ঢাকা ০৬:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চলনবিলে অর্থনীতির চাকা ঘুরতে মূল উপাদান হয়ে উঠেছে শামুক

নাটোর প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৪:৫৬:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ১৫ Time View

শামুক

দেশের বৃহত্তম বিল চলনবিলে প্রাণের চাঞ্চল্যের অন্যতম নীরব উপাদান শামুক। কেননা,প্রতি বছর শীত-গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষায় চলনবিলের অপরিহার্য উপাদান আর অর্থনীতির চাকা ঘোড়ার মূল উপাদান হয়ে উঠেছে নানা আকৃতির শামুক। এই শামুককে ঘিরে পুরো চলনবিল এলাকায় গড়ে উঠেছে হাজারো হাঁস খামার। শীতে অতিথী পাখির প্রধান খাবার এই শামুক।

তাই শামুকের চাহিদার যোগান দিতে এই অঞ্চলে গড়ে উঠেছে হাট। ওই চলনবিল,হাট আর হাঁস খামারসহ মাছের খাবার কেন্দ্রীক কর্মযজ্ঞে চলনবিলে চলছে লাখো প্রাণ। তবে অতিরিক্ত শামুক তোলায় তা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বাধা হবে এমন আশঙ্কাও করছেন পরিবেশ বিদরা। তথ্যমতে,পাবনা,সিরাজগঞ্জ,নাটোর,বগুড়া,নওগাঁ আর রাজশাহীকে স্পর্শ করে আছে চলনবিল।

চলনবিলে এখনও এমন হাজার হাজার একর জমি রয়েছে যা এক ফসলী।আবার দুই ফসলী জমিগুলোই শুধু বর্ষায় নিমজ্জিত হয়না বরং বন্যার বিস্তারে প্রায়ই প্লাবিত হয় অনেক তিন ফসলি জমিও। তাই গ্রীষ্মে চলনবিলের মাঝদিয়ে সাবমার্সিবল রাস্তাগুলো চলাচলের উপযোগী হলেও বর্ষায় চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। তবে সারা বছর পানি থাকে এমন অনেক খাল,ডোবাও রয়েছে চলনবিলজুড়ে।

স্থানীয়রা বলছেন,অবস্থানগত কারণেই প্রাচীনকাল থেকে চলনবিলে সারা বছরই পাওয়া যায় নানা আকমতির শামুক। তাই চলনবিলবাসী পারিবারিক ও আর্থিক কারণে হাঁস পালন করলেও বর্ষার কয়েকমাস ওই অঞ্চলে শত শত অস্থায়ী হাঁসের খামার গড়ে ওঠে।

সরেজমিনে জানা যায়,চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া এবং ,গুরুদাসপুর এলাকায় এমন অস্থায়ী হাঁস খামারের সংখ্যা শতাধিক। আর প্রায় বাড়িতেই পালন করা হয় হাঁস। এই হাঁসগুলোর মধ্যে পাতিহাঁস ও রাজহাঁস ছাড়াও রয়েছে চায়না হাঁস। এমন হাঁসের খামার থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ডিম সরবরাহ হয় নাটোর ছাড়াও বিভিন্ন জেলায়। এতে সারা বছর  প্রতিটি পরিবার অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি পূরণ হয় ওই পরিবারগুলোর ডিম ও মাংসের চাহিদা। আর বর্ষা মৌসুমে মৌসুমী হাঁস খামারের কারণে কর্মসংস্থান হয় শত শত মানুষের।

সরেজমিনে দেখা যায়, চলনবিল বর্ষার পানি কমে যাওয়ায় বিলে পাওয়া যাচ্ছে ছোট-বড়-মাঝারী নানা মাছের পাশাপাশি নানা আকৃতির শামুকও। একই ব্যক্তি মাছ ধরার পাশাপাশি সংগ্রহ করছেন শামুক। ওই মৎস্যজীবিরা জানালেন,তারা মাছের পাশাপাশি ওই শামুকও বিক্রি করেন। ওই আয়,দিয়ে চলে তাদের সংসার।

