ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্বের মাঝেই জন্ম নিলো অলৌকিক শিশু

- Update Time : ০৭:৫৯:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৩
- / ২৭৪ Time View
গাজার যুদ্ধ এবং রক্তপাতের মধ্যে ঘটে গেলো এক অলৌকিক ঘটনা। আর অলৌকিক ঘটনা হল ‘মক্কার জন্ম’। শনিবার ২৮ বছর বয়সী দারিন, তার তৃতীয় সন্তানের জন্ম দেন। দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফাহ তখন উত্তাল। ইসরায়েলি হামলার জেরে বাসার তৃতীয় তলা থেকে নীচে পড়ে যান দারিন। তার স্বামী আয়মান আবু শামালাহ, বিল্ডিংয়ে আঘাত হানার সময় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মৃত্যু থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, স্ত্রীকে খুঁজতে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ান তিনি।
আয়মান নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলছেন- “আমি ভেবেছিলাম দারিন এবং আমার সন্তান এতো জোরে নীচে পড়ার পরে হয়তো মারা গেছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাদের নীচে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে আমি আশ্বস্ত হয়েছিলাম।”
জ্ঞান হারানোর আগে দারিন আয়মানকে বলেছিলেন- ” আয়মান, মক্কার খেয়াল রেখো।” আবু শামালাহর স্ত্রীর দেহ বিস্ফোরণে এতটাই বিকৃত হয়ে গিয়েছিলো যে তার ট্রাউজার দেখে তবে চিনতে পেরেছিলেন আয়মান। আবু ইউসুফ আল নাজ্জার হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাবার সময় ডাক্তারের কাছে তিনি বারবার নিজের সন্তানকে বাঁচানোর অনুরোধ করতে থাকেন। চিকিৎসকরা সিজারিয়ান অপারেশন করে শিশুটিকে বের করে আনতে সক্ষম হন, ছোট্ট নবজাতকটিকে জরুরিভাবে রাফাহ এমিরেটস রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারটি গাজা শহরের বোমা হামলা থেকে বাঁচতে রাফাতে আত্মীয়দের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলো। কিন্তু যে বিল্ডিংটিতে তারা অবস্থান করছিলেন সেটিতে ইসরায়েলি বাহিনী আঘাত হানে।
আবু শামালাহ বলেছেন, তার স্ত্রী ও বাকি সন্তানসহ চারজন আত্মীয় এবং তাদের দুই সন্তানকে কেড়ে নিয়েছে এই মরণ হামলা। শিশুদের দেহ বোমা হামলায় ঝলসে গেছে। যখন হামলাটি হয় আবু শামালা ছাদে গিয়েছিলেন পানির ট্যাঙ্ক ভরেছে কিনা তা দেখতে। তাই অল্পের জন্য তিনি রক্ষা পেয়ে যান। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, ৭ অক্টোবর সীমান্ত জুড়ে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলার পর ১৪০০জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। তারপর থেকে, গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে ৫,০০০ এরও বেশি মানুষ, প্রধানত বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে ২,০০০ শিশু।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ সালামেহ এএফপিকে বলেছেন, “নবজাতকের অবস্থা খুবই গুরুতর ছিল যখন তাকে এখানে আনা হয়েছিল এবং সঙ্গে সঙ্গে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিল। শিশুটির মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছাচ্ছিল না। “তার ছোট্ট মেয়ের ইনকিউবেটরের সামনে দাঁড়িয়ে, একজন ডাক্তার যখন তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তখন আবু শামালা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ইনকিউবেটরে একটি ট্যাগে লেখা ছিলো: “শহীদ দারিন এবং আবু শামালাহের শিশু” জন্ম তারিখ ২১ অক্টোবর – একই তারিখে তার অন্য দুটি সন্তানেরও জন্ম হয়েছিল। কিন্তু আজ তারা অতীত।
সূত্র : গালফ নিউজ