ঢাকা ০২:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
কুবির সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্তরসহ প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে শর্টকোড চালুর সিদ্ধান্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হচ্ছে বাস ট্র্যাকিং সিস্টেম ধর্ষণকারীর মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে গাজীপুরে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল নোয়াখালীতে নামাজ পড়তে গেলে মসজিদের শৌচাগারে শিশুকে বলৎকার বান্দরবানে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় ৪ আসামীর যাবজ্জীবন, ১ লাখ টাকা জরিমানা ধর্ষণ বিরোধী স্লোগানে মুখরিত কুবি ক্যাম্পাস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কসহ ৭ জন কারাগারে মেয়েকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় বাবাকে কুপিয়ে জখম কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহির্বিভাগের টিকিট বাণিজ্য
পরিবেশ উপদেষ্টা

দখলদাররা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন উচ্ছেদ করা হবে

গাজীপুর প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৩:০৭:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৫৬ Time View

গাজীপুরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বনভূমি ও পরিবেশ রক্ষার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বনভূমি দখলদাররা যত প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবান হোক না কেন তাদের উচ্ছেদ করা হবে। ৫ আগস্টের পর গাজীপুরে অবৈধভাবে দখল হওয়া ৯০ একর বনভূমির মধ্যে ১৬ একর উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি বনভূমি উদ্ধারেও অভিযান চালানো হবে।

শনিবার (২৮ আগস্ট) গাজীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বন দখলকারীদের প্রতিরোধ করতে কীভাবে কাজ করতে হয় তা আমরা খুব ভালোভাবেই জানি। আগামী তিন মাসের মধ্যে দখলকারীদের উচ্ছেদ করা হবে। সেজন্য নেওয়া হয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা। জেলা প্রশাসকদের বনের সীমানা নির্ধারণের কাজ দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেটি শেষ হলেই অভিযানও শুরু হবে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, বৃক্ষনিধন ও শিল্পকারখানার দূষণ বন্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে সবদিক পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নবায়নের সময় জনগণের মতামত নিতে হবে।

স্থানীয় পরিবেশ সমস্যা, বনভূমি দখল ও দূষণ নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা মতামত দেন। উপদেষ্টা এসব সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। তিনি পরিবেশ রক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নাগরিকদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

গাজীপুরের তরুণদের নদী ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ে সচেতন করা এবং তাদের সম্মিলিত শক্তি নদী রক্ষায় অনুষ্ঠিত হয়েছে যুব সম্মেলন। পরিবেশবিদ, স্থানীয় প্রশাসন, দায়িত্বরত সরকারি সংস্থা, নদী রক্ষা সংগঠক এবং স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থী ও যুবসমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

গাজীপুরের তরুণদের নদী ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ে সচেতন করা এবং তাদের সম্মিলিত শক্তি নদী রক্ষায় কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য পরিবেশবিদ, স্থানীয় প্রশাসন, দায়িত্বরত সরকারি সংস্থা, নদী রক্ষা সংগঠক এবং স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থী ও যুবসমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত হয় ‘নদী বাঁচাতে যুব সম্মেলন’।

শনিবার সকালে বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, প্রকৃতি ও জীবন ফাইন্ডেশন এবং বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সমন্বয়ে গাজীপুরের পিটিআই অডিটোরিয়ামে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের ইয়ুথ পার্টনার হিসেবে ছিলো সিওয়াইসি।

নদী বাঁচাতে যুব সম্মেলনের প্রধান অতিথি’র বক্তব্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা নদীকে অনেকগুলো কারণে দূষণ করি। তারমধ্য তিনটি বড় কারণে বেশি দূষণ হয়। একটি হচ্ছে শিল্প দূষণ, সিটি কর্পোরেশ-পৌরসভার বর্জ্য ও কারখানার পয়োবর্জ্য। একসঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্লাস্টিক দূষণ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যত যাতায়াত করে তার অর্ধেকের বেশি নদীপথে যাতায়াত করে। এখনো মরে যাওয়া দখল হওয়া নদীগুলো আমাদের যাতায়াতের অন্যতম ভূমিকা পালন করে। আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের কারণে জলবায়ুর মতো ভয়ংকর বিপর্যয়ের মুখে তরুন প্রজন্ম। আগামী প্রজন্ম যাদের জন্য আমরা গাড়ি-বাড়ি করি, টাকা জমাই, তারা আগামী প্রজন্ময় ভয়ংকর সমস্যার সম্মুখীন হবে। পরিবেশের যে বিরূপ প্রভাব সেটির কবলে পড়বে। আগামী প্রজন্মকে যদি একটি দূষণমুক্ত নদী না দিতে পারি তাহলে ওরা পানি পাবে কোথায়, মাছ পাবে কোথায়? মাছ’ই যদি না পায় তাহলে ওরা মাছে ভাতে বাঙালি না হয়ে ফার্মের মুরগি আর ভাতে বাঙালি হবে!

