কুবিতে র্যাগিংয়ের অভিযোগ অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ; তদন্ত কমিটি গঠন

- Update Time : ০৪:৩০:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
- / ৭৫ Time View
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে ইমিডিয়েট সিনিয়র ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। এসময় শিক্ষার্থীদের রুমের দরজা বন্ধ করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং গায়ে হাত তোলার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
গতকাল বুধবার (২ জুলাই) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধানের কাছে এই অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল (বুধবার) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগে প্রথমদিনের মতো ক্লাস করতে গেলে ক্লাস শেষে ইমিডিয়েট সিনিয়র শিক্ষার্থীরা (২০২৩–২৪ বর্ষ) তাদের ক্লাসরুমে ডুকে এবং রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর ক্রমান্বয়ে পরিচয়পর্ব আর ম্যানার শেখানোর নামে শুরু হয় র্যাগিং সাথে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি। শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয় শ্রেণিকক্ষের ব্রাঞ্চের উপরে।
এসময় ঠিকঠাকভাবে পরিচয় দিতে না পারলে ভুক্তিভোগী ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় মারে এবং ২০২৩-২৪ বর্ষের এক শিক্ষার্থী। ‘আমরা তোদের বাপ লাগি’ বলে হুমকিও দিয়েছেন বলে যায়। এছাড়া শার্টের হাতা ভাঁজ করা কেন? বলে এক শিক্ষার্থীর ডায়ালাইসিস করা হাতে হ্যাঁচকা টান দিলে তার হাতের ক্যানুলা খুলে যায়, যা তার স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ২০২৩-২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অস্বীকার করেন।
অভিযুক্ত ব্যাচের সিআর ইরফান অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা শুধুমাত্র জুনিয়রদের ক্রেস্ট দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে র্যাগিংয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুধু ডায়ালোসিস এর সমস্যা যে ছেলের ও রুমে ডুকার সময় একজনের সাথে ধাক্কা লাগে, তখন বিষয়টি ঘটে গিয়েছে। এছাড়া অভিযোগগুলো মিথ্যা। এমন কিছু ঘটেনি, আমি পুরোটা সময় সেখানে ছিলাম।”
একই ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী রাকিব ইসলাম বলেন, ‘ওরিয়েন্টেশনের দিন কিছু ক্রেস্ট দেওয়া বাকি ছিল, আমরা সেগুলো দিতে গিয়েছিলাম। এসময় আমাদের ব্যাচের একজন দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় জুনিয়রদের একজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তখন আমাদের ব্যাচের ওয়াহিদ সেই ছাত্রের শার্টের হাতা ফোল্ড করা দেখে নামিয়ে দিতে বলে এবং নিজেই তা নামাতে যায়। এতে করে ওই ছাত্রের হাতে লাগানো ক্যানুলা খুলে যায়।’
রাগিংয়ের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে রাকিব বলেন, ‘আমি মাত্র পাঁচ-দশ মিনিটের মতো ক্লাসে ছিলাম। আমার জানা মতে, সেখানে কোনো র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি।’
তবে ভুক্তভোগী ব্যাচের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘উনারা (ইমিডিয়েট সিনিয়র) পরিচয় পর্বের নামে আমাদেরকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে উনাদের ব্যাচের শয়ন নামের একজন আমাদের একজনের গায়ে হাত তুলে। এটা দেখে আমরা ভয় পেয়ে যাই।’
লিখিত অভিযোগ করেননি কেন? এমন প্রশ্নে জানান, এ ঘটনা নিয়ে আমরা শুরুতে লিখিত অভিযোগ করব বলে সিদ্ধান্ত নেই। পরে ডিপার্টমেন্টের কিছু সিনিয়র এসে বিষয়টি থামানোর চেষ্টা করেন। এখন তো প্রশাসনও জেনে গিয়েছে।
থাপ্পড় মারার অভিযোগে অভিযুক্ত শয়ন দাসের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে উনার সাথে সরাসরি দেখা করতে গেলে উনি প্রতিবেদকের সাথে কথা বলবেন না বলে এড়িয়ে গিয়ে অন্যত্র চলে যান।
আরেক অভিযুক্ত ওয়াহিদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র পরামর্শক প্রভাষক আফজাল হোসাইন বলেন, ‘র্যাগিংয়ের ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী ও তার বড় ভাই আমাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কক্ষে এসে ঘটনার বিস্তারিত জানান। সে সময় আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাসরুমে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি এবং সিআরদের (ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ) দায়িত্ব দিই অভিযুক্তদের নাম জানানোর জন্য। যদিও তারা তাৎক্ষণিকভাবে নাম দেয়নি, তবুও আমরা নিজেরা অনুসন্ধান করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রশাসন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’
বিভাগীয় প্রধান ড. মেহের নিগার ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে কথা বলবে বলে ফোন রেখে দেন।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসন থেকে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আছেন ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, প্রক্টর আবদুল হাকিম, মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম এবং সহকারী রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হাকিম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছি। উনারা আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিবেন। আপাতত অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।’
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়