ঢাকা ১২:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি, সাড়া দিয়েছেন কথাবার্তায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১১:৩৩:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ২০ Time View

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। গতকাল রোববার তিনি হাসপাতালের শয্যায় অল্প নড়াচড়া করতে পেরেছেন, কথাবার্তায় সাড়াও দিয়েছেন। চিকিৎসক ও বিএনপির নেতাদের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে তাঁরা বলেছেন, গত দুই দিনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থায় কিছুটা উন্নতি থাকলেও এখনো তিনি ঝুঁকিমুক্ত অবস্থায় পৌঁছাননি। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

ওই সূত্রগুলো বলছে, পরিবারের চিন্তা থাকলেও গতকাল পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিদেশে নিতে হলে দীর্ঘ ফ্লাইট, যাত্রাপথের শারীরিক চাপ এবং পরিবেশগত পরিবর্তন বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এখনো সেই ঝুঁকি নেওয়ার মতো পর্যায়ে যাননি খালেদা জিয়া। এই মুহূর্তে চিকিৎসকদের অগ্রাধিকার দেশেই সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল অবস্থায় ফেরানো।

আরও জানা গেছে, গতকালও খালেদা জিয়ার কিডনির ডায়ালাইসিস হয়েছে। তবে তিনি এখনো স্বাভাবিক খাবার খেতে পারছেন না বা তাঁর শারীরিক অবস্থা সে পর্যায়ে পৌঁছায়নি। গুরুতর অসুস্থ হয়ে এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে শয্যাশায়ী খালেদা জিয়া। তাঁর লিভারজনিত সংকট, কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস, শ্বাসকষ্টসহ একাধিক শারীরিক জটিলতা একসঙ্গে দেখা দেওয়ায় তাঁর চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক দিনে অবস্থার অবনতি হওয়ায় আইসিইউ সমমানের হাইডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) তাঁকে রাখা হয়েছে।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার কিডনিতে জটিলতা, শরীরে পানি জমা ও শ্বাসকষ্ট—সব কটিকে সমন্বয় করে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। চিকিৎসকেরা আরও বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে স্থিতিশীল আছে। তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বিএনপির নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন গত শনিবার রাতে এক ব্রিফিংয়ে সে রকম ইঙ্গিত দেন। এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসকেরা যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, সেটা খালেদা জিয়া গ্রহণ করতে পারছেন। এখন চিকিৎসকদের লক্ষ্য, বিদেশে উন্নত চিকিৎসা সহায়তার জন্য কত দ্রুত তাঁকে বিমানযাত্রার ধকল সইবার মতো অবস্থায় নেওয়া যায়। তবে এখনো তাঁর শারীরিক অবস্থা বিদেশে স্থানান্তরের মতো স্থিতিশীল হয়নি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র গতকাল জানিয়েছে, এই মুহূর্তে পরিবারের মূল লক্ষ্য খালেদা জিয়াকে বাইরে নেওয়া। বিষয়টি স্বয়ং তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমান দেখছেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বিএনপির নেতারা প্রতিদিনই খালেদা জিয়ার খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে হাসপাতালের সামনে নেতা-কর্মীদের ভিড় না করতে দলের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।

‘বিজয় মশাল রোড শো’ স্থগিত

বিজয়ের মাস উপলক্ষে ১ ডিসেম্বর থেকে ‘বিজয় মশাল রোড শো’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে ঘোষিত কর্মসূচি গতকাল স্থগিত করেছে দলটি। গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে জীবন-সংগ্রামে রয়েছেন। তাঁর এই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বিএনপি কর্মসূচিটি স্থগিত রাখছে। রিজভী আরও বলেন, ‘আমরা সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করছি প্রতিনিয়ত প্রতি মুহূর্ত। শুধু বিএনপির নেতা-কর্মী নয়, দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সংগঠন বা সমর্থক, তাঁরাও দোয়া করছেন।’

বিজয় দিবস উপলক্ষে গত শনিবার সারা দেশে বিজয় মশাল রোড শোর পক্ষকালব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে আজ ১ ডিসেম্বর এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল। বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ ঘুরে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শেষ হতো। কিন্তু এক দিনের মাথায় সেই কর্মসূচি স্থগিত করল বিএনপি।

২৩ নভেম্বর রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটজনক’। পরদিন তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা নেই খালেদা জিয়ার।

বিএনপির বিজয় মশাল রোড শো স্থগিত করার বিষয়ে গতকাল দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেও খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার কথা বলেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমি আজকে সর্বশেষ যতটুকু শুনেছি, তাঁর (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে এবং তাঁর বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে মেডিকেল বোর্ড এখনো কোনো পরামর্শ দেয়নি।’