তিনি আরও বলেন, এই প্লাস্টিকগুলো নদীতে পড়ে। ফলে কোন কোন নদীতে তিন থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত প্লাস্টিকের আস্তর পড়ে যায়। যেগুলো আর পরিস্কার করা সম্ভব হয়না। একটি প্লাস্টিকে যে পরিমাণ কেমিক্যাল দেওয়া হয়, কিন্তু রিসাইকেল করার সময় কেউ চিন্তা করে না যে এই কেমিক্যাল গুলো কি হবে। এই প্লাস্টিকগুলো নদীতে গিয়ে ভেঙে ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিক হয়। এই প্লাস্টিকগুলো মাছ খায়। ফলে আমাদের রক্তে ও মায়ের দুধে মিশে যায়। এগুলোকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

পলিথিনের ব্যাগের বিষয়ে বলেন, আমাকে অনেকেই বলে প্লাস্টিকের ব্যাগতো এখনো বন্ধ হয়নি। আমি বলি, আপনি যখন বাজারে যান দোকানদার যখন আপনাকে পলিথিন ব্যাগ দেয় আপনি ওটা নেন৷ আপনি ক্রেতা হিসেবে বলেন এটা নিব না, এটা নিষিদ্ধ ২২ সাল থেকে। আপনার বাবা দাদারা চটের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতেন। আপনি কেন বাসায় থেকে একটি চটের ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছেন না। ক্রেতাদের বলতে হবে আমরা এটি নেবো না। দোকানদার দিতে চাইলেও ক্রেতারা যদি না নেয় তাহলে অনেকটা রোদ হবে। ক্রেতাদের প্লাস্টিক ব্যবহারের প্লাস্টিক ব্যবহারে অভ্যাস হয়ে গেছে। আপনারা দোকানদারদের বলেন এটা শুধু নিষিদ্ধ তাই নয় এটি আমার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর । সরকার এই পলিথিন সরানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে ক্রেতাদেরকেও সচেতন হতে হবে। তরুণ প্রজন্ম হিসেবে আপনি প্লাস্টিকে বর্জন করুন এটি ব্যবহার বন্ধ করে দিন পরিবর্তন চাইলে আগে আমাদের সবাইকে পরিবর্তন হতে হবে।

নদী দখল নিয়ে বলেন, নদীকে একটি সুন্দর প্রাণ ব্যবস্থা হিসেবে দেখতে হবে। আমরা কি নদীর সৃষ্টি করতে পারি? যদি সৃষ্টি করতে না পারি, তাহলে কেন ধ্বংস করি। নদীগুলোকে শিল্প কারখানার ভাগাড়ে ভাগারে পরিণত করার কোন অধিকার কোন শিল্প মালিকদের দেয়া হয়নি। বিশ্বের কোথাও কোন দেশে কোন মালিককে এই অধিকার দেওয়া হয়নি। তার ব্যবসায়িক লাভের জন্য বজ্র নদীতে ফেলার লাইসেন্স দেয়া হয়নি। অনেক কিছুর বিকল্প তৈরি করা যায় কিন্তু নদীর বিকল্প তৈরি করা সম্ভব নয়। প্রকৃতির সাথে কখনো লড়াই করতে নেই প্রকৃতির সাথে লড়াই করে জিততে পেরেছে এরকম কোন ইতিহাস নেই। নদী বাঁচাতে প্রয়োজনে আমরা দু চারটে শিল্প কারখানা বন্ধ করে দিব।

