ব্রেকিং নিউজঃ
জবির নতুন ক্যাম্পাস যেন সরকারি লাল ফিতার ফাইল

মো রাকিব হাসান, জবি প্রতিনিধি ;
- Update Time : ০৬:৩৫:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩
- / ২৪২ Time View
সরকারি লাল ফিতার ফাইল গুলো যেমন বছরের পরে বছর একই জায়গায় পরে থাকে তেমনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যেন একটা লাল ফিতার ফাইল হয়ে পরে আছে। মেয়াদ যায় আবার মেয়াদ বৃদ্ধি পায় কিন্তু কাজ আর হয় না।
২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিলো নতুন ক্যাম্পাসের ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের কাজ। কিন্তু নিদিষ্ট মেয়াদে কাজ তো শেষ হয় নি , বরং নিয়েছে হ্যাট্রিক মেয়াদে সময় যে সময় রয়েছে আগামী মাসের জুন মাস পর্যন্ত। তবে এ তিন মেয়াদে নতুন ক্যাম্পাসের কাজ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নতুন ক্যাম্পাসের ‘ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্লানিং ভবন’ নির্মাণের জন্য শুধু টেন্ডার আহ্বানেই পার হয়ে গেছে দেড় বছর। এখনো বাকি রয়েছে ক্যাম্পাসের সব কাজ।
জানা যায় ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জবির নতুন ক্যাম্পাসের ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্লানিং ভবনের প্রথম টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এতে নতুন ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীরের কাজ পাওয়া কিংডম বিল্ডার্স ও ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারস কোম্পানি যৌথভাবে একটি মাত্র টেন্ডার ক্রয় করে। ভবনটি নির্মাণ করার জন্য ৬২ কোটি টাকা দরপত্র দেন কোম্পানিটি।
তবে যাচাই-বাছাইয়ে সে কোম্পানিকে বাদ দেয়া হয়। ৯ মাস পর একই বছরের ১১ ডিসেম্বর পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। এতে আবার ঐ পূর্বের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইন্জিনিয়ার্স কোম্পানি ছাড়া আর কেউ অংশগ্রহণ করেনি। দ্বিতীয়বারও এ কোম্পানিকে বাছাইয়ে বাদ দেয়া হয়। সর্বশেষ গত ৬ জুন তৃতীয়বারের মতো টেন্ডার আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত ৩ জুলাই পর্যন্ত দরপত্র বিক্রি শেষ হয়। এতে আগের দুই টেন্ডারে অংশগ্রহণ করা সেই ‘ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারস কোম্পানিসহ বাইরের আরেকটি কোম্পানি মিলে দুটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র কিনেছে। চলছে বাছাইয়ের কাজ। এভাবে শুধু মাত্র টেন্ডার আহবানেই পার হয়ে গেছে প্রকল্পটির দেড় বছর।
এদিকে টেন্ডার আহ্বান করলে বেশি সাড়া না পাওয়ার কারণ হিসেবে ইন্জিনিয়ারিং দপ্তর ও নানা ঠিকাদার জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালের ডিপিপি অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৮ সালের চেয়ে বর্তমানে রড-সিমেন্টের দাম অনেক বেশি। কাজ করতে গেলে লোকসানের সম্ভাবনা রয়েছে। একারণে ভবনটির টেন্ডারে অনেকের অনিহা।
টেন্ডার আহবানে এতো সময় লাগার বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, নতুন করে পরিকল্পনা পরিচালক নিয়োগ হচ্ছে। আমি দায়িত্বে নেই!
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারি বলেন, প্রথমে একটি কোম্পানি অংশগ্রহণ করেছিল। কি কারণে ওই টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে মনে পড়ছে না। তবে দ্বিতীয় টেন্ডার বাতিলের বিষয়টি মনে আছে। আমরা এরিয়া ঠিক রেখে ৫ তলা ভবনের স্থলে ৬ তলা ভবন করার সিদ্ধান্তে টেন্ডার আহবান করেছিলাম। পরে ডিপিপি অনুসারে ৫ তলা ভবন করতে পুনরায় টেন্ডার আহবানের সিদ্ধান্ত নিই। তৃতীয় টেন্ডার আহবান শেষে যাচাই বাছাই চলছে। মূল্যায়ন করে দ্রুত কাজ শুরু করতে পারব বলে আশা করছি। টেন্ডার আহ্বানে বেশি সাড়া না পাওয়ার বিষয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, এটা ঠিকাদাররা বলতে পারবে। কেন তারা অংশগ্রহণ করতে চায় না। তবে ডিপিপির তুলনায় এখন উপকরণের দাম বেশি। এটা একটা কারণ হতে পারে হয়তো।
এদিকে নতুন ক্যাম্পাস সরেজমিনে দেখা গেছে, সীমানা প্রাচীর, লেক খনন, পুকুর খনন, ঘাট নির্মাণের কাজ একেবারে শেষের পথে। তবে এখনো বাকি রয়েছে নিচু জমি ভরাট করে ভূমি উন্নয়ন, সংযোগ সেতু নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও সারফেস ড্রেন নির্মাণের কাজ। এদিকে নতুন ক্যাম্পাসের নিচু জায়গা ও পুকুর ভরাটের জন্য প্রায় ২০০ কোটি টাকার মতো বৃহৎ কাজের টেন্ডারের জন্য মন্ত্রণালয়ে অনুমতি চেয়েছিলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আগে স্থায়ী প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগের কথা বলা হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্থায়ী পিডি না থাকায় এ কাজটি শুরু করা সম্ভব হয় নি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে পিডি নিয়োগ করা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন : ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক সভা। এ নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা পাশ করা হয়। পরবর্তীতে ক্যাম্পাসটির ২০০ একর জমির ভিতর ১৮৮ একর অধিগ্রহণ শেষ হয়। বাকি ১২ একর জমি সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়েছে। তবে এখনো জমি বুঝিয়ে দেয়নি জেলা প্রশাসন।