ঢাকা ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টেলিকম অপারেটররা সিম লক করে কিস্তিতে ফোন বিক্রি করতে পারবে

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
  • Update Time : ১২:৫৪:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৫১৩ Time View

সব সিম লক করার অনুমোদন পেলো অপারেটররা

অবশেষে সিমের সব স্লট ‘লক’ রেখে কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে দেশের মোবাইল অপারেটররা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মোবাইল অপারেটরদের এ সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর বিটিআরসির ৩০০তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

সভার সিদ্ধান্তের বিবরণী অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ নিয়ম কার্যকর হবে।

মোবাইল অপারেটররা এখন কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রি করছে। তবে সে ক্ষেত্রে স্মার্টফোনের সব সিম লক করতে পারে না তারা। বড় মোবাইল অপারেটররা দীর্ঘদিন ধরে সব সিম লকের বিধান চেয়ে আসছিল।

এখন বিটিআরসি বলছে, স্মার্টফোনের সিমের সব স্লট লক করার সুবিধা পাবে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটর। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব বকেয়া পরিশোধসাপেক্ষে গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো অপারেটরের সিম ব্যবহারের জন্য লক খুলে দিতে হবে।

মুঠোফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ‘ডিভাইস লকিং’ অ্যাপসের মাধ্যমেও স্মার্টফোন কিস্তিতে বিক্রয় করা যাবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি।

অর্থাৎ সিম বা নেটওয়ার্ক লকিং ও ডিভাইস লকিং—উভয় পদ্ধতিতে একসঙ্গে অথবা এককভাবে কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রি করা যাবে। এ ক্ষেত্রে সিম লকিং বা নেটওয়ার্ক লকিং হলো যে অপারেটর থেকে কিস্তিতে স্মার্টফোন কেনা হবে, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেই অপারেটরের সিম বা নেটওয়ার্ক ছাড়া অন্য সিম বা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যাবে না।

অন্যদিকে মুঠোফোন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান থেকে কিস্তিতে স্মার্টফোন কেনা হলে টাকা শোধ না হওয়া পর্যন্ত ডিভাইসটি লক থাকে। সে ক্ষেত্রে ডিভাইসে অন্য সিম ব্যবহার করতে না পারা, বিক্রি করতে না পারাসহ বিভিন্ন শর্ত থাকে। এটা ডিভাইস লকিং হিসেবে পরিচিত।

নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি আরও বলেছে, মোবাইল অপারেটররা স্মার্টফোন আমদানি, উৎপাদন ও সংযোজন করতে পারবে না। তবে তারা স্মার্টফোন উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে। চুক্তির মাধ্যমে বিটিআরসি অনুমোদিত স্মার্টফোন তারা কিস্তিতে বিক্রি করতে পারবে।

কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রির ক্ষেত্রে বিটিআরসির অনুমতি নিয়ে অপারেটররা বিভিন্ন প্যাকেজ ও বান্ডেল অফার দিতে পারবে। দেশে প্রচলিত আর্থিক আইন, ব্যাংকিং বিধিমালা, ভোক্তা সুরক্ষা নীতিমালাসহ প্রযোজ্য অন্যান্য আইন অপারেটরদের মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি গ্রাহকের ডিভাইসের (স্মার্টফোন) তথ্যের নিরাপত্তা অপারেটরদের নিশ্চিত করতে হবে।

স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ানোসহ তা সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে ২০২৩ সালে একটি সিম লক রেখে কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রির সিদ্ধান্ত দিয়েছিল বিটিআরসি। কিন্তু স্মার্টফোনের সব সিমই লক চেয়ে বিটিআরসির কাছে আবেদন করেছিল মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি।

এই দুই অপারেটরের যুক্তি ছিল, একটি সিম উন্মুক্ত রেখে কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রি তাদের জন্য সুবিধাজনক নয়।