তারা আরো জানান,চলনবিলের বিভিন্ন হাটে মাছের পাশাপাশি শামুকও বিক্রি হয়। তবে মাছ কেজি হিসাবে আর শামুক বিক্রি হয় বস্তা হিসাবে।

মৎস্যজীবি রবিন জানান,ওই শামুক হা্স ও মাছের খাবার হিসাবে বিক্রি হয়।

গুরুদাসপুর উপজেলার মৎস্যজীবি ফরিদ জানান,উপজেলার বিলশা,পিপলা,বামনবাড়িয়া,হরদমাসহ বিলসংলগ্ন এলাকার মৎস্যজীবিদের পাশাপাশি দরীদ্র মানুষ ওই শামুক সংগ্রহ করে বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। ওই শামুকগুলো ব্যবসায়ীরা কিনে স্থানীয় বিলশা,চা্চকৈড়সহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। তার দাবী,শীতের শুরুতে পানি কম থাকায় ওই শামুক ব্যবসা বেশি হয়। শুধু বিলশা এলাকাতেই প্রতিদিন প্রায় অর্ধ লাখ টাকার শামুক কেনা-বেচা হয়।

সিংড়া উপজেলার বিলদহর এলাকার মৎস্যজীবি ও শামুক সংগ্রহকারী আলামিন জানান,ওই এলাকায় প্রতিজন একদিনে অন্তত ৩-৭ বস্তা শামুক সংগ্রহ করেন। প্রতিবস্তা শামুক প্রায় ২শ টাকায় বিক্রি হয়।

শামুক ব্যবসায়ী আসলাম জানান,চলনবিলের সিংড়া,গুরুদাসপুরসহ বিভিন্ন হাট ও পয়েন্টে গিয়ে তিনি শামুক কেনেন। এরপর মিনিট্রাকে ওই শামুকগুলো নিয়ে বিভিন্ন গোডাউন ও হাটে বিক্রি করেন। প্রতি হাটে ৩-৪ ট্রাক শামুক কেনা-বেচা করেন তিনি। এতে তার ভালোই লাভ হয়।

সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে শামুক কিনতে আসা ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান জানান,তার নিজের হা্সের খামারে প্রতিদিন ১০ বস্তা শামুক লাগে। নিজ খামারের প্রায় ৭শ হাঁসের জন্য শামুক কেনার পাশাপাশি অতিরিক্ত শামুক বিক্রি করে তার ভালো লাভ হয়।

নলডাঙ্গা উপজেলার পরিবেশকর্মী ফজলে রাব্বি জানান,চলনবিলের ক্ষুদ্র জীব খেয়ে শামুক জীবন ধারণ করে।ওই শামুক বিলের জলজ পরিবেশ ও মাটির উর্বরা রক্ষার পাশাপাশি অতিথি পাখিসহ হাঁসের খাবার হিসাবে অতিগুরুত্বপূর্ণ। তাই অতিমাত্রায় যাতে শামুক সংগ্রহের কারণে চলনবিলের বাস্তুসংস্থান নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনিটোরিং প্রয়োজন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর আলী জানান,শামুক-ঝিনুককে প্রাকৃতিক ফিল্টার বলা হয়। এই শামুক-ঝিনুকের কারণে মাটির উর্বরতাশক্তি ছাড়াও মাটির ক্যালসিয়াম পূরণ হয়। আবার ওই শামুকের কারণে হাজারো প্রাণীর খাবার সংস্থান হয়। ওই শামুক কেন্দ্রীক হাঁসের খামার করে শত শত পরিবারের জীবিকা চলে। তবে অতিমাত্রায় শামুক বা ঝিনুক যাতে কেউ উত্তোলন করতে না পারে সে ব্যপারে তারা সজাগ রয়েছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