নতুন প্রজন্মদের উদ্দেশ্য বলেন, উন্নয়নটাকে নতুন প্রজন্ম হিসেবে নতুন ভাবে দেখতে হবে। আমাদের বাতাস পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বাতাস। আমাদের নদী গুলো দূষণের মধ্যে অন্যতম। যে উন্নয়ন আপনার বাতাসকে দূষিত করে, আপনার নদীকে মেরে ফেলে , যে উন্নয়ন আপনার কৃষি জমি কেড়ে নেয়, আপনার মায়ের দুধের সাথে মাইক্রগ্রাম মিশে যায়। সে উন্নয়ন আসলে উন্নয়ন নয়। আমাদের দেশে একটু সময় এসেছে উন্নয়নকে নতুনভাবে দেখার। আমরা বড় বড় শপিংমল ফ্লাইওভারকে উন্নয়ন কথা বলেছি। আপনারা তা বলবেন না। আপনাদের উন্নয়নের সংজ্ঞায় দূষণমুক্ত প্রবাহমান নদী থাকবে, আপনাদের উন্নয়নের সংজ্ঞায় বন থাকবে, বন্য পানি থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ৮৮ একর বনভূমি গত ৫ আগস্টের পর বেদখল হয়েছে। এগুলো ফিরিয়ে আনাটা ততটা সহজ ও বাধাহীন নয়। তবে যত বাধা দেওয়াই হোক কোন বাধাই ধোপে টিকবে না! প্রথম দফায় ৮৮ একর বনভূমি অবশ্যই দখলমুক্ত করা হবে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান বলেন, পানি ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব নেই। পানি আমাদের জীবন দেয় কিন্তু সকল পানি আমাদের জীবন দিতে পারে না। নদী আমরা বাচাতে না পারলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। আমরা যেমন দুঃশাসনে ছিলাম, তেমনি নদীগুলোতেও দুঃশাসন চলছে। আমরা অসচেতন ভাবে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে নদী নষ্ট করছি। আমরা বুঝতেই পারছি না আমরা নিজেদের কত ক্ষতি করছি। এই নদী ও পরিবেশ বাচাতে যিনি আগে থেকে কাজ করেছেন তিনি এখন দায়িত্ব পেয়েছেন। আশা করি এখনো আরও ভালো কিছু হবে।

গাজীপুরে দ্রুত আরও শিল্পকারখানা হচ্ছে। আমরা যদি শিল্পের দূষণ রোধ করতে না পারি তাহলে গাজীপুর বাচবে না। নদী দখল হচ্ছে, দূষন হচ্ছে এগুলোকে আমাদের সম্মিলিত প্রতিরোধ করতে হবে। যুব সমাজের কাজে আমরা খুবই আশাবাদী। আমরা নদীগুলোকে বাঁচাতে চাই এজন্য আজকের এই যুব সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করে এর মাধ্যমে যুব সমাজ এগিয়ে আসবে। সবাই মিলে নদীর নাব্যতা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনবে। এজন্য যেকোনো কাজে গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার সবসময় পাশে থাকবে।

ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, নদীগুলো শীরা উপশিরার মতো। শুধু পানির নাম জীবন নয়। নিরাপদ পানির অপর নাম জীবন। পৃথিবী জুড়ে নিরাপদ পানির সংকট, আমাদের দেশে হতে কতক্ষণ। সুতারং আমাদের শপথ নিতে দূষণ রোধে। কোনভাবেই যেনো দূষণ না হয় এজন্য আইন প্রনয়ণ করতে হবে। আমাদের যুব সমাজের স্লোগান হবে নদী বাঁচাও ভবিষ্যত বাঁচাও।

বাংলাদেশ বহুমুখী পাটপন্য উৎপাদনের সভাপতি রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, আমরা যেহেতু উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সেটা নিয়েই কথা বলি। আমাদের পরিবেশ উপদেষ্টা পলিথিন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বিয়েছে। আমরা পাট ও গার্মেন্টেসের ঝুট দিয়ে ব্যাগ তৈরি করি তাহলে সুফল পাব। একাজে যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। এটি সফল হলে পরিবেশের দূষণ রোধ হবে। যুব সমাজ পরিবেশকে কিভাবে সংরক্ষণ করতে পারে এবং উদ্যোগ নিতে পারে সেবিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। একটি সুন্দর এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিলে অনেক তরুণ উদোক্তা তৈরী হবে।

বাংলাদেশ কাটার সাকশন ড্রেজার ওয়াল্ড এসোসিয়েশনের সভাপতি বশির আহমেদ বলেন, পরিবেশ বাচাতে হবে এটা আমরা সবাই জানি। আমাদের দেশের ৫৭ টি নদী দেশের বাহির হতে প্রবাহমান। এটাকে পরিকল্পিত ব্যবহার করতে হবে। এসব নদীর পলি ঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারছি না। ১ কিলোমিটার নদী প্রশস্ত করতে কোটি টাকা খরচ হয়। সে হিসাবে ড্রেজার করলে তুলনামূলক খরচ কম হয়। দেশকে বাচাতে হলে আমাদের সচেতন হতে হবে। আমরা সচেতন না হলে সরকার তেমন কিছু করতে পারবে না। যুব সমাজের কাছে অনুরোধ তোমরা জেগে উঠো না হলে এই বড় বড় অট্টালিকা থাকবে কিন্তু তোমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাস করতে পারবে না।

