ঢাকা ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

ইউপি চেয়ারম্যান সেন্টু হত্যা মামলার আসামি ‘শ্যুটার ইমাদুল’ গ্রেফতার

দৌলতপুর উপজেলা (কুষ্টিয়া ) প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৯:২০:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১০৪ Time View

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু হত্যা মামলার তদন্তসূত্রে অভিযুক্ত ‘শ্যুটার ইমাদুল ইসলাম’ (৩০) কে গ্রেফতার করেছে কুষ্টিয়া সিআইডি,কুষ্টিয়া র‍্যাব-১২,সিপিসি-১ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি যৌথ বিশেষ অভিযানিক দল।

গতকাল বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল থানার মধুবাগ এলাকার একটি বস্তিতে দীর্ঘ চার ঘণ্টার সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ আবু তারেক এবং ইনেসপেক্টর (ওসি) মহব্বত আলী।

গ্রেফতারকৃত ইমাদুল দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের মরিচা ডিগ্রি কলেজপাড়া গ্রামের আতর সরদারের ছেলে।পুলিশ জানিয়েছে,সে একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী,মাদক কারবারি এবং পেশাদার শ্যুটার কন্ট্রাক্ট কিলার।২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় ইউপি চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,এলাকায় সন্ত্রাস,মাদক ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন চেয়ারম্যান সেন্টু।এ কারণে “তরিকুল ইসলাম টুকু” বাহিনীর সদস্যরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে। পরদিন ১ অক্টোবর নিহত চেয়ারম্যানের ছেলে আহসান হাবীব কনক বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় টুকুকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া আরও ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ৮-১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।ফিলিপনগর এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি, সেন্টু চেয়ারম্যান হত্যা মামলার সাক্ষীদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে নিয়মিত।

মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—সোহাগ ওরফে গিট্টু (২২), রওশন (২৩), রাসেল (২৭), লালন (২৬), নাঈম (২২), রেন্টু গিট্টু (২৩), আল আমিন (২০), হিমেল (২৭) ও ইরাক (৩০)। এরা অনেকেই জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় আবারো সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয়দের দাবি,কিছুদিন পূর্বে এ চক্র ফিল্মি স্টাইলে অপহরণ কান্ডে সহ চাঁদাবাজি,দোকানে দোকানে চাঁদা দাবি,হত্যা মামলার সাক্ষীদের হুমকি,এমনকি পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে গরু মহিষের বাথানের রাখালদের ও কৃষকদের মাঠে নামতে বাধা দিচ্ছে এবং প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে।এছাড়া কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরপরই আসামিরা ভারী অস্ত্র নিয়ে দিনে ও রাতে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে।এতে পুরো ফিলিপনগর ও আশপাশের গ্রামবাসী চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।টুকু ও তার ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে স্পষ্ট।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,প্রতিটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সময় তরিকুল ইসলাম টুকু ও তার ভাই সাগর পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চারা বটতলার নিজ বাড়ি থেকে এসে ফিলিপনগরে অবস্থান করেন এবং বাহিনীর সদস্যদের সাথে মিটিং করেন।তবে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।প্রাননাশের ভয়ে।নিহত নঈম উদ্দিন সেন্টু ফিলিপনগর বাজারপাড়ার মুতালিব সরকারের ছেলে।তিনি সাবেক দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন এবং পরপর দুইবার ফিলিপনগর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।পরে একবার স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তদন্ত ও গ্রেফতারে অগ্রগতি নিয়মানুযায়ী সিআইডি ও ডিএমপি যৌথভাবে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ইমাদুলকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্তে নতুন গতি এনেছে। বেরিয়ে এসেছে রাঘোব বোয়ালদের নাম,যা দৌলতপুর উপজেলার প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, বাকি আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান প্রকৃয়াধীন রয়েছে।
তবে স্থানীয়দের দাবি,সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় এনে ফিলিপনগরে শান্তি ফিরিয়ে আনা।

