বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে
চাঁদা না দেয়ায় গায়েবী মামলার আসামী হয়ে জেলহাজতে মুমূর্ষু রোগী
- Update Time : ০৬:১৫:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪
- / ৫ Time View
রামপুরা থানা পুলিশ ও কুখ্যাত সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের মিশেল বাণিজ্যে গায়েবি মামলায় আসামী হয়ে অনেক নিরীহ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে অমানিসার অন্ধকার। পুলিশ ও চাঁদাবাজদের যৌথ শিকার এমনই এক হতভাগ্য হোটেল ব্যবসায়ীর নাম আলী আজম ভুঁইয়া নাদিম (৪১)। চাঁদাবাজদের দাবীকৃত টাকা পরিশোধ না করায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার অভিযোগ এনে মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজরা চলে যাবার আধা ঘন্টা পর রামপুরা থানার ৩ দারোগা একযোগে এসে বিষয়টি মিটমাট করে ফেলার জন্য ব্যবসায়ীকে চাপ দেন। অন্যথায় তাকে ওসি সাহেবের হুকুমে থানায় যেতে হবে।
আলোচ্য ব্যবসায়ী নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ও নিরাপরাধ দাবি করে বলেন, তার বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। তদুপরী এলাকার মাস্তানদের চাঁদা দেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় তাকে এভাবে হেনস্তা করা ঠিক হচ্ছে না। একপর্যায়ে তাকে রামপুরা থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। গত ৭ নভেম্বর তাকে কোর্টে প্রেরণ করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই বিকাল অনুমান ৫টায় মামলার বাদী বিপ্লব হোসেন (২৭), যিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত। তিনি অফিস শেষে নিজ বাসায় যাবার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে রামপুরা আইডিয়াল স্কুলের সামনে পৌঁছলে ১-৩নং আসামীদের নির্দেশে ৪নং হইতে ৬৬নং এজাহারনামীয় আসামীসহ অন্যান্য অজ্ঞাতনামা আসামীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-জনতাসহ আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি বর্ষণ করলে বাদীর ডান হাতে গুলি লাগে। এই বাদীকে নিয়েই চাঁদাবাজ চক্র ঢালাওভাবে মামলা বাণিজ্যে লিপ্ত হয়। ঐ মামলায় ২১তম আসামী হতভাগ্য আলী আজম ভুঁইয়া নাদিম। তিনি ভারতের চেন্নাই থেকে চিকিৎসা শেষে ৬ নভেম্বর দেশে ফেরেন। পরদিন ৭ নভেম্বর চাঁদাবাজরা চাঁদা না পেয়ে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয় তাকে।
প্রচন্ড হাঁটুর ব্যাথার কারণে অন্যের সাহায্য ছাড়া যিনি চলতে পারেন না, ১২০ কেজি ওজনের এই আসামী obstructive sleep apnea-osa আক্রান্ত হয়ে ঘুমানোর সময় prisna smart auto device এর সাহায্যে যাকে ঘুমাতে হয়। এমন চলাচলের শক্তিহীন নিরীহ হোটেল ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের পর কারাগারের হাসপাতালে থাকতে হয়েছে নাদিমকে। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি মেশিন সরবরাহ করা হয়। কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় আলোচ্য ব্যবসায়ীর হোটেলে সেই সন্ত্রাসী চাঁদাবাজরা তার পরিবারকে গিয়ে বলে, ‘আগেতো ২ লাখ টাকা চাইছিলাম, এখন ১০/২০ লাখ টাকাতেও ছাড়া পাবে না’। চাঁদাবাজদের উৎপাতে হতভাগ্য হোটেল ব্যবসায়ীর পরিবার হোটেলটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এখন ভবিষ্যতে তাদের পরিবারের সদস্যদের ভাগ্যে কি রয়েছে সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানে।
এই প্রতিবেদক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ওসি রামপুরা থানার সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, ‘এজাহারনামীয় আসামী তাই তাকে ধরা হয়েছে। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করে দেখবো’।
জানতে চেয়ে মামলার বাদী ড্রাইভার বিপ্লব হোসেনের ০১৬২১২৩৭৬৬৩ নম্বর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কিবরিয়ার সাথে পুনরায় যোগাযোগ করলে তিনি জানান, মামলার বাদীর সাথে তার কোন যোগাযোগ হয়নি। তিনিও তাকে খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রতিবেদক এজাহারে বর্ণিত বাদীর ঠিকানায় গিয়েও ঐ নামের কোন লোকের সন্ধান পাননি।