ঢাকা ০১:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এনসিপি নেতা সারজিসের সভাস্থলের পাশে ককটেল বিস্ফােরণ

বগুড়া প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৭:১৫:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • / ২৫ Time View

বগুড়ায় এনসিপির নেতা সারজিস আলমের অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে ককটেল বিস্ফোরণ

বগুড়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের উপস্থিতিতে দলের সমন্বয় সভাস্থলের পাশে ককটেল হামলা হয়েছে। আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বগুড়া জেলা পরিষদ মিলনায়তনের বাইরে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ বলছে, হামলাকারীরা পরপর দুটি ককটেল ছোড়ে। এর মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়। অবশ্য এনসিপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, হামলাকারীরা তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করে। যার মধ্যে দুটি বিস্ফোরিত হয়।

এনসিপি বগুড়া জেলা কমিটির সমন্বয়কারী দলের সদস্য শওকত ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সমন্বয় সভায় এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বক্তব্য দেওয়ার আগ মুহূর্তে বাইরে পরপর তিনটি ককটেল হামলা করা হয়। এর মধ্যে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। সমন্বয় সভা ভন্ডুল করতেই এই ককটেল হামলা হয়েছে। এ হামলার জন্য তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসরদের দায়ী করেন।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান বাসির একটি ককটেল বিস্ফোরণের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এনসিপির সভা চলাকালে করতোয়া নদীর দিক থেকে দুটি ককটেল ছুড়ে মারা হয়। এর মধ্যে অবিস্ফোরিত একটি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ককটেল হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে ককটেল বিস্ফোরণের পর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়সংলগ্ন জেলা পরিষদ মিলনায়তনের বাইরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নেন। এরপর মিলনায়তনের ভেতরে সারজিস আলমের উপস্থিতিতে সমন্বয় সভার কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে শুরু হয়।

সমন্বয়সভা শেষে মিলনায়তন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সারজিস আলম বলেন, ‘যারা গোটা দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করছে সেই ফ্যাসিস্ট এবং তাদের দোসরদের আস্ফালন দেখতে পাচ্ছি। মিলনায়তনে ভেতরে সাংগঠনিক সভা চলাকালে বাইরে এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যারা দায়িত্বে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তাদের এজেন্সিগুলো যতটা সক্রিয় থাকার কথা, তারা সক্রিয় থাকছে না। তাদের কাছে এ রকম ভূমিকা আশা করি না।’

সারজিস আলম বলেন, ‘বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে আমরা কোনো স্বাভাবিক বিষয় মনে করি না। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কঠোর নির্দেশনা দিতে হবে। যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নিতে হবে। এই আস্ফালন বন্ধ করতে হবে। না হলে ব্যর্থতার দায় সরকারকেও নিতে হবে।’

পুলিশকে সতর্ক করে সারজিস বলেন, ‘কোনো দলের প্রশাসন হয়ে উঠবেন না। জনগণের প্রশাসন হয়ে উঠুন। ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে আরেকটি ঘটনা ঘটলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে চক্রান্তকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কঠোর হোন। কোনো বিশেষ দলকে সুবিধা দিলে এর দায়ভার পুলিশকেই নিতে হবে।’

এর আগে বেলা তিনটার দিকে বগুড়ার ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে এনসিপির অস্থায়ী জেলা কার্যালয় উদ্বোধন করেন দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। উদ্বোধনের আগে কার্যালয় চত্বরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের কারণে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর এনসিপির আস্থা নেই বলে জানিয়েছেন দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

সারজিস আলম বলেন, আগামী নির্বাচন কখন, কীভাবে, কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সেটা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের মানুষ। যদি জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়া হয়, বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়, বিচারিক প্রক্রিয়াগুলো সুষ্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয় এবং চলতে থাকে, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করে সংস্কার এবং জুলাই সনদের বাস্তবায়ন সমান্তরালভাবে এগিয়ে নিতে পারে, তবেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সম্ভব।

দেশে এখনো এককভাবে কোনো রাজনৈতিক দল শক্তিশালী না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আপাত দৃষ্টিতে যা দেখা যায়, আর মাঠের বাস্তবতায় পার্থক্য আছে। আগামীতে আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিষ্টমুক্ত আধিপত্যবাদের বিপক্ষে বাংলাদেশে বিএনপি এবং জামায়াত কেউ এককভাবে নেতৃত্ব দিতে পারবে না। এনসিপিকে রাজপথে যেমন লাগবে, সংসদেও প্রয়োজন।’

