ঢাকা ১১:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তফসিল ঘোষণায় স্বস্তিতে ছাত্রদল, হতাশ অন্যরা

নাইমুর রহমান
  • Update Time : ০৭:১৩:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৯৩ Time View

২২ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন নির্ধারণে স্বস্তিতে ছাত্রদল, ক্ষুব্ধ অন্যান্য সংগঠন — প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

দীর্ঘ ৩৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাসের পরিবেশ। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ দেখছেন গণতান্ত্রিক চর্চার প্রত্যাবর্তন, আবার কেউ বলছেন— প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ইচ্ছা পূরণে কাজ করছে।

তফসিল ঘোষণায় উচ্ছ্বাস ও অসন্তোষ একসঙ্গে

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে জকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান। তাঁর ঘোষণামতে, আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ।

তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানান ক্যাম্পাসের সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলো। ছাত্রদল প্রস্তাবিত তারিখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছে, “এটি আমাদের সাংগঠনিক প্রস্তুতির জন্য ইতিবাচক সময় দিচ্ছে।”

অন্যদিকে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, জাতীয় ছাত্রশক্তি এবং আপ বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন সময় পেছানোর সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে এবং প্রশাসন নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে কাজ করছে।

প্রশাসনের প্রতি আস্থাহীনতা ও ‘গোপন সমীকরণ’

জাতীয় ছাত্রশক্তির জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “আমরা দেখছি প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট সংগঠনকে খুশি করতে তাদের ইচ্ছেমতো কাজ করে যাচ্ছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচন হওয়া উচিত ছিল।”

এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে নতুন করে সন্দেহ ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে প্রশাসনের ভূমিকাকে ঘিরে। অনেকেই বলছেন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে।

শিবিরের অংশগ্রহণে নতুন সমীকরণ

তফসিল ঘোষণার পরপরই ক্যাম্পাসে মুখোমুখি অবস্থানে দেখা যায় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরকে। পরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিবির ঘোষণা দেয়, তারা আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবে।

জবি শাখা শিবিরের সেক্রেটারি আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, “অধিকাংশ শিক্ষার্থীর দাবিকে উপেক্ষা করে ২৬ দিন নির্বাচন পেছানো হয়েছে, তবুও আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।”

শিবিরের এই অংশগ্রহণ ক্যাম্পাস রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ৩৮ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন শুধু গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরিয়ে আনার সুযোগ নয়— বরং বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূচনা।

ছাত্রদলের সুবিধা, অন্যদের হতাশা

ছাত্রদল সময় বাড়ায় স্বস্তিতে। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, দীর্ঘ প্রচারণা ও মনোনয়ন প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত সময় পাওয়া তাদের জন্য ইতিবাচক।

ছাত্রদলের জবি শাখার এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এটা আমাদের সংগঠনের পুনর্গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। বড় সংগঠন হিসেবে মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সময় প্রয়োজন।”

অন্যদিকে ক্ষোভ প্রকাশ করছে ছোট ও বিকল্প সংগঠনগুলো। তাদের দাবি— এই সময় বাড়ানো প্রতিযোগিতার ভারসাম্য নষ্ট করবে এবং একই সঙ্গে নির্বাচন না হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি করেছে, কারণ দেশ তখন জাতীয় নির্বাচনের দিকে ঝুঁকবে।

ভোটার উপস্থিতি নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়, ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যায়। আবার অনেক শিক্ষার্থীর সেমিস্টার ফাইনাল থাকায় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তার প্রভাব পড়তে পারে। তবে সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয় হলো আসন্ন জাতীয় নির্বাচন।

দীর্ঘ অপেক্ষার শেষে রাজনৈতিক বাস্তবতা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি দীর্ঘদিন ছিল একপাক্ষিক। তাই জকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের কাছে একটি ঐতিহাসিক পুনর্জাগরণের প্রতীক। তবে শুরুতেই এমন বিতর্ক প্রশাসনের সক্ষমতা ও আস্থার সংকটকে সামনে এনেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

