ঢাকা ০৪:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু ২১ মে ফেসবুক-ইউটিউবে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বললেই গ্রেফতার: আসিফ মাহমুদ টিভি-নিউজ পোর্টালে হজ অ্যাপ ‘লাব্বাইক’ বিষয়ক ভিডিও প্রচারের অনুরোধ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সাবেক স্ত্রী মিমের ৩০ দিনের ‘নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে’ যাচ্ছে ইউক্রেন ইসরাইলকে বয়কট, নরওয়েজিয়ান কনফেডারেশনের প্রশংসায় হামাস হজের আনুষ্ঠানিক কর্মপরিকল্পনা চালু করল সৌদি ভারত-পাকিস্তান ৮৭ ঘণ্টার যুদ্ধ, প্রতি ঘণ্টায় ব্যয় ১ বিলিয়ন ডলার! ‘বুনইয়ানুম মারসুস’ এর সাফল্য উদযাপনে ‘ইউমে তাশাক্কুর’ পালন করছে পাকিস্তান ভারতে ইউটিউব চ্যানেল ব্লক, আইনি পদক্ষেপের ঘোষণা ইলিয়াসের

তিন দফা দাবিতে ২২ জুন প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশ

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো
  • Update Time : ০৯:৪৮:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
  • / ২৭ Time View

জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পেশাগত ন্যায্য অধিকার আদায়সহ তিন দফা দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে।

রোববার (১১ মে) রংপুর টাউন হলে শিক্ষক সমিতির আয়োজনে দিনব্যাপি এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২২ জুন ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন নেতারা।

শিক্ষকেরা জানান, বিগত সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০২০ সালের ১২ আগস্ট যে টাইম স্কেল সংক্রান্ত চিঠি জারি করা হয়, তা ছিল সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ও বিভ্রান্তিকর। এই চিঠি প্রত্যাহার করে ৫০ ভাগ কার্যকর চাকরিকাল বিবেচনায় যথাযথ জ্যেষ্ঠতা প্রদান ও বঞ্চিত প্রধান শিক্ষকের শিক্ষক গেজেট প্রকাশ করাই এই আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য।

পঞ্চগড়ের মল্লিকাদাহ দক্ষিণ কুমারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক হরি কৃষ্ণ রায় জানান, ২০১৩ সালে দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৮ হাজার ৭৭২ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়। এরপর প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের জন্য একজন প্রধান শিক্ষক ও চারজন সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টির ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই ঘোষণা অনুসারে ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয়ের জন্য ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও প্রথম ধাপের ২২ হাজার ৯৮১ জন শিক্ষকদের মধ্যে কিছু সংখ্যক প্রধান শিক্ষককে গেজেটে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। কিন্তু প্রথম ধাপের বাকি শিক্ষকসহ দ্বিতীয় ধাপের ২ হাজার ২৫২টি এবং তৃতীয় ধাপের ৯৬০টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রধান শিক্ষক পদ স্থগিত রেখে ‘সহকারী শিক্ষক’ হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষকেরা।

পঞ্চগড়ে দেবীগঞ্জ উপজেলার শান্তিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ। বিদ্যালয় জাতীয়করণ হওয়ার পর গেজেটে তিনি প্রধান শিক্ষক হননি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সহকারী শিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলাম। রক্ত মাংস পানি করে শিক্ষার পরিবেশ এনেছি। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বাচ্চা সংগ্রহ করেছি। অথচ জাতীয়করণে আমাকে প্রধান শিক্ষক থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়ার প্রধান শিক্ষকদের শিক্ষক গেজেট প্রকাশ করতে হবে। তা না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

দেবীগঞ্জের আলমপাড়া শিশু নিলয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুভাষচন্দ্র সিংহ বলেন, টইম-স্কেলের ফলে আমাদের যে বেতন বৃদ্ধি হয়। তা অবসরভাতা থেকে কেটে নেওয়া হয়। এটা আমাদের সঙ্গে ধোকামী করা হচ্ছে। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে এটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। সংগঠনের মাধ্যমে হাইকোর্টে মামলা করলে আমাদের পক্ষে রায় আসে। কিন্তু তবু আমরা পাচ্ছিনা। তাই আন্দোলনে এসেছি।

প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা মামলায় রায় পেয়েছি। কিন্তু বিগত সরকারের পক্ষ থেকে আপিল করা হয়েছে। আপিল চলমান রয়েছে। আমরা বারবার আবেদন, স্মারকলিপি প্রদান ও অপেক্ষার পরও সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়ায় বাধ্য ২২ জুন ঢাকায় মহাসমাবেশের দিয়েছি। সারাদেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষক অংশগ্রহণ করবেন। শিক্ষকদের সম্মান ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত না হলে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নও সম্ভব নয়। আমাদের দাবি না মানলে সমাবেশের পর কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

কুড়িগ্রাম জেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলফাজ আলমের সঞ্চালনায় ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোমিনুল ইসলামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো আক্কাস আলী, মহাসচিব মো. খোন্দকার, দপ্তর সম্পাদক মোশারফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ আজমল হোসেন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মো. হামিদুল ইসলাম ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি রংপুর জেলা শাখার অবায়ক ওয়াহেদুল ইসলাম বকুল।

