ঢাকা ০৫:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
সেনাপ্রধানের সাথে তুরস্কের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এর সেক্রেটারির সাক্ষাৎ শিক্ষার্থীদের ‘লাথি-ঘুষি মারা’ সেই ওসি বদলি মামলা জট কমানো, ন্যায় বিচার নিশ্চিত ও পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত আমেরিকা শুল্ক না কমালে দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব প্রভাব পড়বে: বাণিজ্য সচিব  টানা দুই বছর ইসরায়েলে হামলা চালাতে সক্ষম ইরান নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে ইসি এখনো অবগত নয়: সিইসি ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ এর নির্মাতা ও অভিনেতাসহ ৬ জনকে লিগ্যাল নোটিশ সাপের কামড়ে চিকিৎসার অভাবে বাড়ছে প্রাণহানি; দেশে নেই নিজস্ব অ্যান্টিভেনম উৎপাদন স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি,কমপ্লিট শাটডাউনের হুঁশিয়ারি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবার সংকট

উচ্ছেদের নোটিশ বারবার হলেও উচ্ছেদ হচ্ছে না পিলার: সম্পত্তি শাখার কালক্ষেপন

কামরুল হাসান টিটু, রংপৃর ব‌্যুরো
  • Update Time : ০৯:১১:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
  • / ৭৪ Time View

নকশাবহির্ভূত নির্মাণাধীন ভবনের পিলার উচ্ছেদের জন্য একাধিকবার নোটিশ করা হলেও কোন এক অদৃশ্য কারনে উচ্ছেদ হচ্ছে না সেই নির্মাণাধীন পিলার। এদিকে একাধিক বিভাগের মাধ্যমে তদন্ত এবং বারবার নোটিশ দিয়ে কালক্ষেপনের অভিযোগ উঠেছে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি শাখার বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর নগরীর লালবাগ শান্তিবাগ এলাকায় কাষ্টম কর্মকর্তা মশিয়ার রহমান মন্ডল সিটি কর্পোরেশন থেকে নকশা পাশ করে নিয়ে ৯ তলা ভবন নির্মাণ শুরু করেন। বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পাশ করা নকশার নিয়ম তোয়াক্কা না করে পিলার নির্মাণ করেন তিনি। নকশা অনুযায়ী উত্তর দক্ষিণে ৪ ফিট ২ ইঞ্চি ও পশ্চিম দিকে ৬ ফিট ৭ ইঞ্চি ছাড়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবে মানা হয়নি। কোথায় ১ ফিট থেকে দেড় ফিট আবার কোথাও ২ ফিট ছেড়ে পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। যা সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত নকশাবহির্ভূত।

নকশাবহির্ভূত কাজ বন্ধের ও পিলার উচ্ছেদের জন্য গত ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর রংপুর সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র বরাবর আবেদন করে আলমগীর হোসেন অপু নামে এক প্রতিবেশী। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন মেয়র নিজে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষনিক সার্ভেয়ার দিয়ে পুণরায় তদন্ত করে অনুমোদিত নকশা নকশাবহির্ভূত নির্মাণ কাজের সত্যতা খুঁজে পান এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন। পরবর্তিতে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও উচ্ছেদের আদেশ দেন। কিন্তু সেই আদেশ আর বাস্তবায়ন হয়নি তৎকালীন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগের তাজহাট থানার সভাপতি ইমাদ মিয়ার তৎপরতায়। পরে জানা যায়, নির্মাণাধীন ভবনের মালিক মশিয়ার রহমান মন্ডলের স্ত্রী আওয়ামীলীগ নেতা ইমাদ মিয়ার ছোট বোন। যার কারনে তিন বছরেও নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদ হয়নি।

এদিকে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর নতুন করে ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারী নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদের জন্য পূণরায় রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হলে তিনি বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে পিলার উচ্ছেদের নির্দেশ প্রদান করেন। সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতে সম্পত্তি শাখা ও প্রকৌশল শাখাকে যৌথ তদন্ত এবং প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এরপর ৬ মাস অতিবাহিত হলেও সম্পত্তি শাখার কর্মকর্তা বিষয়টি কালক্ষেপনের জন্য একাধিকবার তদন্তের নির্দেশ ও প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করে আসছে।

