ঢাকা ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের অনুমোদনে ভেনেজুয়েলায় সিআইএর গোপন অভিযান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ০৩:৪৩:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৪৪৭ Time View

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর জন্য মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিআইএ) অনুমোদন দিয়েছেন। গতকাল বুধবার এ কথা বলেন তিনি। ট্রাম্পের বক্তব্যে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহে মার্কিন বাহিনী ক্যারিবীয় অঞ্চলে সন্দেহজনক মাদকবাহী নৌকার দোহাই দিয়ে অন্তত পাঁচটি হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় ২৭ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা একে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাযজ্ঞ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

হোয়াইট হাউসে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলা অঞ্চলের মাদক পাচার ঠেকাতে স্থলভাগেও অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

গত বছর বিতর্কিত নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিকভাবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাদুরোর বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়ে। মাদুরো ইতিমধ্যে টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।

অঞ্চলটিতে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় কারাকাসের মানুষের মধ্যে সম্ভাব্য হামলার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের অনুমোদনের কারণে সিআইএ একতরফাভাবে বা যেকোনো বিস্তৃত মার্কিন সামরিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলায় অভিযান চালাতে পারবে।

সিআইএ ভেনেজুয়েলায় অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে কি না, কিংবা এসব পরিকল্পনাকে বিকল্প হিসেবে রাখা হচ্ছে কি না, তা জানা যায়নি। তবে গোয়েন্দা সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে তৎপরতা চালাচ্ছে।

গতকাল বুধবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্পকে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এফবিআইয়ের পরিচালক কাশ প্যাটেল এবং অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কেন সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় পাঠানোর অনুমতি দিয়েছেন?’

জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘দুটি কারণে আমি অনুমতি দিয়েছি। ১ নম্বর কারণ হলো, তারা (ভেনেজুয়েলা) তাদের কারাগারগুলো খালি করে সেখানকার বাসিন্দাদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দিয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো মাদক। ভেনেজুয়েলা থেকে প্রচুর মাদক যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকে। আপনারা দেখে থাকবেন, ভেনেজুয়েলার মাদকের একটি বড় অংশ সমুদ্রপথে আসে। তবে আমরা তাদের স্থলপথেও আটকাব।’

সিআইএর লক্ষ্য মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা কি না, সে ব্যাপারে কিছু বলেননি ট্রাম্প। তবে আগে থেকেই মাদুরোকে গ্রেপ্তারে সহায়ক তথ্য দিতে পারলে পাঁচ কোটি ডলার পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে একটি নৌকাকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ছয়জন নিহত হন।

নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এ নিয়ে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘গোয়েন্দারা নিশ্চিত করেছেন, নৌকাটি মাদক পাচার করছিল, অবৈধ মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং মাদক পাচারের করিডর হিসেবে পরিচিত পথ দিয়ে চলাচল করছিল।’

আগের ঘটনাগুলোর মতো এ ক্ষেত্রেও মার্কিন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেননি, নৌকাটি কোনো মাদক পাচারকারী সংগঠন পরিচালনা করছিল বা নৌকায় থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় কী।

গতকাল বুধবার রাতে টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে মাদুরো উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

সমাজতান্ত্রিক এ নেতা বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনকে না বলুন, যা আমাদের আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ার যুদ্ধের মতো অসংখ্য ব্যর্থ যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়। সিআইএ-নিয়ন্ত্রিত অভ্যুত্থানকে না বলুন।’

মাদুরো আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে বলছি, আমার কথা শুনুন। যুদ্ধকে না বলুন। শান্তিকে হ্যাঁ বলুন।’

গতকাল মাদুরো কারাকাসের পিতারে উপশহরে এবং পার্শ্ববর্তী মিরান্দা রাজ্যে সামরিক মহড়ার নির্দেশ দেন।

বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় মাদুরো বলেন, তেলসমৃদ্ধ দেশটিকে রক্ষার জন্য তিনি সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বেসামরিক মিলিশিয়াকে প্রস্তুত করছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