তিন দফা দাবিসমূহ : জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষকদের বিগত সরকারের সৃষ্ট আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনে- (১) ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক টাইম স্কেল সংক্রান্ত অবৈধ চিঠি প্রত্যাহার, (২) ৫০ শতাংশ অর্থাৎ কার্যকর চাকরির সময়সীমার ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা প্রদান এবং (৩) বাদ পড়া প্রধান শিক্ষকদের গেজেপ প্রকাশ।

Please Share This Post in Your Social Media

তিন দফা দাবিতে ২২ জুন প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশ

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো
Update Time : ০৯:৪৮:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পেশাগত ন্যায্য অধিকার আদায়সহ তিন দফা দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে।

রোববার (১১ মে) রংপুর টাউন হলে শিক্ষক সমিতির আয়োজনে দিনব্যাপি এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২২ জুন ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন নেতারা।

শিক্ষকেরা জানান, বিগত সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০২০ সালের ১২ আগস্ট যে টাইম স্কেল সংক্রান্ত চিঠি জারি করা হয়, তা ছিল সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ও বিভ্রান্তিকর। এই চিঠি প্রত্যাহার করে ৫০ ভাগ কার্যকর চাকরিকাল বিবেচনায় যথাযথ জ্যেষ্ঠতা প্রদান ও বঞ্চিত প্রধান শিক্ষকের শিক্ষক গেজেট প্রকাশ করাই এই আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য।

পঞ্চগড়ের মল্লিকাদাহ দক্ষিণ কুমারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক হরি কৃষ্ণ রায় জানান, ২০১৩ সালে দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৮ হাজার ৭৭২ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়। এরপর প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের জন্য একজন প্রধান শিক্ষক ও চারজন সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টির ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই ঘোষণা অনুসারে ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয়ের জন্য ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও প্রথম ধাপের ২২ হাজার ৯৮১ জন শিক্ষকদের মধ্যে কিছু সংখ্যক প্রধান শিক্ষককে গেজেটে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। কিন্তু প্রথম ধাপের বাকি শিক্ষকসহ দ্বিতীয় ধাপের ২ হাজার ২৫২টি এবং তৃতীয় ধাপের ৯৬০টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রধান শিক্ষক পদ স্থগিত রেখে ‘সহকারী শিক্ষক’ হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষকেরা।

পঞ্চগড়ে দেবীগঞ্জ উপজেলার শান্তিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ। বিদ্যালয় জাতীয়করণ হওয়ার পর গেজেটে তিনি প্রধান শিক্ষক হননি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সহকারী শিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলাম। রক্ত মাংস পানি করে শিক্ষার পরিবেশ এনেছি। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বাচ্চা সংগ্রহ করেছি। অথচ জাতীয়করণে আমাকে প্রধান শিক্ষক থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়ার প্রধান শিক্ষকদের শিক্ষক গেজেট প্রকাশ করতে হবে। তা না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

দেবীগঞ্জের আলমপাড়া শিশু নিলয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুভাষচন্দ্র সিংহ বলেন, টইম-স্কেলের ফলে আমাদের যে বেতন বৃদ্ধি হয়। তা অবসরভাতা থেকে কেটে নেওয়া হয়। এটা আমাদের সঙ্গে ধোকামী করা হচ্ছে। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে এটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। সংগঠনের মাধ্যমে হাইকোর্টে মামলা করলে আমাদের পক্ষে রায় আসে। কিন্তু তবু আমরা পাচ্ছিনা। তাই আন্দোলনে এসেছি।

প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা মামলায় রায় পেয়েছি। কিন্তু বিগত সরকারের পক্ষ থেকে আপিল করা হয়েছে। আপিল চলমান রয়েছে। আমরা বারবার আবেদন, স্মারকলিপি প্রদান ও অপেক্ষার পরও সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়ায় বাধ্য ২২ জুন ঢাকায় মহাসমাবেশের দিয়েছি। সারাদেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষক অংশগ্রহণ করবেন। শিক্ষকদের সম্মান ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত না হলে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নও সম্ভব নয়। আমাদের দাবি না মানলে সমাবেশের পর কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

কুড়িগ্রাম জেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলফাজ আলমের সঞ্চালনায় ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোমিনুল ইসলামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো আক্কাস আলী, মহাসচিব মো. খোন্দকার, দপ্তর সম্পাদক মোশারফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ আজমল হোসেন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মো. হামিদুল ইসলাম ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি রংপুর জেলা শাখার অবায়ক ওয়াহেদুল ইসলাম বকুল।

তিন দফা দাবিসমূহ : জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষকদের বিগত সরকারের সৃষ্ট আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনে- (১) ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক টাইম স্কেল সংক্রান্ত অবৈধ চিঠি প্রত্যাহার, (২) ৫০ শতাংশ অর্থাৎ কার্যকর চাকরির সময়সীমার ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা প্রদান এবং (৩) বাদ পড়া প্রধান শিক্ষকদের গেজেপ প্রকাশ।