ঢাকা ০৭:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
রূপগঞ্জে চাঁদাবাজি ও প্রবাসীদের মারধরের অভিযোগে ১২ হিজড়া গ্রেফতার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে যুবকের ৪০ কেজি দুধ দিয়ে গোসল সচিবালয়কে সিঙ্গেল-ইউজ প্লাস্টিক মুক্ত করতে সরকারের সিদ্ধান্ত কুবি শিক্ষার্থী সুমাইয়াকে ‘ধর্ষণের পর’ হত্যা করা হয়েছে: আসামির স্বীকারোক্তি ব্রাজিল সফরে প্রধান বিচারপতি টঙ্গী ফ্লাইওভারে বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১ কাউন্সিলরের বাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় বিপাকে ৪ কর্মকর্তা  নোয়াখালীতে ট্রাকের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু নিস্পত্তির মাধ্যমে মামলা জট কমিয়ে বিচার কাজ এগিয়ে নিতে হবে আদালত থেকে হাতকড়াসহ লাফ দিয়ে হত্যা মামলার আসামির পালানোর চেষ্টা

টিলা কাটার অভিযোগে সিলেটে চা বাগানের ম্যানেজারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা পরিবেশ অধিদপ্তরের

মোঃ মুহিবুর রহমান, সিলেট প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৪:২২:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ২০১ Time View

সিলেট সদর উপজেলার কুমারগাঁও মৌজায় ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি টিলা কাটার অভিযোগে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সোমবার সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানায় মামলাটি করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মামুনুর রশিদ। এ বিষয়ে মামুনুর রশিদ জানান, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন।
মামলার প্রধান আসামি হলেন সিলেট নগরের হাওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও টিলার মালিক মালিক উজ্জামান। অন্য আসামিরা হলেন তারাপুর চা-বাগানের স্টার টি স্টেটের ব্যবস্থাপক ও প্রধান সমন্বয়ক রিংকু চক্রবর্তী, মোহাম্মাদীয়া এলাকার জাবেদ, হালেদ ও জাহাঙ্গীর, দুসকি এলাকার আমির হামজা ও সেলিম, মোহাম্মাদীয়া এলাকার বিল্লাল, দুসকি এলাকার কয়েছ আহমেদ এবং মোহাম্মাদীয়া এলাকার জুবায়ের আহমেদ ও রাজু আহমেদ। মামলায় আরও ছয় থেকে সাতজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৮ সেপ্টেম্বর গোপন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট মহানগর রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলীম উল্লাহ খানের নেতৃত্বে সদর উপজেলার কুমারগাঁও মৌজার ৪৬৬ নম্বর খতিয়ানের ২১৯২ নম্বর দাগের অন্তর্গত দৃশ্যমান ও রেকর্ডীয় টিলা কাটার স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে টিলা কাটা এবং টিলার মাটি অপসারণের প্রমাণ মেলে। তবে তখন ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। টিলাটি মামলার প্রধান আসামি মালিক উজ্জামানের রেকর্ডীয় ভূমি বলে উল্লেখ করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য টিলা কেটেছেন। তাঁরা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে আনুমানিক ২৩৫ ফুট দৈর্ঘ্য, ১১৫ ফুট প্রস্থ, ৪৩ ফুট গড় উচ্চতা এবং ১১ লাখ ৬২ হাজার ৭৫ ঘনফুট দৃশ্যমান টিলারকম ভূমি কেটে মাটি অপসারণ করেছেন। এটা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ধারা ৬ (খ) অনুযায়ী বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর আগে ৭-৮ সেপ্টেম্বর সিলেট সদর উপজেলা ও মহানগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় টিলা কর্তনকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি টিলা কাটায় একজনকে এক সপ্তাহের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া দুজনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।
এদিকে,সিলেটে অবৈধভাবে পাহাড় ও টিলা কাটার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। পরিবেশ রক্ষায় কঠোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। (৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) মঙ্গল বার রাতে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
অফিস আদেশে বলা হয়, সম্প্রতি সিলেট জেলায় পাহাড় ও টিলা কাটার প্রবণতা বেড়েছে। কিছু অসাধু ব্যক্তি এ কাজে জড়িয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছেন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। এসব কারণেই পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ৬(খ) ধারা অনুসারে জেলায় পাহাড় ও টিলা কাটার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো।
জেলা প্রশাসন আরও জানিয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ১৫ ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই আদেশটি সরকারি আদেশ হিসেবে গণ্য হবে বলেও অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
সিলেটে পাহাড় ও টিলা কাটার ওপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এরপরও বিভিন্ন এলাকায় অব্যাহত ভাবে টিলা কাটা চলছিল। এ অবস্থায় প্রশাসন এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

