পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা কী আবার শুরু হচ্ছে
- Update Time : ০২:০৪:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
- / ২৪১ Time View
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’–এ এক পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, অন্যান্য দেশ তাদের নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি চালাচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রও সমতার ভিত্তিতে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা শুরু করবে।
ট্রাম্প লিখেছেন, “আমি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি যেন তারা পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা শুরু করে। এগুলো অবিলম্বে শুরু করা হবে।”
তবে হোয়াইট হাউস এখনো স্পষ্ট করেনি যে ট্রাম্পের নির্দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের বাস্তব বিস্ফোরণমূলক পরীক্ষা নাকি শুধুই অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার (যেমন ক্ষেপণাস্ত্র) পরীক্ষা সংক্রান্ত।
১৯৯০-এর দশকের পর থেকে শুধুমাত্র উত্তর কোরিয়াই পারমাণবিক বিস্ফোরণমূলক পরীক্ষা চালিয়েছে, যার সর্বশেষটি হয় ২০১৭ সালে। ফলে, ট্রাম্পের এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের ফেলো জেমি ওয়াং বলেন, “উত্তর কোরিয়া ছাড়া গত কয়েক দশক ধরে কোনো রাষ্ট্রই পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। ট্রাম্পের এই ঘোষণা অন্য দেশগুলোকেও প্রভাবিত করতে পারে।”
তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন এখন এমন এক পর্যায়ে প্রবেশ করছে, যা “সম্ভাব্য অস্ত্র প্রতিযোগিতা”-র সূচনা ঘটাতে পারে।
লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক রুসি-এর সিনিয়র ফেলো দারিয়া দোলঝিকোভা মনে করেন, ট্রাম্পের ঘোষণায় বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
তিনি মন্তব্য করেন, “এই ঘোষণা বিশাল এক বালতির মধ্যে এক ফোঁটা জলের মতো—কিন্তু সেই বালতি এখন উপচে পড়ার পথে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন, আর সম্প্রতি রাশিয়া নতুন পারমাণবিক সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা চালিয়েছে। তাদের দাবি, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন যে চীন দ্রুতই পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারে তাদের সমকক্ষ হয়ে উঠছে। এর ফলে “দ্বিপাক্ষিক নয়, বরং ত্রিমুখী পারমাণবিক হুমকি” তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে
রাশিয়ার কাছে ৫,৪৫৯টি, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৫,১৭৭টি, এবং চীনের কাছে প্রায় ৬০০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।
চীন প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যেন পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তির বাধ্যবাধকতা রক্ষা করে এবং পরীক্ষাবিরতি মেনে চলে।
ওয়াশিংটনের আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন–এর নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল ক্যাম্পবেল ট্রাম্পের ঘোষণাকে “আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার দিক থেকে ঐতিহাসিক ভুল” বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, “যদি যুক্তরাষ্ট্র পরীক্ষা শুরু করে, তবে আমরা রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা দেখতে পাব।”
হ্যান্স ক্রিস্টেনসেন, ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টস–এর পারমাণবিক তথ্য বিভাগের পরিচালক, বলেন, “গত পাঁচ বছরে পারমাণবিক ঝুঁকি দ্রুত বেড়েছে। এই ঘোষণা সাধারণ নাগরিকদের জন্য উদ্বেগজনক।”
যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ ১৯৯২ সালে নেভাডা অঙ্গরাজ্যে ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ওই স্থান পুনরায় পরীক্ষার উপযোগী করতে কমপক্ষে তিন বছর সময় লাগবে।
‘দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশন’-এর রিসার্চ ফেলো রবার্ট পিটার্স মনে করেন, পারমাণবিক পরীক্ষার পেছনে বৈজ্ঞানিক নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই প্রাধান্য পাচ্ছে।
তার ভাষায়, “কখনও কখনও একজন প্রেসিডেন্টের তার শক্তি প্রদর্শনের জন্য এমন পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে। এটি অযৌক্তিক নয়, কিন্তু অত্যন্ত সংবেদনশীল পদক্ষেপ।”
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালায়। একই বছরের আগস্টে দেশটি জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে—যা আজও বিশ্বে একমাত্র পারমাণবিক হামলার উদাহরণ হিসেবে রয়ে গেছে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে পারমাণবিক প্রতিযোগিতার আশঙ্কা জাগিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি যদি বাস্তবে পরিণত হয়, তবে বিশ্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়


































































