সেই ধারাবাহিকতায় প্রথমে সময় নির্ধারণ না করে নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদের জন্য নোটিশ প্রদান করে কাষ্টম কর্মকর্তা মশিয়ার রহমান মন্ডলকে। নোটিশের পর নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদ না করলে পূণরায় ৩ দিনের মধ্যে নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদের নোটিশ প্রদান করা হয়। সেই নোটিশেও উচ্ছেদ করা না হলে আবারো ৩ দিনের সময় বেধে দেওয়া হয়। এরপরও উচ্ছেদ না হলে পূণরায় ৭ দিনের সময় দিয়ে নোটিশ করা হয়। এসময় পিলার উচ্ছেদে কাষ্টম কর্মকর্তা মশিউর রহমান ৬ মাসের সময় চেয়ে আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্পত্তি শাখা আবারো ১ মাসের সময় প্রদান করে। সেই সময় অতিবাহিত হলেও নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদ হয়নি।

দফায় দফায় নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদের নোটিশ প্রদান করেই যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি শাখা। কিন্তু নকশাবহির্ভূত পিলার আর উচ্ছেদ হয় না। নির্মাণাধীন ভবনের মালিক বিত্তশালী কাষ্টম কর্মকর্তা মশিয়ার রহমান মন্ডলের টাকার জোরের কারনে ও আওয়ামীলীগ নেতা ইমাদ মিয়ার তদবিরে উচ্ছেদ হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে সম্পত্তি শাখার কর্মকর্তারা সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের কথাও মানছেন না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগি আবেদনকারীর।

নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদে আবেদনকারী আলমগীর হোসেন অপু জানান, নকশাবহির্ভূত কয়েকটি পিলার উচ্ছেদে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে ঘুরছি সিটি কর্পোরেশনে। কোন কাজ হচ্ছে না। শুধু ফাইল আর নোটিশ চালাচালি হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তির করার নির্দেশ দিলেও তা মানছেন না সম্পত্তি শাখা। কালক্ষেপনের জন্য নানা অযুহাত দেখিয়ে একের পর এক নোটিশ দিয়ে যাচ্ছেন। একই তদন্ত বার বার করছেন। কোন সমাধান দিচ্ছেন না তারা।

এ বিষয়ে ফোন দিলে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি শাখার কর্মকর্তা মৌসুমি আফরিদা বলেন, বিষয়টি জানতে হলে কানুনগো কে ফোন দিয়ে জানতে হবে। কানুনগো ভালো জানে বিষয়টি।

সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রকৌশল শাখায় মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রকৌশল শাখার মতামতের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এদিকে নির্মাণাধীন ভবনের মালিক কাস্টম কর্মকর্তা মশিয়ার রহমান মন্ডলের সাথে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

উচ্ছেদের নোটিশ বারবার হলেও উচ্ছেদ হচ্ছে না পিলার: সম্পত্তি শাখার কালক্ষেপন

কামরুল হাসান টিটু, রংপৃর ব‌্যুরো
Update Time : ০৯:১১:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

নকশাবহির্ভূত নির্মাণাধীন ভবনের পিলার উচ্ছেদের জন্য একাধিকবার নোটিশ করা হলেও কোন এক অদৃশ্য কারনে উচ্ছেদ হচ্ছে না সেই নির্মাণাধীন পিলার। এদিকে একাধিক বিভাগের মাধ্যমে তদন্ত এবং বারবার নোটিশ দিয়ে কালক্ষেপনের অভিযোগ উঠেছে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি শাখার বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর নগরীর লালবাগ শান্তিবাগ এলাকায় কাষ্টম কর্মকর্তা মশিয়ার রহমান মন্ডল সিটি কর্পোরেশন থেকে নকশা পাশ করে নিয়ে ৯ তলা ভবন নির্মাণ শুরু করেন। বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পাশ করা নকশার নিয়ম তোয়াক্কা না করে পিলার নির্মাণ করেন তিনি। নকশা অনুযায়ী উত্তর দক্ষিণে ৪ ফিট ২ ইঞ্চি ও পশ্চিম দিকে ৬ ফিট ৭ ইঞ্চি ছাড়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবে মানা হয়নি। কোথায় ১ ফিট থেকে দেড় ফিট আবার কোথাও ২ ফিট ছেড়ে পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। যা সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত নকশাবহির্ভূত।