রিভার এন্ড ডেল্টা রিচার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, নদী রক্ষা ও পরিবেশ রক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতার পাশাপাশি নদীকে মনিটরিং করতে হবে। এই শীত মৌসুমে নদীর নাব্যতা একবারে কমে যায়। ধরনা করা হচ্ছে চিটাগং হতেই বেশি অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ গাজীপুরের অর্থনীতি। কিন্তু এই জেলার দূষণ রোধে তেমন উল্লেখযোগ্য প্রতিরোধ নেই। এই মুহুর্তে হাউজিং প্রকল্পগুলোকেও পরিবেশবান্ধব করতে মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে। এজন্য জেলা প্রশাসক ও সরকারকে পদক্ষেপে নিতে হবে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে ইতিমধ্যে যুব সমাজ কে সাথে নিয়ে এবং ছাত্রদেরকে সাথে নিয়ে এরকম কিছু কাজ ইতিমধ্যে সেরে ফেলেছি। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে যে নদীগুলোর তালিকা করতে বলা হয়েছে। একটি নদী দখল ও দূষণ দূষণ মুক্ত করার যে প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়াতে সাথে গাজীপুর জেলার যুব সমাজ অন্তর্ভুক্ত আছে। গাজীপুরের হাঁসপুকুর গুলো আমরা সরমুক্ত করার জন্য যুব সমাজকে পাশে পেয়েছি এক্ষেত্রে বিডি ক্লিনকে আমাদের কে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। আমাদের প্রশাসনের সাথে তারা একসাথে কাজ করে অনেক সহজ করে দিয়েছে। আমাদের নদী বা বন পরিবেশ দূষণ একটা আরেকটার সাথে ভীষণভাবে নির্ভরশীল। আমাদের যদি নদী বাঁচাতে হয় তাহলে বন’কেও রাখতে হবে, বন’কে টিকিয়ে রাখতে হলে নদীকেও রাখতে হবে। পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদান আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটা সময় আমরা ভাবতাম আমাদের যেন খাদ্যা ভাবটা যেন না হয় ফুট সিকিউরিটি থাকে। আমরা খুব লক্ষ্য করছি যে আমরা হাঁ স নেওয়ার জন্য বাতাস টাই অভাব হয়ে যাচ্ছে। বাতাসের মধ্যে অক্সিজেনের পরিমাণটাও কমে আসছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের এখনই ভাবতে হবে এবং আমাদের এই এখনই কাজ করতে হবে। আমাদের জেলা প্রশাসন থেকে প্রতিনিয়ত পলিথিনের বিষয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। এবং কাউন্সিলিং করছি জনগণকে সচেতন করছি। যে কারখানাগুলো আছে যেখানে উৎপাদন আছে সেখানে যদি কারো কাছে কোন তথ্য থাকে তাহলে আমাদের দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য বলা হয়ে থাকে। আমি জোবাদের ও ছাত্রদের প্রতি আমার আরেকটা অনুরোধ আমরা আপনাদের সমর্থনে কাজ করছি আপনাদের সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই। দেশে যে বিদ্যমান আইন-শৃঙ্খলা, যে রেগুলেশনগুলো আছে সেগুলোর প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল থাকব, শ্রদ্ধাশীল থেকে সেটাকে মেনে নিয়েই আমাদের কাজগুলো করবো।

গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মোঃ যাবের সাদেক বলেন, নদী দখল বা নদী দূষণ পরিবেশ দূষণ এগুলো কেন হয় কিভাবে হয় কারা করে এগুলো আমরা কম বেশি সবাই জানি। আমরা যখন পড়াশোনা করেছি তখন দেখেছি তখন থেকেই দেখছি কারখানাগুলোতে ইটিপি নেই ইটিভি গুলো ঠিক মতো কাজ করে না সেই জিনিসগুলো এখনো আছে কিন্তু এখন একটা পার্থক্য আমাদের যুব সমাজ এখন অনেক সচেতন। এই যে এখন সময়টা পেয়েছেন যে উপদেষ্টা মহোদয় কে পেয়েছেন এর চেয়ে ভালো সময় হতে পারে না এক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার জন্য। আপনারা পারফেক্ট সময়টা বেছে নিয়েছেন। আমরা এই প্রথমবারের মতো একজন পারফেক্ট পারসনকে পারফেক্ট প্লেসে পেয়েছি। আপনারা এই সুযোগটাকে হাতছাড়া করবেন না। উপদেষ্টা মহোদয়কে আপনারা যেভাবেই হোক যুবশক্তি দিয়ে স্যারকে কাজে লাগাবেন। আমাদের তরফ থেকে যতটুকু করা প্রয়োজন, আমাদের যতটুকু করার আছে সবটুকু দিয়ে আপনাদের সহযোগিতা করবো।