যদিও তখন বাংলালিংক সব সিম লক করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। কারণ হিসেবে বাংলালিংক বলেছিল, স্মার্টফোন বিক্রিতে বড় অপারেটররা ভর্তুকি দেবে। আর এতে ছোট অপারেটররা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।

তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলালিংক চিঠি দিয়ে বিটিআরসিকে জানায়, সিমের সব স্লট লক রেখে কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রি নিয়ে তাদের আপত্তি নেই। তবে তারা নিজেদের প্রস্তুতির জন্য সময় চায়। আগামী জানুয়ারি মাসে এই বিধান কার্যকরের অনুরোধ জানায় তারা।

বিটিআরসি চলতি বছরের এপ্রিলে ডিভাইস লকিংয়ের মাধ্যমে স্মার্টফোন বিক্রির অনুমতি দেয়। স্মার্ট টেকনোলজি বাংলাদেশ লিমিটেড নামের মুঠোফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নাইজেরিয়াভিত্তিক আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পামপের সঙ্গে যৌথভাবে ডিভাইস লকিংয়ের মাধ্যমে স্মার্টফোন বিক্রি শুরু করে।

তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বিটিআরসি জানায়, ডিভাইস লকিং চালুর পর স্মার্টফোন বিক্রি বেড়েছে ২৮ শতাংশ।

বিটিআরসির ধারণা, ডিভাইস লকিংয়ের পাশাপাশি সব সিম বা নেটওয়ার্ক লকিং সুবিধায় কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রির অনুমোদন ব্যবহার আরও বাড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলেন, ‘এটি ভালো উদ্যোগ। যাঁরা একসঙ্গে অনেক টাকা দিয়ে স্মার্টফোন কিনতে পারেন না, তাঁদের জন্য সুবিধা হবে। তবে কেউ যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব টাকা দিতে না পারেন বা বের হয়ে যেতে চান, সে ক্ষেত্রে করণীয় কী হবে, তা উল্লেখ থাকা দরকার। অর্থাৎ শর্ত প্রযোজ্যের বিষয়গুলো স্পষ্ট থাকতে হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

টেলিকম অপারেটররা সিম লক করে কিস্তিতে ফোন বিক্রি করতে পারবে

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
Update Time : ১২:৫৪:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫

অবশেষে সিমের সব স্লট ‘লক’ রেখে কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে দেশের মোবাইল অপারেটররা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মোবাইল অপারেটরদের এ সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর বিটিআরসির ৩০০তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

সভার সিদ্ধান্তের বিবরণী অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ নিয়ম কার্যকর হবে।

মোবাইল অপারেটররা এখন কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রি করছে। তবে সে ক্ষেত্রে স্মার্টফোনের সব সিম লক করতে পারে না তারা। বড় মোবাইল অপারেটররা দীর্ঘদিন ধরে সব সিম লকের বিধান চেয়ে আসছিল।

এখন বিটিআরসি বলছে, স্মার্টফোনের সিমের সব স্লট লক করার সুবিধা পাবে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটর। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব বকেয়া পরিশোধসাপেক্ষে গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো অপারেটরের সিম ব্যবহারের জন্য লক খুলে দিতে হবে।

মুঠোফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ‘ডিভাইস লকিং’ অ্যাপসের মাধ্যমেও স্মার্টফোন কিস্তিতে বিক্রয় করা যাবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি।

অর্থাৎ সিম বা নেটওয়ার্ক লকিং ও ডিভাইস লকিং—উভয় পদ্ধতিতে একসঙ্গে অথবা এককভাবে কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রি করা যাবে। এ ক্ষেত্রে সিম লকিং বা নেটওয়ার্ক লকিং হলো যে অপারেটর থেকে কিস্তিতে স্মার্টফোন কেনা হবে, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেই অপারেটরের সিম বা নেটওয়ার্ক ছাড়া অন্য সিম বা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যাবে না।