টিলা কাটার অভিযোগে সিলেটে চা বাগানের ম্যানেজারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা পরিবেশ অধিদপ্তরের

মোঃ মুহিবুর রহমান, সিলেট প্রতিনিধি
Update Time : ০৪:২২:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সিলেট সদর উপজেলার কুমারগাঁও মৌজায় ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি টিলা কাটার অভিযোগে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সোমবার সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানায় মামলাটি করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মামুনুর রশিদ। এ বিষয়ে মামুনুর রশিদ জানান, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন।
মামলার প্রধান আসামি হলেন সিলেট নগরের হাওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও টিলার মালিক মালিক উজ্জামান। অন্য আসামিরা হলেন তারাপুর চা-বাগানের স্টার টি স্টেটের ব্যবস্থাপক ও প্রধান সমন্বয়ক রিংকু চক্রবর্তী, মোহাম্মাদীয়া এলাকার জাবেদ, হালেদ ও জাহাঙ্গীর, দুসকি এলাকার আমির হামজা ও সেলিম, মোহাম্মাদীয়া এলাকার বিল্লাল, দুসকি এলাকার কয়েছ আহমেদ এবং মোহাম্মাদীয়া এলাকার জুবায়ের আহমেদ ও রাজু আহমেদ। মামলায় আরও ছয় থেকে সাতজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৮ সেপ্টেম্বর গোপন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট মহানগর রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলীম উল্লাহ খানের নেতৃত্বে সদর উপজেলার কুমারগাঁও মৌজার ৪৬৬ নম্বর খতিয়ানের ২১৯২ নম্বর দাগের অন্তর্গত দৃশ্যমান ও রেকর্ডীয় টিলা কাটার স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে টিলা কাটা এবং টিলার মাটি অপসারণের প্রমাণ মেলে। তবে তখন ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। টিলাটি মামলার প্রধান আসামি মালিক উজ্জামানের রেকর্ডীয় ভূমি বলে উল্লেখ করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য টিলা কেটেছেন। তাঁরা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে আনুমানিক ২৩৫ ফুট দৈর্ঘ্য, ১১৫ ফুট প্রস্থ, ৪৩ ফুট গড় উচ্চতা এবং ১১ লাখ ৬২ হাজার ৭৫ ঘনফুট দৃশ্যমান টিলারকম ভূমি কেটে মাটি অপসারণ করেছেন। এটা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ধারা ৬ (খ) অনুযায়ী বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর আগে ৭-৮ সেপ্টেম্বর সিলেট সদর উপজেলা ও মহানগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় টিলা কর্তনকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি টিলা কাটায় একজনকে এক সপ্তাহের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া দুজনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।
এদিকে,সিলেটে অবৈধভাবে পাহাড় ও টিলা কাটার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। পরিবেশ রক্ষায় কঠোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। (৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) মঙ্গল বার রাতে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
অফিস আদেশে বলা হয়, সম্প্রতি সিলেট জেলায় পাহাড় ও টিলা কাটার প্রবণতা বেড়েছে। কিছু অসাধু ব্যক্তি এ কাজে জড়িয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছেন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। এসব কারণেই পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ৬(খ) ধারা অনুসারে জেলায় পাহাড় ও টিলা কাটার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো।
জেলা প্রশাসন আরও জানিয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ১৫ ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই আদেশটি সরকারি আদেশ হিসেবে গণ্য হবে বলেও অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
সিলেটে পাহাড় ও টিলা কাটার ওপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এরপরও বিভিন্ন এলাকায় অব্যাহত ভাবে টিলা কাটা চলছিল। এ অবস্থায় প্রশাসন এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।