Please Share This Post in Your Social Media

ইউপি চেয়ারম্যান সেন্টু হত্যা মামলার আসামি ‘শ্যুটার ইমাদুল’ গ্রেফতার

দৌলতপুর উপজেলা (কুষ্টিয়া ) প্রতিনিধি
Update Time : ০৯:২০:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু হত্যা মামলার তদন্তসূত্রে অভিযুক্ত ‘শ্যুটার ইমাদুল ইসলাম’ (৩০) কে গ্রেফতার করেছে কুষ্টিয়া সিআইডি,কুষ্টিয়া র‍্যাব-১২,সিপিসি-১ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি যৌথ বিশেষ অভিযানিক দল।

গতকাল বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল থানার মধুবাগ এলাকার একটি বস্তিতে দীর্ঘ চার ঘণ্টার সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ আবু তারেক এবং ইনেসপেক্টর (ওসি) মহব্বত আলী।

গ্রেফতারকৃত ইমাদুল দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের মরিচা ডিগ্রি কলেজপাড়া গ্রামের আতর সরদারের ছেলে।পুলিশ জানিয়েছে,সে একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী,মাদক কারবারি এবং পেশাদার শ্যুটার কন্ট্রাক্ট কিলার।২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় ইউপি চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,এলাকায় সন্ত্রাস,মাদক ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন চেয়ারম্যান সেন্টু।এ কারণে “তরিকুল ইসলাম টুকু” বাহিনীর সদস্যরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে। পরদিন ১ অক্টোবর নিহত চেয়ারম্যানের ছেলে আহসান হাবীব কনক বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় টুকুকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া আরও ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ৮-১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।ফিলিপনগর এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি, সেন্টু চেয়ারম্যান হত্যা মামলার সাক্ষীদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে নিয়মিত।

মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—সোহাগ ওরফে গিট্টু (২২), রওশন (২৩), রাসেল (২৭), লালন (২৬), নাঈম (২২), রেন্টু গিট্টু (২৩), আল আমিন (২০), হিমেল (২৭) ও ইরাক (৩০)। এরা অনেকেই জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় আবারো সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয়দের দাবি,কিছুদিন পূর্বে এ চক্র ফিল্মি স্টাইলে অপহরণ কান্ডে সহ চাঁদাবাজি,দোকানে দোকানে চাঁদা দাবি,হত্যা মামলার সাক্ষীদের হুমকি,এমনকি পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে গরু মহিষের বাথানের রাখালদের ও কৃষকদের মাঠে নামতে বাধা দিচ্ছে এবং প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে।এছাড়া কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরপরই আসামিরা ভারী অস্ত্র নিয়ে দিনে ও রাতে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে।এতে পুরো ফিলিপনগর ও আশপাশের গ্রামবাসী চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।টুকু ও তার ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে স্পষ্ট।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,প্রতিটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সময় তরিকুল ইসলাম টুকু ও তার ভাই সাগর পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চারা বটতলার নিজ বাড়ি থেকে এসে ফিলিপনগরে অবস্থান করেন এবং বাহিনীর সদস্যদের সাথে মিটিং করেন।তবে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।প্রাননাশের ভয়ে।নিহত নঈম উদ্দিন সেন্টু ফিলিপনগর বাজারপাড়ার মুতালিব সরকারের ছেলে।তিনি সাবেক দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন এবং পরপর দুইবার ফিলিপনগর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।পরে একবার স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তদন্ত ও গ্রেফতারে অগ্রগতি নিয়মানুযায়ী সিআইডি ও ডিএমপি যৌথভাবে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ইমাদুলকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্তে নতুন গতি এনেছে। বেরিয়ে এসেছে রাঘোব বোয়ালদের নাম,যা দৌলতপুর উপজেলার প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, বাকি আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান প্রকৃয়াধীন রয়েছে।
তবে স্থানীয়দের দাবি,সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় এনে ফিলিপনগরে শান্তি ফিরিয়ে আনা।