অনুষ্ঠানে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীনের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার চৌধুরী মো. যাবের সাদেক, আর্মি সিকিউরিটি ইউনিটের অধিনায়ক, ৬৩ বিজিবির অধিনায়ক, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সচিব, বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জলাভূমী ও পুকুর রক্ষা আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মোঃ বায়েজীদ হোসেন ও মহাসচিব মোঃ শফিকুল ইসলাম জিতু প্রমুখ।

Please Share This Post in Your Social Media

পরিবেশ উপদেষ্টা

দখলদাররা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন উচ্ছেদ করা হবে

গাজীপুর প্রতিনিধি
Update Time : ০৩:০৭:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বনভূমি ও পরিবেশ রক্ষার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বনভূমি দখলদাররা যত প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবান হোক না কেন তাদের উচ্ছেদ করা হবে। ৫ আগস্টের পর গাজীপুরে অবৈধভাবে দখল হওয়া ৯০ একর বনভূমির মধ্যে ১৬ একর উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি বনভূমি উদ্ধারেও অভিযান চালানো হবে।

শনিবার (২৮ আগস্ট) গাজীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বন দখলকারীদের প্রতিরোধ করতে কীভাবে কাজ করতে হয় তা আমরা খুব ভালোভাবেই জানি। আগামী তিন মাসের মধ্যে দখলকারীদের উচ্ছেদ করা হবে। সেজন্য নেওয়া হয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা। জেলা প্রশাসকদের বনের সীমানা নির্ধারণের কাজ দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেটি শেষ হলেই অভিযানও শুরু হবে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, বৃক্ষনিধন ও শিল্পকারখানার দূষণ বন্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে সবদিক পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নবায়নের সময় জনগণের মতামত নিতে হবে।

স্থানীয় পরিবেশ সমস্যা, বনভূমি দখল ও দূষণ নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা মতামত দেন। উপদেষ্টা এসব সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। তিনি পরিবেশ রক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নাগরিকদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

গাজীপুরের তরুণদের নদী ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ে সচেতন করা এবং তাদের সম্মিলিত শক্তি নদী রক্ষায় অনুষ্ঠিত হয়েছে যুব সম্মেলন। পরিবেশবিদ, স্থানীয় প্রশাসন, দায়িত্বরত সরকারি সংস্থা, নদী রক্ষা সংগঠক এবং স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থী ও যুবসমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

গাজীপুরের তরুণদের নদী ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ে সচেতন করা এবং তাদের সম্মিলিত শক্তি নদী রক্ষায় কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য পরিবেশবিদ, স্থানীয় প্রশাসন, দায়িত্বরত সরকারি সংস্থা, নদী রক্ষা সংগঠক এবং স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থী ও যুবসমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত হয় ‘নদী বাঁচাতে যুব সম্মেলন’।

শনিবার সকালে বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, প্রকৃতি ও জীবন ফাইন্ডেশন এবং বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সমন্বয়ে গাজীপুরের পিটিআই অডিটোরিয়ামে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের ইয়ুথ পার্টনার হিসেবে ছিলো সিওয়াইসি।

নদী বাঁচাতে যুব সম্মেলনের প্রধান অতিথি’র বক্তব্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা নদীকে অনেকগুলো কারণে দূষণ করি। তারমধ্য তিনটি বড় কারণে বেশি দূষণ হয়। একটি হচ্ছে শিল্প দূষণ, সিটি কর্পোরেশ-পৌরসভার বর্জ্য ও কারখানার পয়োবর্জ্য। একসঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্লাস্টিক দূষণ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যত যাতায়াত করে তার অর্ধেকের বেশি নদীপথে যাতায়াত করে। এখনো মরে যাওয়া দখল হওয়া নদীগুলো আমাদের যাতায়াতের অন্যতম ভূমিকা পালন করে। আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের কারণে জলবায়ুর মতো ভয়ংকর বিপর্যয়ের মুখে তরুন প্রজন্ম। আগামী প্রজন্ম যাদের জন্য আমরা গাড়ি-বাড়ি করি, টাকা জমাই, তারা আগামী প্রজন্ময় ভয়ংকর সমস্যার সম্মুখীন হবে। পরিবেশের যে বিরূপ প্রভাব সেটির কবলে পড়বে। আগামী প্রজন্মকে যদি একটি দূষণমুক্ত নদী না দিতে পারি তাহলে ওরা পানি পাবে কোথায়, মাছ পাবে কোথায়? মাছ’ই যদি না পায় তাহলে ওরা মাছে ভাতে বাঙালি না হয়ে ফার্মের মুরগি আর ভাতে বাঙালি হবে!