তফসিল ঘোষণায় স্বস্তিতে ছাত্রদল, হতাশ অন্যরা

নাইমুর রহমান
Update Time : ০৭:১৩:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

২২ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন নির্ধারণে স্বস্তিতে ছাত্রদল, ক্ষুব্ধ অন্যান্য সংগঠন — প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

দীর্ঘ ৩৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাসের পরিবেশ। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ দেখছেন গণতান্ত্রিক চর্চার প্রত্যাবর্তন, আবার কেউ বলছেন— প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ইচ্ছা পূরণে কাজ করছে।

তফসিল ঘোষণায় উচ্ছ্বাস ও অসন্তোষ একসঙ্গে

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে জকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান। তাঁর ঘোষণামতে, আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ।

তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানান ক্যাম্পাসের সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলো। ছাত্রদল প্রস্তাবিত তারিখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছে, “এটি আমাদের সাংগঠনিক প্রস্তুতির জন্য ইতিবাচক সময় দিচ্ছে।”

অন্যদিকে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, জাতীয় ছাত্রশক্তি এবং আপ বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন সময় পেছানোর সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে এবং প্রশাসন নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে কাজ করছে।

প্রশাসনের প্রতি আস্থাহীনতা ও ‘গোপন সমীকরণ’

জাতীয় ছাত্রশক্তির জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “আমরা দেখছি প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট সংগঠনকে খুশি করতে তাদের ইচ্ছেমতো কাজ করে যাচ্ছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচন হওয়া উচিত ছিল।”

এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে নতুন করে সন্দেহ ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে প্রশাসনের ভূমিকাকে ঘিরে। অনেকেই বলছেন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে।

শিবিরের অংশগ্রহণে নতুন সমীকরণ

তফসিল ঘোষণার পরপরই ক্যাম্পাসে মুখোমুখি অবস্থানে দেখা যায় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরকে। পরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিবির ঘোষণা দেয়, তারা আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবে।

জবি শাখা শিবিরের সেক্রেটারি আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, “অধিকাংশ শিক্ষার্থীর দাবিকে উপেক্ষা করে ২৬ দিন নির্বাচন পেছানো হয়েছে, তবুও আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।”

শিবিরের এই অংশগ্রহণ ক্যাম্পাস রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ৩৮ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন শুধু গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরিয়ে আনার সুযোগ নয়— বরং বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূচনা।

ছাত্রদলের সুবিধা, অন্যদের হতাশা

ছাত্রদল সময় বাড়ায় স্বস্তিতে। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, দীর্ঘ প্রচারণা ও মনোনয়ন প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত সময় পাওয়া তাদের জন্য ইতিবাচক।

ছাত্রদলের জবি শাখার এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এটা আমাদের সংগঠনের পুনর্গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। বড় সংগঠন হিসেবে মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সময় প্রয়োজন।”

অন্যদিকে ক্ষোভ প্রকাশ করছে ছোট ও বিকল্প সংগঠনগুলো। তাদের দাবি— এই সময় বাড়ানো প্রতিযোগিতার ভারসাম্য নষ্ট করবে এবং একই সঙ্গে নির্বাচন না হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি করেছে, কারণ দেশ তখন জাতীয় নির্বাচনের দিকে ঝুঁকবে।

ভোটার উপস্থিতি নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়, ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যায়। আবার অনেক শিক্ষার্থীর সেমিস্টার ফাইনাল থাকায় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তার প্রভাব পড়তে পারে। তবে সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয় হলো আসন্ন জাতীয় নির্বাচন।

দীর্ঘ অপেক্ষার শেষে রাজনৈতিক বাস্তবতা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি দীর্ঘদিন ছিল একপাক্ষিক। তাই জকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের কাছে একটি ঐতিহাসিক পুনর্জাগরণের প্রতীক। তবে শুরুতেই এমন বিতর্ক প্রশাসনের সক্ষমতা ও আস্থার সংকটকে সামনে এনেছে।