ট্রাম্পের অনুমোদনে ভেনেজুয়েলায় সিআইএর গোপন অভিযান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Update Time : ০৩:৪৩:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর জন্য মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিআইএ) অনুমোদন দিয়েছেন। গতকাল বুধবার এ কথা বলেন তিনি। ট্রাম্পের বক্তব্যে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহে মার্কিন বাহিনী ক্যারিবীয় অঞ্চলে সন্দেহজনক মাদকবাহী নৌকার দোহাই দিয়ে অন্তত পাঁচটি হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় ২৭ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা একে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাযজ্ঞ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

হোয়াইট হাউসে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলা অঞ্চলের মাদক পাচার ঠেকাতে স্থলভাগেও অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

গত বছর বিতর্কিত নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিকভাবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাদুরোর বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়ে। মাদুরো ইতিমধ্যে টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।

অঞ্চলটিতে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় কারাকাসের মানুষের মধ্যে সম্ভাব্য হামলার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের অনুমোদনের কারণে সিআইএ একতরফাভাবে বা যেকোনো বিস্তৃত মার্কিন সামরিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলায় অভিযান চালাতে পারবে।

সিআইএ ভেনেজুয়েলায় অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে কি না, কিংবা এসব পরিকল্পনাকে বিকল্প হিসেবে রাখা হচ্ছে কি না, তা জানা যায়নি। তবে গোয়েন্দা সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে তৎপরতা চালাচ্ছে।

গতকাল বুধবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্পকে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এফবিআইয়ের পরিচালক কাশ প্যাটেল এবং অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কেন সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় পাঠানোর অনুমতি দিয়েছেন?’

জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘দুটি কারণে আমি অনুমতি দিয়েছি। ১ নম্বর কারণ হলো, তারা (ভেনেজুয়েলা) তাদের কারাগারগুলো খালি করে সেখানকার বাসিন্দাদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দিয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো মাদক। ভেনেজুয়েলা থেকে প্রচুর মাদক যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকে। আপনারা দেখে থাকবেন, ভেনেজুয়েলার মাদকের একটি বড় অংশ সমুদ্রপথে আসে। তবে আমরা তাদের স্থলপথেও আটকাব।’

সিআইএর লক্ষ্য মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা কি না, সে ব্যাপারে কিছু বলেননি ট্রাম্প। তবে আগে থেকেই মাদুরোকে গ্রেপ্তারে সহায়ক তথ্য দিতে পারলে পাঁচ কোটি ডলার পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে একটি নৌকাকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ছয়জন নিহত হন।

নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এ নিয়ে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘গোয়েন্দারা নিশ্চিত করেছেন, নৌকাটি মাদক পাচার করছিল, অবৈধ মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং মাদক পাচারের করিডর হিসেবে পরিচিত পথ দিয়ে চলাচল করছিল।’

আগের ঘটনাগুলোর মতো এ ক্ষেত্রেও মার্কিন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেননি, নৌকাটি কোনো মাদক পাচারকারী সংগঠন পরিচালনা করছিল বা নৌকায় থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় কী।

গতকাল বুধবার রাতে টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে মাদুরো উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

সমাজতান্ত্রিক এ নেতা বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনকে না বলুন, যা আমাদের আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ার যুদ্ধের মতো অসংখ্য ব্যর্থ যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়। সিআইএ-নিয়ন্ত্রিত অভ্যুত্থানকে না বলুন।’

মাদুরো আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে বলছি, আমার কথা শুনুন। যুদ্ধকে না বলুন। শান্তিকে হ্যাঁ বলুন।’

গতকাল মাদুরো কারাকাসের পিতারে উপশহরে এবং পার্শ্ববর্তী মিরান্দা রাজ্যে সামরিক মহড়ার নির্দেশ দেন।

বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় মাদুরো বলেন, তেলসমৃদ্ধ দেশটিকে রক্ষার জন্য তিনি সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বেসামরিক মিলিশিয়াকে প্রস্তুত করছেন।