Please Share This Post in Your Social Media

এনসিপি নেতা সারজিসের সভাস্থলের পাশে ককটেল বিস্ফােরণ

বগুড়া প্রতিনিধি
Update Time : ০৭:১৫:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

বগুড়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের উপস্থিতিতে দলের সমন্বয় সভাস্থলের পাশে ককটেল হামলা হয়েছে। আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বগুড়া জেলা পরিষদ মিলনায়তনের বাইরে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ বলছে, হামলাকারীরা পরপর দুটি ককটেল ছোড়ে। এর মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়। অবশ্য এনসিপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, হামলাকারীরা তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করে। যার মধ্যে দুটি বিস্ফোরিত হয়।

এনসিপি বগুড়া জেলা কমিটির সমন্বয়কারী দলের সদস্য শওকত ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সমন্বয় সভায় এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বক্তব্য দেওয়ার আগ মুহূর্তে বাইরে পরপর তিনটি ককটেল হামলা করা হয়। এর মধ্যে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। সমন্বয় সভা ভন্ডুল করতেই এই ককটেল হামলা হয়েছে। এ হামলার জন্য তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসরদের দায়ী করেন।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান বাসির একটি ককটেল বিস্ফোরণের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এনসিপির সভা চলাকালে করতোয়া নদীর দিক থেকে দুটি ককটেল ছুড়ে মারা হয়। এর মধ্যে অবিস্ফোরিত একটি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ককটেল হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে ককটেল বিস্ফোরণের পর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়সংলগ্ন জেলা পরিষদ মিলনায়তনের বাইরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নেন। এরপর মিলনায়তনের ভেতরে সারজিস আলমের উপস্থিতিতে সমন্বয় সভার কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে শুরু হয়।

সমন্বয়সভা শেষে মিলনায়তন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সারজিস আলম বলেন, ‘যারা গোটা দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করছে সেই ফ্যাসিস্ট এবং তাদের দোসরদের আস্ফালন দেখতে পাচ্ছি। মিলনায়তনে ভেতরে সাংগঠনিক সভা চলাকালে বাইরে এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যারা দায়িত্বে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তাদের এজেন্সিগুলো যতটা সক্রিয় থাকার কথা, তারা সক্রিয় থাকছে না। তাদের কাছে এ রকম ভূমিকা আশা করি না।’

সারজিস আলম বলেন, ‘বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে আমরা কোনো স্বাভাবিক বিষয় মনে করি না। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কঠোর নির্দেশনা দিতে হবে। যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নিতে হবে। এই আস্ফালন বন্ধ করতে হবে। না হলে ব্যর্থতার দায় সরকারকেও নিতে হবে।’

পুলিশকে সতর্ক করে সারজিস বলেন, ‘কোনো দলের প্রশাসন হয়ে উঠবেন না। জনগণের প্রশাসন হয়ে উঠুন। ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে আরেকটি ঘটনা ঘটলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে চক্রান্তকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কঠোর হোন। কোনো বিশেষ দলকে সুবিধা দিলে এর দায়ভার পুলিশকেই নিতে হবে।’

এর আগে বেলা তিনটার দিকে বগুড়ার ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে এনসিপির অস্থায়ী জেলা কার্যালয় উদ্বোধন করেন দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। উদ্বোধনের আগে কার্যালয় চত্বরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের কারণে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর এনসিপির আস্থা নেই বলে জানিয়েছেন দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

সারজিস আলম বলেন, আগামী নির্বাচন কখন, কীভাবে, কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সেটা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের মানুষ। যদি জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়া হয়, বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়, বিচারিক প্রক্রিয়াগুলো সুষ্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয় এবং চলতে থাকে, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করে সংস্কার এবং জুলাই সনদের বাস্তবায়ন সমান্তরালভাবে এগিয়ে নিতে পারে, তবেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সম্ভব।

দেশে এখনো এককভাবে কোনো রাজনৈতিক দল শক্তিশালী না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আপাত দৃষ্টিতে যা দেখা যায়, আর মাঠের বাস্তবতায় পার্থক্য আছে। আগামীতে আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিষ্টমুক্ত আধিপত্যবাদের বিপক্ষে বাংলাদেশে বিএনপি এবং জামায়াত কেউ এককভাবে নেতৃত্ব দিতে পারবে না। এনসিপিকে রাজপথে যেমন লাগবে, সংসদেও প্রয়োজন।’