নকশাবহির্ভূত কাজ বন্ধের ও পিলার উচ্ছেদের জন্য গত ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর রংপুর সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র বরাবর আবেদন করে আলমগীর হোসেন অপু নামে এক প্রতিবেশী। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন মেয়র নিজে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষনিক সার্ভেয়ার দিয়ে পুণরায় তদন্ত করে অনুমোদিত নকশা নকশাবহির্ভূত নির্মাণ কাজের সত্যতা খুঁজে পান এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন। পরবর্তিতে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও উচ্ছেদের আদেশ দেন। কিন্তু সেই আদেশ আর বাস্তবায়ন হয়নি তৎকালীন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগের তাজহাট থানার সভাপতি ইমাদ মিয়ার তৎপরতায়। পরে জানা যায়, নির্মাণাধীন ভবনের মালিক মশিয়ার রহমান মন্ডলের স্ত্রী আওয়ামীলীগ নেতা ইমাদ মিয়ার ছোট বোন। যার কারনে তিন বছরেও নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদ হয়নি।

এদিকে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর নতুন করে ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারী নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদের জন্য পূণরায় রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হলে তিনি বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে পিলার উচ্ছেদের নির্দেশ প্রদান করেন। সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতে সম্পত্তি শাখা ও প্রকৌশল শাখাকে যৌথ তদন্ত এবং প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এরপর ৬ মাস অতিবাহিত হলেও সম্পত্তি শাখার কর্মকর্তা বিষয়টি কালক্ষেপনের জন্য একাধিকবার তদন্তের নির্দেশ ও প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করে আসছে।

সেই ধারাবাহিকতায় প্রথমে সময় নির্ধারণ না করে নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদের জন্য নোটিশ প্রদান করে কাষ্টম কর্মকর্তা মশিয়ার রহমান মন্ডলকে। নোটিশের পর নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদ না করলে পূণরায় ৩ দিনের মধ্যে নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদের নোটিশ প্রদান করা হয়। সেই নোটিশেও উচ্ছেদ করা না হলে আবারো ৩ দিনের সময় বেধে দেওয়া হয়। এরপরও উচ্ছেদ না হলে পূণরায় ৭ দিনের সময় দিয়ে নোটিশ করা হয়। এসময় পিলার উচ্ছেদে কাষ্টম কর্মকর্তা মশিউর রহমান ৬ মাসের সময় চেয়ে আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্পত্তি শাখা আবারো ১ মাসের সময় প্রদান করে। সেই সময় অতিবাহিত হলেও নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদ হয়নি।

দফায় দফায় নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদের নোটিশ প্রদান করেই যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি শাখা। কিন্তু নকশাবহির্ভূত পিলার আর উচ্ছেদ হয় না। নির্মাণাধীন ভবনের মালিক বিত্তশালী কাষ্টম কর্মকর্তা মশিয়ার রহমান মন্ডলের টাকার জোরের কারনে ও আওয়ামীলীগ নেতা ইমাদ মিয়ার তদবিরে উচ্ছেদ হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে সম্পত্তি শাখার কর্মকর্তারা সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের কথাও মানছেন না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগি আবেদনকারীর।

নকশাবহির্ভূত পিলার উচ্ছেদে আবেদনকারী আলমগীর হোসেন অপু জানান, নকশাবহির্ভূত কয়েকটি পিলার উচ্ছেদে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে ঘুরছি সিটি কর্পোরেশনে। কোন কাজ হচ্ছে না। শুধু ফাইল আর নোটিশ চালাচালি হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তির করার নির্দেশ দিলেও তা মানছেন না সম্পত্তি শাখা। কালক্ষেপনের জন্য নানা অযুহাত দেখিয়ে একের পর এক নোটিশ দিয়ে যাচ্ছেন। একই তদন্ত বার বার করছেন। কোন সমাধান দিচ্ছেন না তারা।

এ বিষয়ে ফোন দিলে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি শাখার কর্মকর্তা মৌসুমি আফরিদা বলেন, বিষয়টি জানতে হলে কানুনগো কে ফোন দিয়ে জানতে হবে। কানুনগো ভালো জানে বিষয়টি।

সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রকৌশল শাখায় মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রকৌশল শাখার মতামতের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এদিকে নির্মাণাধীন ভবনের মালিক কাস্টম কর্মকর্তা মশিয়ার রহমান মন্ডলের সাথে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।