চেন্নাইয়ে থালাপতি বিজয়ের সমাবেশে পদপিষ্ট হয়ে ৩৪ জনের মৃত্যু

- Update Time : ১২:১৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৪৬২ Time View
অভিনয় থেকে রাজনীতির মাঠে নামা তামিল চলচ্চিত্রের নায়ক থালাপতি বিজয়ের একটি সমাবেশে প্রচণ্ড ভিড়ে পদদলিত হয়ে শিশুসহ ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় তামিল নাড়ু রাজ্যের কারুর জেলায় ওই রাজনৈতিক সমাবেশে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে লোকজন অপেক্ষা করছিলেন থালাপতি বিজয় আসার জন্য। তামিলাগা ভেত্রি কাজাগাম (টিভিকে) দলের প্রধান থালাপতি বিজয় একেবারে শেষ সময়ে ওই সমাবেশে যোগ দেন। খবর এনডিটিভির।
তামিল নাড়ুর সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে ৫০০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং আরও ৪০০ জনকে হাসপাতালে আনা হচ্ছে।
রাজ্যটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী এম সুব্রানিয়াম কারুরে ছুটে গেছেন। এ ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন কারুর জেলার সচিব সেনথিবালাজিকে পুরো পরিস্থিত পর্যবেক্ষণ করতে বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন সামাজিক মাধ্যম এক্সে তার পোস্টে বলেন, কারুর থেকে উদ্বেগজনক খবর আসছে। পদদলিত হয়ে যারা জ্ঞান হারিয়েছেন তাদের হাসপাতালে নিয়ে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জনসভার স্থানটিতে লোকজন উপচে পড়ছিল এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। এ সময় তামিলাগা ভেত্রি কাজাগাম (টিভি) দলের প্রধান থালাপতি বিজয় তার বক্তব্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বেশ কয়েকজন কর্মী এ সময় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতামূলক বেল বাজান। একপর্যায়ে থালাপতি বিজয় তার বক্তব্য বন্ধ করে দেন এবং প্রচারণার কাজে ব্যবহার করা বাস থেকে পানির বোতল ছুড়তে থাকেন।
হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শনিবার তামিলাগা ভেত্রি কাজাগাম (টিভিকে) প্রধান বিজয় থালাপতির নেতৃত্বে একটি বিশাল রাজনৈতিক সমাবেশে পদপিষ্ট হয়ে শিশুসহ একাধিক কর্মী, সমর্থক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অসুস্থদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
রাজ্যের দুই মন্ত্রীকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। তিনি এই দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। কী কারণে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটলো, তা খতিয়ে দেখতে আলাদা একটি কমিটিও করা হয়েছে। তিনি রাজ্যের সব হাসপাতালকে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।
রাজ্যটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী এম সুব্রানিয়াম কারুরে ছুটে গেছেন। এ ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন কারুর জেলার সচিব সেনথিবালাজিকে পুরো পরিস্থিত পর্যবেক্ষণ করতে বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন সামাজিক মাধ্যম এক্সে তার পোস্টে বলেন, কারুর থেকে উদ্বেগজনক খবর আসছে। পদদলিত হয়ে যারা জ্ঞান হারিয়েছেন তাদের হাসপাতালে নিয়ে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক সমাবেশ করছেন অভিনেতা-রাজনীতিক জোসেফ বিজয় চন্দ্রশেখর। শনিবার তামিলনাড়ুর কারুরে এ রকমই একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিজয়ের বক্তৃতার মধ্যেই দর্শকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। বিশৃঙ্খলায় পদপিষ্টের হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ সময় কয়েকজন চিৎকার করে পুলিশকে সাহায্যের জন্য আর্জি জানান।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বক্তৃতা থামিয়ে দর্শকদের দিকে পানির বোতল ছুড়ে দিতে দেখা যায় বিজয়কে। কিন্তু ততক্ষণে পদপিষ্ট হওয়ার খবরে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়তে থাকে। সভার কাছেই দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসা হয়। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন জানান, রাজ্যের মন্ত্রী আনবিল মহেশ এবং এম সুব্রহ্মণ্যমকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।
তামিলনাড়ুর একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার অনুমান, কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলো। যেখানে বিজয়ের নামাক্কালে তার আগের সমাবেশের পর বক্তব্য রাখার কথা ছিলো। তবে, তার আগমন ছয় ঘন্টারও বেশি বিলম্বিত হয়েছ, ততক্ষণে জনতা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে গিয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন বলেন, কারুর থেকে আসা খবর দুঃখজনক। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়াদের জরুরি চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছি এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী, কালেক্টর এবং প্রাক্তন মন্ত্রী সেন্থিল বালাজিকে সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছি। স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশ কর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী আনবিল মহেশকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সাহায্য করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি জনসাধারণকে পুলিশের সাথে সহযোগিতা করার জন্য আবেদন করছি।
বিজয়ের সমাবেশে এই ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এই মাসের শুরুতে ত্রিচিতে তার প্রথম সমাবেশে বিমানবন্দর থেকে অনুষ্ঠানস্থলে তার কনভয়কে ঘিরে বিপুল জনতা উপস্থিত হয়েছিল, যার ফলে ২০ মিনিটের যাত্রা ছয় ঘণ্টার যানজটে পরিণত হয়েছিল যা শহরকে স্থবির করে দিয়েছিল।
নিরাপত্তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে, পুলিশ টিভিকে সমাবেশের জন্য ২৩টি শর্ত আরোপ করেছিল, যার মধ্যে কনভয়, জনসাধারণের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগদানের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং গর্ভবতী মহিলা, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীদের অনলাইনে অনুষ্ঠানগুলি অনুসরণ করার জন্য পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আদালতগুলোও জননিরাপত্তা এবং অভিনেতা-রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব সম্পর্কে কঠোর পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, যদিও টিভিকে দলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনা হয়েছে। বিজয়ের বারবার আপিল সত্ত্বেও, এই শর্তগুলোর বেশিরভাগই তার সমর্থকরা প্রকাশ্যে অমান্য করেছেন। অনেকে শিশুদের নিয়ে এসেছিলেন।
এই মাসের শুরুতে মাদ্রাজ হাইকোর্ট, সমাবেশের জন্য আরোপিত কঠিন এবং অপূরণীয় শর্তের বিরুদ্ধে টিভিকে-র আবেদনের শুনানি করার সময় প্রশ্ন তুলেছিল যে এমন বিধিনিষেধ সব দলের জন্য প্রযোজ্য হচ্ছে কিনা। বিচারপতি এন সতীশ কুমার ১৩ সেপ্টেম্বর বিজয়ের তিরুচি সমাবেশে বিশৃঙ্খলার কথা উল্লেখ করে বলেন, যদি অপ্রীতিকর কিছু ঘটে, তাহলে কে দায়িত্ব নিত? দলের সভাপতি হিসেবে বিজয়ের উচিত জনতা নিয়ন্ত্রণ করা।
কারুর ট্র্যাজেডি টিভিকে-র জবাবদিহিতা এবং পুলিশের প্রস্তুতি উভয়ের উপরই প্রশ্ন তুলেছে। বিজয়ের আগমনে অযৌক্তিক বিলম্ব কি এই ঘটনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল এবং ইচ্ছাকৃতভাবে কি তার জনসমর্থন প্রদর্শন করা হয়েছিল? প্রিয়জনদের হারানোর শোকে পরিবারগুলো শোকাহত। বিজয় এখনও এই ঘটনার বিষয়ে কোনও বিবৃতি জারি করেননি।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়