পাকিস্তান সেনা-তালেবানের মধ্যে গোলাগুলি, সীমান্তে উত্তেজনা

- Update Time : ১১:৫৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
- / ৩৪৫ Time View
পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইরান, কাতার ও সৌদি আরব।
পাকিস্তানের সেনাদের বিরুদ্ধে উত্তর সীমান্তের একাধিক পাহাড়ি এলাকায় পাল্টা হামলার কথা স্বীকার করেছে তালেবান সরকার। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খোয়ারিজমি শনিবার রাতে বলেন, আফগান ভূখণ্ডে বারবার পাকিস্তানের সীমানা লঙ্ঘন ও বিমান হামলার জবাবে তালেবান ‘সফল প্রতিশোধমূলক অভিযান’ চালিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি বলেন, অভিযানটি মধ্যরাতে শেষ হয়েছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি তালেবানের এই হামলাকে ‘বিনা উসকানিতে’ চালানো আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর জন্য তাদের অভিযুক্ত করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, পাকিস্তানি বাহিনী ‘প্রতিটি ইটের জবাবে একটি পাথর দিয়ে’ এর জবাব দেবে। এক্সে এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘বেসামরিক জনগণের ওপর আফগান বাহিনীর গুলি চালানো আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লঙ্ঘন। পাকিস্তানের সাহসী বাহিনী দ্রুত ও কার্যকর জবাব দিয়েছে এবং কোনো উসকানিই বরদাশত করা হবে না।’
চলতি সপ্তাহে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পাকিস্তানের বিমান হামলার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তান তালিবান (টিটিপি) পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে এবং কাবুল তাদের আশ্রয় দিচ্ছে। তবে তালেবান সরকার বরাবরই এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
পাকিস্তানের একজন শীর্ষ জেনারেল অভিযোগ করেছেন, আফগানিস্তানকে ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের একটি ঘাঁটি’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত সপ্তাহেও আফগানিস্তানের তালেবান সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাবুলের ‘সার্বভৌম ভূখণ্ড’ লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছিল। তালেবানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার জানায়, পাকিস্তান আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশের একটি বেসামরিক বাজারে বোমা হামলা করেছে। সেখানকার স্থানীয়রা বিবিসিকে জানিয়েছেন, হামলায় বেশ কিছু দোকান ধ্বংস হয়ে গেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, কুনার-কুররাম অঞ্চলে উভয় পক্ষই হালকা অস্ত্র ও কামান ব্যবহার করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য না করলেও, একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, আঙ্গুর আদা, বাজাউর, কুররাম, দির, চিত্রাল এবং বারামচাসহ পাকিস্তান-আফগান সীমান্তের একাধিক স্থানে গোলাগুলি হয়েছে।
কুররাম জেলার জিরো পয়েন্টের কাছে দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে আফগান দিক থেকে ভারী অস্ত্রের গোলাবর্ষণ শুরু হয়। তিনি জানান, সীমান্তের একাধিক স্থান থেকে তীব্র গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। এই উত্তেজনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন আফগান তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এক সপ্তাহের সফরে ভারতে অবস্থান করছেন। এই সফরে কূটনৈতিক অগ্রগতির অংশ হিসেবে, চার বছর আগে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বন্ধ হয়ে যাওয়া কাবুলের দূতাবাস পুনরায় খোলার ঘোষণা দিয়েছে দিল্লি।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি বলেন, ‘আফগান বাহিনীর বেসামরিক জনগণের ওপর গুলি চালানো আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লঙ্ঘন।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি আরও বলেন, ‘আফগানিস্তান আগুন ও রক্তের খেলা খেলছে।’ তিনি আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ভারতের মতো আফগানিস্তানকেও উচিত জবাব দেওয়া হবে, যাতে তারা পাকিস্তানের দিকে বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকানোর সাহস না করে।’ ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি তার দেশের দুই প্রতিবেশীকে ‘সংযম প্রদর্শনের’ আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান হলো, উভয় পক্ষকে অবশ্যই সংযম প্রদর্শন করতে হবে।’
কাতার এই উত্তেজনা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে এবং এর ফলে ‘অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর যে সম্ভাব্য প্রভাব পড়তে পারে’ তা নিয়ে আশঙ্কা জানিয়েছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘উভয় পক্ষকে সংলাপ ও কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দিতে, সংযম প্রদর্শন করতে এবং এমনভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কাজ করতে’ আহ্বান জানিয়েছে।
সৌদি আরবও এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই উত্তেজনা কমাতে এবং এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সৌদি সংযম, উত্তেজনা পরিহার এবং সংলাপ ও প্রজ্ঞার পথে চলার আহ্বান জানাচ্ছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রচারের লক্ষ্যে সমস্ত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার প্রতি সৌদি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তার অবিচল প্রতিশ্রুতি জানাচ্ছে, যা ভ্রাতৃপ্রতিম পাকিস্তানি ও আফগান জনগণের জন্য স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।’