তিনি আরও বলেন, এই প্লাস্টিকগুলো নদীতে পড়ে। ফলে কোন কোন নদীতে তিন থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত প্লাস্টিকের আস্তর পড়ে যায়। যেগুলো আর পরিস্কার করা সম্ভব হয়না। একটি প্লাস্টিকে যে পরিমাণ কেমিক্যাল দেওয়া হয়, কিন্তু রিসাইকেল করার সময় কেউ চিন্তা করে না যে এই কেমিক্যাল গুলো কি হবে। এই প্লাস্টিকগুলো নদীতে গিয়ে ভেঙে ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিক হয়। এই প্লাস্টিকগুলো মাছ খায়। ফলে আমাদের রক্তে ও মায়ের দুধে মিশে যায়। এগুলোকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

পলিথিনের ব্যাগের বিষয়ে বলেন, আমাকে অনেকেই বলে প্লাস্টিকের ব্যাগতো এখনো বন্ধ হয়নি। আমি বলি, আপনি যখন বাজারে যান দোকানদার যখন আপনাকে পলিথিন ব্যাগ দেয় আপনি ওটা নেন৷ আপনি ক্রেতা হিসেবে বলেন এটা নিব না, এটা নিষিদ্ধ ২২ সাল থেকে। আপনার বাবা দাদারা চটের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতেন। আপনি কেন বাসায় থেকে একটি চটের ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছেন না। ক্রেতাদের বলতে হবে আমরা এটি নেবো না। দোকানদার দিতে চাইলেও ক্রেতারা যদি না নেয় তাহলে অনেকটা রোদ হবে। ক্রেতাদের প্লাস্টিক ব্যবহারের প্লাস্টিক ব্যবহারে অভ্যাস হয়ে গেছে। আপনারা দোকানদারদের বলেন এটা শুধু নিষিদ্ধ তাই নয় এটি আমার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর । সরকার এই পলিথিন সরানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে ক্রেতাদেরকেও সচেতন হতে হবে। তরুণ প্রজন্ম হিসেবে আপনি প্লাস্টিকে বর্জন করুন এটি ব্যবহার বন্ধ করে দিন পরিবর্তন চাইলে আগে আমাদের সবাইকে পরিবর্তন হতে হবে।

নদী দখল নিয়ে বলেন, নদীকে একটি সুন্দর প্রাণ ব্যবস্থা হিসেবে দেখতে হবে। আমরা কি নদীর সৃষ্টি করতে পারি? যদি সৃষ্টি করতে না পারি, তাহলে কেন ধ্বংস করি। নদীগুলোকে শিল্প কারখানার ভাগাড়ে ভাগারে পরিণত করার কোন অধিকার কোন শিল্প মালিকদের দেয়া হয়নি। বিশ্বের কোথাও কোন দেশে কোন মালিককে এই অধিকার দেওয়া হয়নি। তার ব্যবসায়িক লাভের জন্য বজ্র নদীতে ফেলার লাইসেন্স দেয়া হয়নি। অনেক কিছুর বিকল্প তৈরি করা যায় কিন্তু নদীর বিকল্প তৈরি করা সম্ভব নয়। প্রকৃতির সাথে কখনো লড়াই করতে নেই প্রকৃতির সাথে লড়াই করে জিততে পেরেছে এরকম কোন ইতিহাস নেই। নদী বাঁচাতে প্রয়োজনে আমরা দু চারটে শিল্প কারখানা বন্ধ করে দিব।

নতুন প্রজন্মদের উদ্দেশ্য বলেন, উন্নয়নটাকে নতুন প্রজন্ম হিসেবে নতুন ভাবে দেখতে হবে। আমাদের বাতাস পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বাতাস। আমাদের নদী গুলো দূষণের মধ্যে অন্যতম। যে উন্নয়ন আপনার বাতাসকে দূষিত করে, আপনার নদীকে মেরে ফেলে , যে উন্নয়ন আপনার কৃষি জমি কেড়ে নেয়, আপনার মায়ের দুধের সাথে মাইক্রগ্রাম মিশে যায়। সে উন্নয়ন আসলে উন্নয়ন নয়। আমাদের দেশে একটু সময় এসেছে উন্নয়নকে নতুনভাবে দেখার। আমরা বড় বড় শপিংমল ফ্লাইওভারকে উন্নয়ন কথা বলেছি। আপনারা তা বলবেন না। আপনাদের উন্নয়নের সংজ্ঞায় দূষণমুক্ত প্রবাহমান নদী থাকবে, আপনাদের উন্নয়নের সংজ্ঞায় বন থাকবে, বন্য পানি থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ৮৮ একর বনভূমি গত ৫ আগস্টের পর বেদখল হয়েছে। এগুলো ফিরিয়ে আনাটা ততটা সহজ ও বাধাহীন নয়। তবে যত বাধা দেওয়াই হোক কোন বাধাই ধোপে টিকবে না! প্রথম দফায় ৮৮ একর বনভূমি অবশ্যই দখলমুক্ত করা হবে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান বলেন, পানি ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব নেই। পানি আমাদের জীবন দেয় কিন্তু সকল পানি আমাদের জীবন দিতে পারে না। নদী আমরা বাচাতে না পারলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। আমরা যেমন দুঃশাসনে ছিলাম, তেমনি নদীগুলোতেও দুঃশাসন চলছে। আমরা অসচেতন ভাবে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে নদী নষ্ট করছি। আমরা বুঝতেই পারছি না আমরা নিজেদের কত ক্ষতি করছি। এই নদী ও পরিবেশ বাচাতে যিনি আগে থেকে কাজ করেছেন তিনি এখন দায়িত্ব পেয়েছেন। আশা করি এখনো আরও ভালো কিছু হবে।

