চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা
‘আমার বাবা-দাদার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই’

- Update Time : ০৭:৩৯:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩৬ Time View
রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত রূপলাল রবিদাস ও প্রদীপ লাল রবিদাসকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। এই কর্মসূচি থেকে অবিলম্বে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ দলিত পরিষদের আয়োজনে এই কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে বাংলাদেশ দলিত পরিষদের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন অংশ নিয়ে নিহত প্রদীপ লালের মেয়ে পলাশী রানী বলেন, আমার বাবা যদি সন্ত্রাসী হতো, তাহলে তারা পুলিশের হাতে কেন দিল না? বাবার সঙ্গে আইডি কার্ড সব সময় থাকত। তারা তো জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারত। কেন তারা আমার বাবাকে হত্যা করল? এখন আমাদের কী হবে? আমার বাবা, দাদাকে যারা হত্যা করেছে, আমরা তাদের ফাঁসি চাই।
প্রদীপ লালের ছেলে আপন দাস বলেন, আমার বাবা প্রতিবন্ধী। নিজে চলতে পারে না। আমার বাবার একটাই ভ্যান। সেই ভ্যান নিয়ে দাদুর বাসায় গেছিল। সে কীভাবে চুরি করবে? হত্যার অপবাদ দিয়ে হত্যাকারীদের আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
মানববন্ধনে নিহতদের স্বজনেরা বলেন, রূপলাল ও প্রদীপকে প্রকাশ্যে অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। দ্রুত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। হত্যাকারীদের ভিডিওতে দেখা গেলেও পুলিশ তাদের ধরতে সময় বিলম্ব করায় তারা পালিয়েছে।
শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের হামলা ও নির্যাতন শিকার এবং মিথ্যা অপবাদে গণপিটুনিতে প্রাণ হারাচ্ছে। সরকারকে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং দলিতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
নিহতদের পরিবার জানায়, তারা কখনো চুরি বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। শুধু অপবাদ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত না হলে দলিত সম্প্রদায়ের ওপর এ রকম হামলা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে মিঠাপুকুরের ছড়ান বালুয়া এলাকা থেকে ভাগনি জামাই প্রদীপ লালকে নিয়ে ভ্যানে বাড়ি ফেরার পথে বুড়িরহাট বটতলা মোড়ে চোর সন্দেহে স্থানীয়রা রুপলাল ও প্রদীপকে থামিয়ে তল্লাশি চালায়। এসময় ‘স্পিড ক্যানের’ বোতলে দুর্গন্ধযুক্ত তরল ও কিছু ওষুধ পেয়ে উত্তেজিত জনতা তাদের বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে রুপলালকে মৃত ঘোষণা করা হয় এবং প্রদীপ লাল ভোরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
এ ঘটনায় নিহত রুপলাল দাসের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে গত রোববার (১০ আগস্ট) তারাগঞ্জ থানায় ৫০০-৭০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ওইদিন রাতেই অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ওই চার আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এদিকে ঘটনার সময় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তারাগঞ্জ থানা পুলিশের দুই এসআই ও ছয় কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।ওই দিন ঘটনার সময়ে তারা তারাগঞ্জ থানায় মোবাইল টিমের দায়িত্বে ছিলেন। একইসঙ্গে ওই হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবু জোবায়েরকে তদন্ত কার্যক্রম থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।