গাজায় নারীদের জন্য নেতানিয়াহুর ‘মায়াকান্না’

- Update Time : ০৫:১০:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
- / ৩৮ Time View
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় নারীদের অধিকার নিয়ে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়নার মুখে থাকা এই নেতা সম্প্রতি এক পডকাস্টে এ কথা বলেন।
গাজা ধ্বংসে অঙ্গীকারাবদ্ধ নেতানিয়াহুর মুখে এমন ‘সহানুভূতির’ বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। ফুল সেন্ড পডকাস্টে দেওয়া ওই বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘গাজার নারীরা সম্পত্তি, তাদের কোনো অধিকার নেই, কোনো মূল্য নেই। তারা সম্পূর্ণভাবে দমন-পীড়নের শিকার। ঈশ্বর না করুন, যদি কেউ কথিত কোনো অপরাধ করে বসেন, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘তরুণ-তরুণীরা প্রগতিশীল মূল্যবোধের নামে হামাসকে সমর্থন করছে। তারা বুঝতে পারছে না—কী ভালো, আর কী মন্দ। বাইবেলের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন, “তাদের কি চোখ নেই দেখতে, কান নেই শুনতে?”’
নেতানিয়াহু যাঁদের ‘মুক্তির’ কথা বলছেন, সেই ফিলিস্তিনি নারীদেরই মৌলিক অধিকার—নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের সুযোগ—দীর্ঘদিন ধরে কেড়ে নিচ্ছে ইসরায়েল। গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বোমাবর্ষণ, অবরোধ ও দমননীতি হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে—যার মূল পরিকল্পক স্বয়ং নেতানিয়াহু।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) জানায়, গাজায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন। শুধু রাফা অঞ্চল থেকেই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১৮ হাজার ৫০০ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজার দুই-তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়েছে। এখন মাত্র আটটি হাসপাতাল আংশিকভাবে মাতৃত্বসেবা দিতে পারছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রায় অনুপস্থিত।
এই পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। একজন লিখেছেন, ‘ওদের মুক্তি দিচ্ছি বলে বোমা মারছি—কী ভণ্ডামি!’ আরেকজন বলেন, ‘গাজার নারীরা শিক্ষিত, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী ও শিক্ষক। শুধু হিজাব পরেন বলে তাদের অবদমিত হিসেবে চিত্রায়ণ করা অবমাননাকর।’ কেউ লিখেছেন, ‘নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার সময় আপনি তাদের ঘরবাড়িতে বোমা ফেলছেন, সন্তানদের না খাইয়ে মারছেন। নারীদের মেরে মুক্তি দেওয়া যায় না।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, নেতানিয়াহুর বক্তব্য শুধু ভণ্ডামি নয়, বরং ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা। তাদের মতে, ফিলিস্তিনি নারীরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও প্রতিরোধ আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন। তাদের শুধুই ‘ভুক্তভোগী’ হিসেবে উপস্থাপন করা বাস্তবতাকে আড়াল করে এবং তাদের সংগ্রামের ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা।
সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামাস যাদের দমন করছে, তাদের কেন হামাসের সমর্থক বলা হচ্ছে? তাদের তো চলে যাওয়ার সুযোগ, স্বাধীনতা ও বাঁচার অধিকার দেওয়া উচিত।’ অথচ বাস্তবতা হলো, সেই ‘চলে যাওয়ার পথ’ নিজেই বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়