গাজীপুরে দ্রুত আরও শিল্পকারখানা হচ্ছে। আমরা যদি শিল্পের দূষণ রোধ করতে না পারি তাহলে গাজীপুর বাচবে না। নদী দখল হচ্ছে, দূষন হচ্ছে এগুলোকে আমাদের সম্মিলিত প্রতিরোধ করতে হবে। যুব সমাজের কাজে আমরা খুবই আশাবাদী। আমরা নদীগুলোকে বাঁচাতে চাই এজন্য আজকের এই যুব সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করে এর মাধ্যমে যুব সমাজ এগিয়ে আসবে। সবাই মিলে নদীর নাব্যতা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনবে। এজন্য যেকোনো কাজে গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার সবসময় পাশে থাকবে।

ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, নদীগুলো শীরা উপশিরার মতো। শুধু পানির নাম জীবন নয়। নিরাপদ পানির অপর নাম জীবন। পৃথিবী জুড়ে নিরাপদ পানির সংকট, আমাদের দেশে হতে কতক্ষণ। সুতারং আমাদের শপথ নিতে দূষণ রোধে। কোনভাবেই যেনো দূষণ না হয় এজন্য আইন প্রনয়ণ করতে হবে। আমাদের যুব সমাজের স্লোগান হবে নদী বাঁচাও ভবিষ্যত বাঁচাও।

বাংলাদেশ বহুমুখী পাটপন্য উৎপাদনের সভাপতি রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, আমরা যেহেতু উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সেটা নিয়েই কথা বলি। আমাদের পরিবেশ উপদেষ্টা পলিথিন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বিয়েছে। আমরা পাট ও গার্মেন্টেসের ঝুট দিয়ে ব্যাগ তৈরি করি তাহলে সুফল পাব। একাজে যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। এটি সফল হলে পরিবেশের দূষণ রোধ হবে। যুব সমাজ পরিবেশকে কিভাবে সংরক্ষণ করতে পারে এবং উদ্যোগ নিতে পারে সেবিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। একটি সুন্দর এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিলে অনেক তরুণ উদোক্তা তৈরী হবে।

বাংলাদেশ কাটার সাকশন ড্রেজার ওয়াল্ড এসোসিয়েশনের সভাপতি বশির আহমেদ বলেন, পরিবেশ বাচাতে হবে এটা আমরা সবাই জানি। আমাদের দেশের ৫৭ টি নদী দেশের বাহির হতে প্রবাহমান। এটাকে পরিকল্পিত ব্যবহার করতে হবে। এসব নদীর পলি ঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারছি না। ১ কিলোমিটার নদী প্রশস্ত করতে কোটি টাকা খরচ হয়। সে হিসাবে ড্রেজার করলে তুলনামূলক খরচ কম হয়। দেশকে বাচাতে হলে আমাদের সচেতন হতে হবে। আমরা সচেতন না হলে সরকার তেমন কিছু করতে পারবে না। যুব সমাজের কাছে অনুরোধ তোমরা জেগে উঠো না হলে এই বড় বড় অট্টালিকা থাকবে কিন্তু তোমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাস করতে পারবে না।

