ঢাকা ০৫:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে গুলিবর্ষণ, বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো
  • Update Time : ০৭:৩০:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ২২ Time View

রংপুরের পীরগাছায় ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন একরামুল হক নামের এক শিক্ষার্থী। মামলায় আসামির বিরুদ্ধে বিজয় মিছিলে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাধা প্রদান ও গুলিবর্ষণ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে পীরগাছা থানায় মামলাটি এজাহারভুক্ত হয়েছে বলে জানান ওসি সুশান্ত কুমার সরকার। মামলায় বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম রাঙ্গাকে ছাড়াও অজ্ঞাত আরো ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে বাদী একরামুল হক মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সোমবার সারা দেশের ন্যায় রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। ওইদিন বেলা আড়াইটার দিকে স্বৈরশাসক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এই খবর জানতে পেরে ছাত্র-জনতা বিজয় মিছিল বের করে। মিছিলটি পীরগাছা সরকারি কলেজের কাছে থেকে পীরগাছা জে.এন মডেল উচ্চ বিদ্যালয় এর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এসময় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পৌঁছলে আসামি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা তার চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলনের ব্যক্তিগত অফিস রক্ষার্থে বিজয় মিছিলকে উদ্দেশ্য করে চার রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। বাদী তাৎক্ষণিক মাটিতে শুয়ে পড়ায় গুলি তার বাম হাতে লাগায় তিনি গুরুতর রক্তাক্ত হন।

এদিন আরও অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জন লাঠিসোটা ও অস্ত্রশস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিলে বাধা প্রদান করে। সেই বাধা উপেক্ষা করে ছাত্র জনতা মিছিল নিয়ে অগ্রসর হবার চেষ্টা করলে অজ্ঞাতনামাসহ বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা ছাত্র-অনতার উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে, এতে অনেকে আহত হন। ভয়ে ছত্রভঙ্গ হন এবং অনেকে গুলিবর্ষণের সময় প্রাণ বাঁচাতে মাটিতে শুয়ে পড়েন। ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে বিএনপি নেতার গুলিবর্ষণের ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।

বাদী একরামুল হক জানান, ওইদিন ঘটনার পর সে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এতদিন এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে। তবে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় ওই বিএনপি নেতাসহ অজ্ঞাত ১৫-২০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।

এদিকে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেয়া ২২ শিক্ষার্থীর নামে মামলা দায়ের করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা। এই মামলার প্রতিবাদে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পীরগাছা থানার সামনের সড়কে বিক্ষোভসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পীরগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সোমবার বিকেল ৪টার দিকে পীরগাছা বাজার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে দেশ স্বাধীনের নামে ছাত্র-জনতা হাতে লোহার রড, হকস্টিক, লোহার পাইপ, চাইনিজ কুড়াল, হাসুয়া দ্বারা পীরগাছা বাজার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ের তালা ভাঙ্গে। এরপর ১৫ হাজার টাকার কাচের গ্লাস, টেবিল, ৩৫ হাজার টাকার ৪০ টি চেয়ার, ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার ৩২ টি সিসি ক্যামেরায় হামলা করা হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার পীরগাছা থানায় রব্বানি ওরফে বাবু, শামিম মিয়া, অন্তর মিয়া, শাকিল মিয়া, জুয়েল মিয়া ও শাহিন মিয়াসহ ২২ শিক্ষার্থীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে গুলিবর্ষণ, বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো
Update Time : ০৭:৩০:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রংপুরের পীরগাছায় ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন একরামুল হক নামের এক শিক্ষার্থী। মামলায় আসামির বিরুদ্ধে বিজয় মিছিলে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাধা প্রদান ও গুলিবর্ষণ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে পীরগাছা থানায় মামলাটি এজাহারভুক্ত হয়েছে বলে জানান ওসি সুশান্ত কুমার সরকার। মামলায় বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম রাঙ্গাকে ছাড়াও অজ্ঞাত আরো ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে বাদী একরামুল হক মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সোমবার সারা দেশের ন্যায় রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। ওইদিন বেলা আড়াইটার দিকে স্বৈরশাসক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এই খবর জানতে পেরে ছাত্র-জনতা বিজয় মিছিল বের করে। মিছিলটি পীরগাছা সরকারি কলেজের কাছে থেকে পীরগাছা জে.এন মডেল উচ্চ বিদ্যালয় এর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এসময় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পৌঁছলে আসামি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা তার চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলনের ব্যক্তিগত অফিস রক্ষার্থে বিজয় মিছিলকে উদ্দেশ্য করে চার রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। বাদী তাৎক্ষণিক মাটিতে শুয়ে পড়ায় গুলি তার বাম হাতে লাগায় তিনি গুরুতর রক্তাক্ত হন।

এদিন আরও অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জন লাঠিসোটা ও অস্ত্রশস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিলে বাধা প্রদান করে। সেই বাধা উপেক্ষা করে ছাত্র জনতা মিছিল নিয়ে অগ্রসর হবার চেষ্টা করলে অজ্ঞাতনামাসহ বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা ছাত্র-অনতার উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে, এতে অনেকে আহত হন। ভয়ে ছত্রভঙ্গ হন এবং অনেকে গুলিবর্ষণের সময় প্রাণ বাঁচাতে মাটিতে শুয়ে পড়েন। ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে বিএনপি নেতার গুলিবর্ষণের ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।

বাদী একরামুল হক জানান, ওইদিন ঘটনার পর সে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এতদিন এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে। তবে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় ওই বিএনপি নেতাসহ অজ্ঞাত ১৫-২০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।

এদিকে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেয়া ২২ শিক্ষার্থীর নামে মামলা দায়ের করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা। এই মামলার প্রতিবাদে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পীরগাছা থানার সামনের সড়কে বিক্ষোভসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পীরগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সোমবার বিকেল ৪টার দিকে পীরগাছা বাজার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে দেশ স্বাধীনের নামে ছাত্র-জনতা হাতে লোহার রড, হকস্টিক, লোহার পাইপ, চাইনিজ কুড়াল, হাসুয়া দ্বারা পীরগাছা বাজার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ের তালা ভাঙ্গে। এরপর ১৫ হাজার টাকার কাচের গ্লাস, টেবিল, ৩৫ হাজার টাকার ৪০ টি চেয়ার, ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার ৩২ টি সিসি ক্যামেরায় হামলা করা হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার পীরগাছা থানায় রব্বানি ওরফে বাবু, শামিম মিয়া, অন্তর মিয়া, শাকিল মিয়া, জুয়েল মিয়া ও শাহিন মিয়াসহ ২২ শিক্ষার্থীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।