চলনবিলে অর্থনীতির চাকা ঘুরতে মূল উপাদান হয়ে উঠেছে শামুক

নাটোর প্রতিনিধি
Update Time : ০৪:৫৬:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫

দেশের বৃহত্তম বিল চলনবিলে প্রাণের চাঞ্চল্যের অন্যতম নীরব উপাদান শামুক। কেননা,প্রতি বছর শীত-গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষায় চলনবিলের অপরিহার্য উপাদান আর অর্থনীতির চাকা ঘোড়ার মূল উপাদান হয়ে উঠেছে নানা আকৃতির শামুক। এই শামুককে ঘিরে পুরো চলনবিল এলাকায় গড়ে উঠেছে হাজারো হাঁস খামার। শীতে অতিথী পাখির প্রধান খাবার এই শামুক।

তাই শামুকের চাহিদার যোগান দিতে এই অঞ্চলে গড়ে উঠেছে হাট। ওই চলনবিল,হাট আর হাঁস খামারসহ মাছের খাবার কেন্দ্রীক কর্মযজ্ঞে চলনবিলে চলছে লাখো প্রাণ। তবে অতিরিক্ত শামুক তোলায় তা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বাধা হবে এমন আশঙ্কাও করছেন পরিবেশ বিদরা। তথ্যমতে,পাবনা,সিরাজগঞ্জ,নাটোর,বগুড়া,নওগাঁ আর রাজশাহীকে স্পর্শ করে আছে চলনবিল।

চলনবিলে এখনও এমন হাজার হাজার একর জমি রয়েছে যা এক ফসলী।আবার দুই ফসলী জমিগুলোই শুধু বর্ষায় নিমজ্জিত হয়না বরং বন্যার বিস্তারে প্রায়ই প্লাবিত হয় অনেক তিন ফসলি জমিও। তাই গ্রীষ্মে চলনবিলের মাঝদিয়ে সাবমার্সিবল রাস্তাগুলো চলাচলের উপযোগী হলেও বর্ষায় চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। তবে সারা বছর পানি থাকে এমন অনেক খাল,ডোবাও রয়েছে চলনবিলজুড়ে।

স্থানীয়রা বলছেন,অবস্থানগত কারণেই প্রাচীনকাল থেকে চলনবিলে সারা বছরই পাওয়া যায় নানা আকমতির শামুক। তাই চলনবিলবাসী পারিবারিক ও আর্থিক কারণে হাঁস পালন করলেও বর্ষার কয়েকমাস ওই অঞ্চলে শত শত অস্থায়ী হাঁসের খামার গড়ে ওঠে।

সরেজমিনে জানা যায়,চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া এবং ,গুরুদাসপুর এলাকায় এমন অস্থায়ী হাঁস খামারের সংখ্যা শতাধিক। আর প্রায় বাড়িতেই পালন করা হয় হাঁস। এই হাঁসগুলোর মধ্যে পাতিহাঁস ও রাজহাঁস ছাড়াও রয়েছে চায়না হাঁস। এমন হাঁসের খামার থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ডিম সরবরাহ হয় নাটোর ছাড়াও বিভিন্ন জেলায়। এতে সারা বছর  প্রতিটি পরিবার অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি পূরণ হয় ওই পরিবারগুলোর ডিম ও মাংসের চাহিদা। আর বর্ষা মৌসুমে মৌসুমী হাঁস খামারের কারণে কর্মসংস্থান হয় শত শত মানুষের।

সরেজমিনে দেখা যায়, চলনবিল বর্ষার পানি কমে যাওয়ায় বিলে পাওয়া যাচ্ছে ছোট-বড়-মাঝারী নানা মাছের পাশাপাশি নানা আকৃতির শামুকও। একই ব্যক্তি মাছ ধরার পাশাপাশি সংগ্রহ করছেন শামুক। ওই মৎস্যজীবিরা জানালেন,তারা মাছের পাশাপাশি ওই শামুকও বিক্রি করেন। ওই আয়,দিয়ে চলে তাদের সংসার।