রিভার এন্ড ডেল্টা রিচার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, নদী রক্ষা ও পরিবেশ রক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতার পাশাপাশি নদীকে মনিটরিং করতে হবে। এই শীত মৌসুমে নদীর নাব্যতা একবারে কমে যায়। ধরনা করা হচ্ছে চিটাগং হতেই বেশি অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ গাজীপুরের অর্থনীতি। কিন্তু এই জেলার দূষণ রোধে তেমন উল্লেখযোগ্য প্রতিরোধ নেই। এই মুহুর্তে হাউজিং প্রকল্পগুলোকেও পরিবেশবান্ধব করতে মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে। এজন্য জেলা প্রশাসক ও সরকারকে পদক্ষেপে নিতে হবে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে ইতিমধ্যে যুব সমাজ কে সাথে নিয়ে এবং ছাত্রদেরকে সাথে নিয়ে এরকম কিছু কাজ ইতিমধ্যে সেরে ফেলেছি। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে যে নদীগুলোর তালিকা করতে বলা হয়েছে। একটি নদী দখল ও দূষণ দূষণ মুক্ত করার যে প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়াতে সাথে গাজীপুর জেলার যুব সমাজ অন্তর্ভুক্ত আছে। গাজীপুরের হাঁসপুকুর গুলো আমরা সরমুক্ত করার জন্য যুব সমাজকে পাশে পেয়েছি এক্ষেত্রে বিডি ক্লিনকে আমাদের কে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। আমাদের প্রশাসনের সাথে তারা একসাথে কাজ করে অনেক সহজ করে দিয়েছে। আমাদের নদী বা বন পরিবেশ দূষণ একটা আরেকটার সাথে ভীষণভাবে নির্ভরশীল। আমাদের যদি নদী বাঁচাতে হয় তাহলে বন’কেও রাখতে হবে, বন’কে টিকিয়ে রাখতে হলে নদীকেও রাখতে হবে। পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদান আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটা সময় আমরা ভাবতাম আমাদের যেন খাদ্যা ভাবটা যেন না হয় ফুট সিকিউরিটি থাকে। আমরা খুব লক্ষ্য করছি যে আমরা হাঁ স নেওয়ার জন্য বাতাস টাই অভাব হয়ে যাচ্ছে। বাতাসের মধ্যে অক্সিজেনের পরিমাণটাও কমে আসছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের এখনই ভাবতে হবে এবং আমাদের এই এখনই কাজ করতে হবে। আমাদের জেলা প্রশাসন থেকে প্রতিনিয়ত পলিথিনের বিষয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। এবং কাউন্সিলিং করছি জনগণকে সচেতন করছি। যে কারখানাগুলো আছে যেখানে উৎপাদন আছে সেখানে যদি কারো কাছে কোন তথ্য থাকে তাহলে আমাদের দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য বলা হয়ে থাকে। আমি জোবাদের ও ছাত্রদের প্রতি আমার আরেকটা অনুরোধ আমরা আপনাদের সমর্থনে কাজ করছি আপনাদের সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই। দেশে যে বিদ্যমান আইন-শৃঙ্খলা, যে রেগুলেশনগুলো আছে সেগুলোর প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল থাকব, শ্রদ্ধাশীল থেকে সেটাকে মেনে নিয়েই আমাদের কাজগুলো করবো।

গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মোঃ যাবের সাদেক বলেন, নদী দখল বা নদী দূষণ পরিবেশ দূষণ এগুলো কেন হয় কিভাবে হয় কারা করে এগুলো আমরা কম বেশি সবাই জানি। আমরা যখন পড়াশোনা করেছি তখন দেখেছি তখন থেকেই দেখছি কারখানাগুলোতে ইটিপি নেই ইটিভি গুলো ঠিক মতো কাজ করে না সেই জিনিসগুলো এখনো আছে কিন্তু এখন একটা পার্থক্য আমাদের যুব সমাজ এখন অনেক সচেতন। এই যে এখন সময়টা পেয়েছেন যে উপদেষ্টা মহোদয় কে পেয়েছেন এর চেয়ে ভালো সময় হতে পারে না এক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার জন্য। আপনারা পারফেক্ট সময়টা বেছে নিয়েছেন। আমরা এই প্রথমবারের মতো একজন পারফেক্ট পারসনকে পারফেক্ট প্লেসে পেয়েছি। আপনারা এই সুযোগটাকে হাতছাড়া করবেন না। উপদেষ্টা মহোদয়কে আপনারা যেভাবেই হোক যুবশক্তি দিয়ে স্যারকে কাজে লাগাবেন। আমাদের তরফ থেকে যতটুকু করা প্রয়োজন, আমাদের যতটুকু করার আছে সবটুকু দিয়ে আপনাদের সহযোগিতা করবো।

অনুষ্ঠানে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীনের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার চৌধুরী মো. যাবের সাদেক, আর্মি সিকিউরিটি ইউনিটের অধিনায়ক, ৬৩ বিজিবির অধিনায়ক, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সচিব, বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জলাভূমী ও পুকুর রক্ষা আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মোঃ বায়েজীদ হোসেন ও মহাসচিব মোঃ শফিকুল ইসলাম জিতু প্রমুখ।