ঢাকা ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এলেঙ্গাতে রাধাগোবিন্দ রাসলীলা মন্দিরের ১১টি প্রতিমা ভাঙচুর

কালিহাতী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  • Update Time : ১০:৫৭:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৩৮ Time View

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা এলাকায় শতবর্ষী রাধাগোবিন্দ রাসলীলা মন্দিরে ১১টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সকালে স্থানীয়রা মন্দিরে গিয়ে ভাঙা প্রতিমাগুলো দেখতে পান। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে, তবে এখনো কেউ দায় স্বীকার করেনি বা গ্রেপ্তার হয়নি। বিকেল পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগও জমা হয়নি বলে জানায় পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলেঙ্গার ঐতিহ্যবাহী রাধাগোবিন্দ রাসলীলা মন্দিরে প্রতি বছর বড় আকারে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছরও গত মঙ্গলবার বার্ষিক পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

শনিবার সকালে প্রতিদিনের মতো স্থানীয়রা ফুল তুলতে ও প্রার্থনা করতে মন্দিরে যান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্বর্গীয় খুশী মোহন দাশের স্ত্রী দুলালী রাণী মন্দিরে প্রবেশ করে প্রতিমাগুলো ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান।

তিনি জানান, “সকাল পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। অনেকেই ফুলজল দিয়ে প্রণাম করে গেছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এসে দেখি প্রতিটি প্রতিমার ঘাড় ভাঙা। আমি চিৎকার করলে লোকজন ছুটে আসে।”

খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও তদন্ত শুরু করে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাতে বা ভোরে দুর্বৃত্তরা এই ভাঙচুর চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আশপাশে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় অপরাধীদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

তারা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। এমন ঘটনা ধর্মীয় সম্প্রীতিকে নষ্ট করতে পারে। দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”

মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য ও এলেঙ্গা জিতেন্দ্র বালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র দাশ বলেন, “এটি প্রায় দুই শত বছরের পুরোনো মন্দির। এখানে গ্রামবাসীরা মিলে পূজা করে আসছে। আজ সকালে স্কুলে যাওয়ার পর খবর পাই প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে। প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছে। আমরা অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের ঘটনা আমাদের গভীরভাবে ব্যথিত করেছে। আমরা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।”

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সদস্য সচিব প্রবাল কমল ভট্টাচার্য বলেন, “সকালে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। দেখা যায়, মন্দিরের বেশ কিছু প্রতিমা ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনা। প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে—আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছি।”

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। সার্কেল এসপি ও কালিহাতী থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, দুর্বৃত্তরা রাতের কোনো এক সময় মন্দিরে ঢুকে প্রতিমাগুলো ভাঙচুর করেছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এ ঘটনায় এলেঙ্গা ও আশপাশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, “এমন ঘটনায় আমাদের নিরাপত্তাহীন লাগছে। মন্দিরে যেন নিয়মিত পাহারার ব্যবস্থা ও সিসিটিভি স্থাপন করা হয়।”

তারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন—মন্দিরসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বাড়াতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার।

শতবর্ষী রাধাগোবিন্দ রাসলীলা মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও শোক বিরাজ করছে। প্রশাসন ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

এলেঙ্গাতে রাধাগোবিন্দ রাসলীলা মন্দিরের ১১টি প্রতিমা ভাঙচুর

কালিহাতী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
Update Time : ১০:৫৭:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা এলাকায় শতবর্ষী রাধাগোবিন্দ রাসলীলা মন্দিরে ১১টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সকালে স্থানীয়রা মন্দিরে গিয়ে ভাঙা প্রতিমাগুলো দেখতে পান। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে, তবে এখনো কেউ দায় স্বীকার করেনি বা গ্রেপ্তার হয়নি। বিকেল পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগও জমা হয়নি বলে জানায় পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলেঙ্গার ঐতিহ্যবাহী রাধাগোবিন্দ রাসলীলা মন্দিরে প্রতি বছর বড় আকারে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছরও গত মঙ্গলবার বার্ষিক পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

শনিবার সকালে প্রতিদিনের মতো স্থানীয়রা ফুল তুলতে ও প্রার্থনা করতে মন্দিরে যান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্বর্গীয় খুশী মোহন দাশের স্ত্রী দুলালী রাণী মন্দিরে প্রবেশ করে প্রতিমাগুলো ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান।

তিনি জানান, “সকাল পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। অনেকেই ফুলজল দিয়ে প্রণাম করে গেছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এসে দেখি প্রতিটি প্রতিমার ঘাড় ভাঙা। আমি চিৎকার করলে লোকজন ছুটে আসে।”

খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও তদন্ত শুরু করে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাতে বা ভোরে দুর্বৃত্তরা এই ভাঙচুর চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আশপাশে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় অপরাধীদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

তারা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। এমন ঘটনা ধর্মীয় সম্প্রীতিকে নষ্ট করতে পারে। দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”

মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য ও এলেঙ্গা জিতেন্দ্র বালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র দাশ বলেন, “এটি প্রায় দুই শত বছরের পুরোনো মন্দির। এখানে গ্রামবাসীরা মিলে পূজা করে আসছে। আজ সকালে স্কুলে যাওয়ার পর খবর পাই প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে। প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছে। আমরা অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের ঘটনা আমাদের গভীরভাবে ব্যথিত করেছে। আমরা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।”

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সদস্য সচিব প্রবাল কমল ভট্টাচার্য বলেন, “সকালে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। দেখা যায়, মন্দিরের বেশ কিছু প্রতিমা ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনা। প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে—আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছি।”

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। সার্কেল এসপি ও কালিহাতী থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, দুর্বৃত্তরা রাতের কোনো এক সময় মন্দিরে ঢুকে প্রতিমাগুলো ভাঙচুর করেছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এ ঘটনায় এলেঙ্গা ও আশপাশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, “এমন ঘটনায় আমাদের নিরাপত্তাহীন লাগছে। মন্দিরে যেন নিয়মিত পাহারার ব্যবস্থা ও সিসিটিভি স্থাপন করা হয়।”

তারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন—মন্দিরসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বাড়াতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার।

শতবর্ষী রাধাগোবিন্দ রাসলীলা মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও শোক বিরাজ করছে। প্রশাসন ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছে।