টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অভয়াশ্রমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ করণীয়’’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

- Update Time : ০৯:০১:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
- / ৮০ Time View
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ˮ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে (বিএআরসি) ‘টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অভয়াশ্রমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ – শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর ফার্মগেটে বিএআরসি সম্মেলন কক্ষে সেমিনারটির আয়োজন করে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।
সেমিনারে প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদষ্টো জনাব ফরিদা আখতার বক্তব্যের প্রারম্ভেই বলেন, আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সকল শহীদ ও আহতদের প্রতি; যাঁদের আত্মত্যাগে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি এবং জীবিকা নির্বাহে মৎস্যখাত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। কিন্তু মাছের অতিরিক্ত আহরণ, প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের কারণে আমাদের মৎস্যসম্পদ দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সরকার সময়োপযোগী নীতিমালা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মাছের অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা।
তিনি আরও বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে যেখানে উন্মুক্ত জলাশয়ে দেশব্যাপী অভয়াশ্রয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, সেখানে মাছের ঘনত্ব ও প্রজাতির বৈচিত্র্য উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার আওতায় মাছের সফল প্রজনন, সুষ্ঠু বিচরণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক বিগত কয়েক বছর যাবৎ অভয়াশ্রম স্থাপন, আবাসস্থল পুনরুদ্ধার (খনন) ও স্থানীয় পর্যায়ে মৎস্য আইনের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সংকটাপন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্তি হতে সুরক্ষা পেয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন প্রায় ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২.৭১ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। ইতোমধ্যে ইনস্টিটিউটের গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে অভয়াশ্রমভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় ইলিশ সংরক্ষণে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। নদীভিত্তিক অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার ফলে শুধুমাত্র ইলিশ নয়, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় মাছেরও বিচরণ ও প্রজননে অর্থবহ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে ফলে দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়ছে, যা দেশের মোট মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। IUCN ২০১৫ এর তথ্য মতে, বিপন্ন প্রজাতির মাছ ৬৪টি যার মধ্যে বিএফআরআই এখন পর্যন্ত ৪১টি বিলুপ্তপ্রায় মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা লাভ করেছে। এছাড়াও বিএফআরআই দেশীয় মাছ সংরক্ষণে “লাইভ জিন ব্যাংক” প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশীয় মাছ সংরক্ষণে লাইভ জীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ দেশব্যাপী আরও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
সেমিনারে গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে মাননীয় মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু অভিযোজন ও ভয়াবহতা মোকাবিলা, মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বিভিন্ন গবেষণালব্ধ ফলাফল এবং উন্নত ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে মাছের সহনশীল উৎপাদন বজায় রাখার লক্ষ্যে মৎস্য গবেষক ও সম্প্রসারণকর্মীদের নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে।
সেমিনারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক মৎস্যচাষ ও বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে মাছের উৎপাদন বর্তমানে ৫০.১৮ লক্ষ মে. টনে উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যানুযায়ী অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বে ২য়। জলাশয়ভিত্তিক অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার ফলে গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় মাছের বিচরণ ও প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে; বিশেষ করে নিম্ন মেঘনা অববাহিকায় পাঙ্গাস মাছের প্রাপ্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যেখানে পাঙ্গাসের আহরণ ছিল মাত্র ৩৭২ মেট্রিক টন, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৬০০ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র। সেমিনারে মূল বিষয়ের উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআই এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মশিউর রহমান। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি, জনাব ফারাহ শাম্মী, এনডিসি; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন; ড. মো. আবদুর রউফ, মহাপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর; বিএফআরআই এর বিজ্ঞানী, মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়