওই ঘটনা নিয়ে ভারতজুড়ে তীব্র ধিক্কার পড়ে গেছে। ভারত যখন নিজেকে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরার প্রবল চেষ্টা করছে, কিন্তু বিদেশিরা যে ভারতের সব জায়গায় এখনও নিরাপদ নন, এই ঘটনায় তা আবারও সামনে এসেছে।
ভারতের জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যরাও তড়িঘড়ি করে দুমকায় ছুটে গেছেন। কমিশনের চেয়ারপারসন রেখা শর্মা এদিন (সোমবার) সকালে দুমকায় ওই নির্যাতিতা বিদেশি তরুণীর সঙ্গে দেখা করে একান্তে কথা বলেছেন বলেও বাংলা ট্রিবিউন জানতে পেরেছে।
ভুক্তভোগী বিদেশি তরুণী (যৌন নির্যাতনের কারণে নাম গোপন রাখা হয়েছে) একজন দ্বৈত নাগরিক বলেও জানা যাচ্ছে। তার কাছে ব্রাজিল ও স্পেন দুটি দেশেরই পাসপোর্ট ছিল। ফলে দিল্লিতে অবস্থিত ব্রাজিল ও স্পেনের দূতাবাস এই ঘটনার ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে।
দিল্লিতে অবস্থিত ব্রাজিল দূতাবাস বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা এই চরম দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার সব ‘ডেভেলপমেন্টস’ মনিটেরিং করছে। এ ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় রেখে অগ্রসর হচ্ছে।
দিল্লির স্পেন দূতাবাস সবাইকে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে লিখেছে, ‘পৃথিবীর সর্বত্র নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার অবসান ঘটানোর অঙ্গীকারে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়