তারা আরো জানান,চলনবিলের বিভিন্ন হাটে মাছের পাশাপাশি শামুকও বিক্রি হয়। তবে মাছ কেজি হিসাবে আর শামুক বিক্রি হয় বস্তা হিসাবে।

মৎস্যজীবি রবিন জানান,ওই শামুক হা্স ও মাছের খাবার হিসাবে বিক্রি হয়।

গুরুদাসপুর উপজেলার মৎস্যজীবি ফরিদ জানান,উপজেলার বিলশা,পিপলা,বামনবাড়িয়া,হরদমাসহ বিলসংলগ্ন এলাকার মৎস্যজীবিদের পাশাপাশি দরীদ্র মানুষ ওই শামুক সংগ্রহ করে বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। ওই শামুকগুলো ব্যবসায়ীরা কিনে স্থানীয় বিলশা,চা্চকৈড়সহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। তার দাবী,শীতের শুরুতে পানি কম থাকায় ওই শামুক ব্যবসা বেশি হয়। শুধু বিলশা এলাকাতেই প্রতিদিন প্রায় অর্ধ লাখ টাকার শামুক কেনা-বেচা হয়।

সিংড়া উপজেলার বিলদহর এলাকার মৎস্যজীবি ও শামুক সংগ্রহকারী আলামিন জানান,ওই এলাকায় প্রতিজন একদিনে অন্তত ৩-৭ বস্তা শামুক সংগ্রহ করেন। প্রতিবস্তা শামুক প্রায় ২শ টাকায় বিক্রি হয়।

শামুক ব্যবসায়ী আসলাম জানান,চলনবিলের সিংড়া,গুরুদাসপুরসহ বিভিন্ন হাট ও পয়েন্টে গিয়ে তিনি শামুক কেনেন। এরপর মিনিট্রাকে ওই শামুকগুলো নিয়ে বিভিন্ন গোডাউন ও হাটে বিক্রি করেন। প্রতি হাটে ৩-৪ ট্রাক শামুক কেনা-বেচা করেন তিনি। এতে তার ভালোই লাভ হয়।

সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে শামুক কিনতে আসা ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান জানান,তার নিজের হা্সের খামারে প্রতিদিন ১০ বস্তা শামুক লাগে। নিজ খামারের প্রায় ৭শ হাঁসের জন্য শামুক কেনার পাশাপাশি অতিরিক্ত শামুক বিক্রি করে তার ভালো লাভ হয়।

নলডাঙ্গা উপজেলার পরিবেশকর্মী ফজলে রাব্বি জানান,চলনবিলের ক্ষুদ্র জীব খেয়ে শামুক জীবন ধারণ করে।ওই শামুক বিলের জলজ পরিবেশ ও মাটির উর্বরা রক্ষার পাশাপাশি অতিথি পাখিসহ হাঁসের খাবার হিসাবে অতিগুরুত্বপূর্ণ। তাই অতিমাত্রায় যাতে শামুক সংগ্রহের কারণে চলনবিলের বাস্তুসংস্থান নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনিটোরিং প্রয়োজন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর আলী জানান,শামুক-ঝিনুককে প্রাকৃতিক ফিল্টার বলা হয়। এই শামুক-ঝিনুকের কারণে মাটির উর্বরতাশক্তি ছাড়াও মাটির ক্যালসিয়াম পূরণ হয়। আবার ওই শামুকের কারণে হাজারো প্রাণীর খাবার সংস্থান হয়। ওই শামুক কেন্দ্রীক হাঁসের খামার করে শত শত পরিবারের জীবিকা চলে। তবে অতিমাত্রায় শামুক বা ঝিনুক যাতে কেউ উত্তোলন করতে না পারে সে ব্যপারে তারা সজাগ রয়েছেন।