Please Share This Post in Your Social Media

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি, সাড়া দিয়েছেন কথাবার্তায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ১১:৩৩:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। গতকাল রোববার তিনি হাসপাতালের শয্যায় অল্প নড়াচড়া করতে পেরেছেন, কথাবার্তায় সাড়াও দিয়েছেন। চিকিৎসক ও বিএনপির নেতাদের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে তাঁরা বলেছেন, গত দুই দিনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থায় কিছুটা উন্নতি থাকলেও এখনো তিনি ঝুঁকিমুক্ত অবস্থায় পৌঁছাননি। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

ওই সূত্রগুলো বলছে, পরিবারের চিন্তা থাকলেও গতকাল পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিদেশে নিতে হলে দীর্ঘ ফ্লাইট, যাত্রাপথের শারীরিক চাপ এবং পরিবেশগত পরিবর্তন বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এখনো সেই ঝুঁকি নেওয়ার মতো পর্যায়ে যাননি খালেদা জিয়া। এই মুহূর্তে চিকিৎসকদের অগ্রাধিকার দেশেই সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল অবস্থায় ফেরানো।

আরও জানা গেছে, গতকালও খালেদা জিয়ার কিডনির ডায়ালাইসিস হয়েছে। তবে তিনি এখনো স্বাভাবিক খাবার খেতে পারছেন না বা তাঁর শারীরিক অবস্থা সে পর্যায়ে পৌঁছায়নি। গুরুতর অসুস্থ হয়ে এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে শয্যাশায়ী খালেদা জিয়া। তাঁর লিভারজনিত সংকট, কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস, শ্বাসকষ্টসহ একাধিক শারীরিক জটিলতা একসঙ্গে দেখা দেওয়ায় তাঁর চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক দিনে অবস্থার অবনতি হওয়ায় আইসিইউ সমমানের হাইডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) তাঁকে রাখা হয়েছে।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার কিডনিতে জটিলতা, শরীরে পানি জমা ও শ্বাসকষ্ট—সব কটিকে সমন্বয় করে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। চিকিৎসকেরা আরও বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে স্থিতিশীল আছে। তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বিএনপির নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন গত শনিবার রাতে এক ব্রিফিংয়ে সে রকম ইঙ্গিত দেন। এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসকেরা যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, সেটা খালেদা জিয়া গ্রহণ করতে পারছেন। এখন চিকিৎসকদের লক্ষ্য, বিদেশে উন্নত চিকিৎসা সহায়তার জন্য কত দ্রুত তাঁকে বিমানযাত্রার ধকল সইবার মতো অবস্থায় নেওয়া যায়। তবে এখনো তাঁর শারীরিক অবস্থা বিদেশে স্থানান্তরের মতো স্থিতিশীল হয়নি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র গতকাল জানিয়েছে, এই মুহূর্তে পরিবারের মূল লক্ষ্য খালেদা জিয়াকে বাইরে নেওয়া। বিষয়টি স্বয়ং তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমান দেখছেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বিএনপির নেতারা প্রতিদিনই খালেদা জিয়ার খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে হাসপাতালের সামনে নেতা-কর্মীদের ভিড় না করতে দলের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।

‘বিজয় মশাল রোড শো’ স্থগিত

বিজয়ের মাস উপলক্ষে ১ ডিসেম্বর থেকে ‘বিজয় মশাল রোড শো’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে ঘোষিত কর্মসূচি গতকাল স্থগিত করেছে দলটি। গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে জীবন-সংগ্রামে রয়েছেন। তাঁর এই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বিএনপি কর্মসূচিটি স্থগিত রাখছে। রিজভী আরও বলেন, ‘আমরা সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করছি প্রতিনিয়ত প্রতি মুহূর্ত। শুধু বিএনপির নেতা-কর্মী নয়, দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সংগঠন বা সমর্থক, তাঁরাও দোয়া করছেন।’

বিজয় দিবস উপলক্ষে গত শনিবার সারা দেশে বিজয় মশাল রোড শোর পক্ষকালব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে আজ ১ ডিসেম্বর এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল। বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ ঘুরে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শেষ হতো। কিন্তু এক দিনের মাথায় সেই কর্মসূচি স্থগিত করল বিএনপি।

২৩ নভেম্বর রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটজনক’। পরদিন তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা নেই খালেদা জিয়ার।

বিএনপির বিজয় মশাল রোড শো স্থগিত করার বিষয়ে গতকাল দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেও খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার কথা বলেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমি আজকে সর্বশেষ যতটুকু শুনেছি, তাঁর (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে এবং তাঁর বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে মেডিকেল বোর্ড এখনো কোনো পরামর্শ দেয়নি।’