অন্যদিকে মুঠোফোন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান থেকে কিস্তিতে স্মার্টফোন কেনা হলে টাকা শোধ না হওয়া পর্যন্ত ডিভাইসটি লক থাকে। সে ক্ষেত্রে ডিভাইসে অন্য সিম ব্যবহার করতে না পারা, বিক্রি করতে না পারাসহ বিভিন্ন শর্ত থাকে। এটা ডিভাইস লকিং হিসেবে পরিচিত।

নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি আরও বলেছে, মোবাইল অপারেটররা স্মার্টফোন আমদানি, উৎপাদন ও সংযোজন করতে পারবে না। তবে তারা স্মার্টফোন উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে। চুক্তির মাধ্যমে বিটিআরসি অনুমোদিত স্মার্টফোন তারা কিস্তিতে বিক্রি করতে পারবে।

কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রির ক্ষেত্রে বিটিআরসির অনুমতি নিয়ে অপারেটররা বিভিন্ন প্যাকেজ ও বান্ডেল অফার দিতে পারবে। দেশে প্রচলিত আর্থিক আইন, ব্যাংকিং বিধিমালা, ভোক্তা সুরক্ষা নীতিমালাসহ প্রযোজ্য অন্যান্য আইন অপারেটরদের মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি গ্রাহকের ডিভাইসের (স্মার্টফোন) তথ্যের নিরাপত্তা অপারেটরদের নিশ্চিত করতে হবে।

স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ানোসহ তা সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে ২০২৩ সালে একটি সিম লক রেখে কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রির সিদ্ধান্ত দিয়েছিল বিটিআরসি। কিন্তু স্মার্টফোনের সব সিমই লক চেয়ে বিটিআরসির কাছে আবেদন করেছিল মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি।

এই দুই অপারেটরের যুক্তি ছিল, একটি সিম উন্মুক্ত রেখে কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রি তাদের জন্য সুবিধাজনক নয়।

যদিও তখন বাংলালিংক সব সিম লক করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। কারণ হিসেবে বাংলালিংক বলেছিল, স্মার্টফোন বিক্রিতে বড় অপারেটররা ভর্তুকি দেবে। আর এতে ছোট অপারেটররা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।

তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলালিংক চিঠি দিয়ে বিটিআরসিকে জানায়, সিমের সব স্লট লক রেখে কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রি নিয়ে তাদের আপত্তি নেই। তবে তারা নিজেদের প্রস্তুতির জন্য সময় চায়। আগামী জানুয়ারি মাসে এই বিধান কার্যকরের অনুরোধ জানায় তারা।

বিটিআরসি চলতি বছরের এপ্রিলে ডিভাইস লকিংয়ের মাধ্যমে স্মার্টফোন বিক্রির অনুমতি দেয়। স্মার্ট টেকনোলজি বাংলাদেশ লিমিটেড নামের মুঠোফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নাইজেরিয়াভিত্তিক আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পামপের সঙ্গে যৌথভাবে ডিভাইস লকিংয়ের মাধ্যমে স্মার্টফোন বিক্রি শুরু করে।

তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বিটিআরসি জানায়, ডিভাইস লকিং চালুর পর স্মার্টফোন বিক্রি বেড়েছে ২৮ শতাংশ।

বিটিআরসির ধারণা, ডিভাইস লকিংয়ের পাশাপাশি সব সিম বা নেটওয়ার্ক লকিং সুবিধায় কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রির অনুমোদন ব্যবহার আরও বাড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলেন, ‘এটি ভালো উদ্যোগ। যাঁরা একসঙ্গে অনেক টাকা দিয়ে স্মার্টফোন কিনতে পারেন না, তাঁদের জন্য সুবিধা হবে। তবে কেউ যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব টাকা দিতে না পারেন বা বের হয়ে যেতে চান, সে ক্ষেত্রে করণীয় কী হবে, তা উল্লেখ থাকা দরকার। অর্থাৎ শর্ত প্রযোজ্যের বিষয়গুলো স্পষ্ট থাকতে হবে।’