ঢাকা ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ড. ইউনূস

আমাকে দেখে কি মনে হয়, আমি নির্বাচনে লড়ব?

নওরোজ জাতীয় ডেস্ক
  • Update Time : ১০:৪৬:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৭ Time View

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাকে দেখে কি মনে হয়, আমি নির্বাচনে লড়ব?’

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস আয়োজিত ‘ক্লাইমেট ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে করা প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘ ২৫ মিনিট কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানের শেষ দিকে সঞ্চালক প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন, নির্বাচন করার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি নির্বাচন করব? আমি নির্বাচন করব না।’

সঞ্চালক তখন তাঁকে আবারও প্রশ্নের ধরনে বলেন, ‘তাহলে আপনার নির্বাচন করার কোনো সম্ভাবনাই নেই?’ ইউনূস বলেন, ‘না, না কোনোভাবেই নয়।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘কেন হবে না? অপরাধ করে থাকলে তাকে (শেখ হাসিনা) ফিরিয়ে (প্রত্যর্পণ) এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হবে, এর কোনো সময়সীমা আমার কাছে নেই।
যে কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা সামনের মাসগুলোতে সংস্কার সুপারিশ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তারপর নির্বাচনের জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হবে।’

‘ক্লাইমেট ফরওয়ার্ড’ সম্মেলনে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ব বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আটকে থাকবে, ততক্ষণ জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি কার্যকর হবে না।

জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে আমেরিকায় রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এরপর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর দেশে জাতীয় নির্বাচন দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন কবে হবে তা এখনো নিশ্চিত করে জানায়নি সরকার।

তবে, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে জানান, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এসময় সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার ইচ্ছার কথা জানান বাংলাদেশের সেনাপ্রধান।

বিরল এই সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বলেন, ‘যাই হোক না কেন আমি তাঁর (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) পাশে আছি। যাতে তিনি তাঁর মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।’

বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত ইউনূস বাংলাদেশে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কর একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগেই সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান ওয়াকার-উজ-জামান। তাঁর মতে, গণতন্ত্রে একটি উত্তরণ এক বছর থেকে দেড় বছরের মধ্যে করা উচিত। এসময় তিনি ধৈর্য ধারণ করার প্রতিও জোর দেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, এর আগে ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক দল গঠনের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর সমর্থনে এবং ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। এর কিছুদিন পর থেকেই ড. ইউনূসের রাজনৈতিক দল গঠনের গুঞ্জন শুরু হয়।

২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূস দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি দেন। সে চিঠিতে তিনি নিজের রাজনীতি সম্পর্কে পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করেন। সে চিঠিতে ড. ইউনূস বলেন, নতুন রাজনীতি সৃষ্টির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। এটি করতে না পারলে পুরোনো রাজনীতি থেকে পরিষ্কারভাবে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে না।

ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূস বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, তার দলের সম্ভাব্য নাম নাগরিক শক্তি। কিন্তু রাজনীতিতে আসার জন্য তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে যে খোলা চিঠি দিয়েছিলেন তার তিনমাসের মধ্যেই সে প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

২০০৭ সালের ৩ মে অধ্যাপক ইউনূস রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন। তখনো তিনি জাতির উদ্দেশ্যে চিঠি প্রকাশ করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

ড. ইউনূস

আমাকে দেখে কি মনে হয়, আমি নির্বাচনে লড়ব?

নওরোজ জাতীয় ডেস্ক
Update Time : ১০:৪৬:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাকে দেখে কি মনে হয়, আমি নির্বাচনে লড়ব?’

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস আয়োজিত ‘ক্লাইমেট ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে করা প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘ ২৫ মিনিট কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানের শেষ দিকে সঞ্চালক প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন, নির্বাচন করার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি নির্বাচন করব? আমি নির্বাচন করব না।’

সঞ্চালক তখন তাঁকে আবারও প্রশ্নের ধরনে বলেন, ‘তাহলে আপনার নির্বাচন করার কোনো সম্ভাবনাই নেই?’ ইউনূস বলেন, ‘না, না কোনোভাবেই নয়।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘কেন হবে না? অপরাধ করে থাকলে তাকে (শেখ হাসিনা) ফিরিয়ে (প্রত্যর্পণ) এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হবে, এর কোনো সময়সীমা আমার কাছে নেই।
যে কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা সামনের মাসগুলোতে সংস্কার সুপারিশ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তারপর নির্বাচনের জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হবে।’

‘ক্লাইমেট ফরওয়ার্ড’ সম্মেলনে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ব বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আটকে থাকবে, ততক্ষণ জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি কার্যকর হবে না।

জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে আমেরিকায় রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এরপর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর দেশে জাতীয় নির্বাচন দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন কবে হবে তা এখনো নিশ্চিত করে জানায়নি সরকার।

তবে, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে জানান, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এসময় সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার ইচ্ছার কথা জানান বাংলাদেশের সেনাপ্রধান।

বিরল এই সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বলেন, ‘যাই হোক না কেন আমি তাঁর (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) পাশে আছি। যাতে তিনি তাঁর মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।’

বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত ইউনূস বাংলাদেশে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কর একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগেই সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান ওয়াকার-উজ-জামান। তাঁর মতে, গণতন্ত্রে একটি উত্তরণ এক বছর থেকে দেড় বছরের মধ্যে করা উচিত। এসময় তিনি ধৈর্য ধারণ করার প্রতিও জোর দেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, এর আগে ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক দল গঠনের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর সমর্থনে এবং ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। এর কিছুদিন পর থেকেই ড. ইউনূসের রাজনৈতিক দল গঠনের গুঞ্জন শুরু হয়।

২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূস দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি দেন। সে চিঠিতে তিনি নিজের রাজনীতি সম্পর্কে পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করেন। সে চিঠিতে ড. ইউনূস বলেন, নতুন রাজনীতি সৃষ্টির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। এটি করতে না পারলে পুরোনো রাজনীতি থেকে পরিষ্কারভাবে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে না।

ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূস বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, তার দলের সম্ভাব্য নাম নাগরিক শক্তি। কিন্তু রাজনীতিতে আসার জন্য তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে যে খোলা চিঠি দিয়েছিলেন তার তিনমাসের মধ্যেই সে প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

২০০৭ সালের ৩ মে অধ্যাপক ইউনূস রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন। তখনো তিনি জাতির উদ্দেশ্যে চিঠি প্রকাশ করেন।