ঢাকা ১০:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আন্দোলনে নামার ইঙ্গিত এনসিপির

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১২:১৬:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • / ২৪৬ Time View

জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রাজধানীতে গতকাল শুক্রবার সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা উপস্থিত থাকলেও সেখানে ছিলেন না এনসিপির কেউ। অথচ এই দলের উদ্যোগেই মূলত জুলাই জাতীয় সনদের দাবি উঠেছিল। তাদের ছাড়াই সনদ স্বাক্ষরকে প্রতারণা হিসেবে দেখছে দলটি। এই অবস্থায় সনদে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে আবারও রাজপথে আন্দোলনে নামার কথা বলছেন দলটির নেতারা।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘৩১ অক্টোবর পর্যন্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আমরা আশা করি, এই সময়ের মধ্যে সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে। সেটা না হলে প্রয়োজনে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আবারও রাজপথে নামব।’

সনদ স্বাক্ষরের আগের দিন বৃহস্পতিবার সকালেই এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়ে দেন, সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়াও তিনটি দাবি পূরণ না হলে তাঁরা সনদে স্বাক্ষর করবেন না।

এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এনসিপির নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা হয়। মধ্যরাতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে আলোচনা করেন একাধিক উপদেষ্টা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছে দলটি।

তারপরও যখন সনদ স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া এগিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে গতকাল সকালে সংসদ ভবন এলাকায় সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়েন জুলাই যোদ্ধারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষও হয়। এ ঘটনার সঙ্গে এনসিপির সনদ স্বাক্ষর না করাকে মেলাচ্ছেন রাজনীতিসংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। তবে এনসিপি বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘সংসদ ভবন এলাকায় জুলাই যোদ্ধাদের কর্মসূচির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই।’

জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে তিনটি দাবি জানিয়েছিল এনসিপি—সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগেই প্রকাশ করা; জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া ‘জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়’ অনুসারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মাধ্যমে জারি করা এবং জুলাই সনদের বৈধতার উৎস জুলাই গণ-অভ্যুত্থান হিসেবে অভিহিত করা।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘সনদে বাস্তবায়নের পদ্ধতি উল্লেখ না থাকায় আমরা যাইনি। আমরা যখন কমিশনকে বললাম যে আপনারা এটা সংশোধনী করেন, তখন তারা সংশোধনী করল না। বলল, এখন আর সংশোধনের সুযোগ নেই। অথচ আজকে দেখা গেল, যখন আহতরা (জুলাই যোদ্ধারা) গিয়ে দাবি তুলল, তখন কিন্তু তারা ওই ৫ নম্বর ধারায় ঠিকই সংশোধনী এনেছে। তার মানে এটা (তিন দাবি মেনে নেওয়া) চাইলেই তারা পারত। এটা করলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এবং আজকে এনসিপির ওখানে অনুপস্থিতি এগুলো কিছুই ঘটত না। এই পরিস্থিতির জন্য আসলে সরকার এবং ঐকমত্য কমিশন দায়ী।’

জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করায় এনসিপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং দলটির ভবিষ্যৎ নিয়েও নানা কথা হচ্ছে। তবে দলটির নেতারা বলছেন, তাঁদের নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং দাবি আদায়ের লড়াই সমানতালে চলবে।

৩১ অক্টোবরের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই সনদ বিষয়ে এনসিপির দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছি, সনদে যতটুকু অর্জিত হয়েছে, সেটাকে টেকসইভাবে বাস্তবায়ন, গণভোটের বিষয়ে ফয়সালা, নোট অব ডিসেন্টের (আপত্তি) জায়গাগুলো পরিষ্কার করা—এই বিষয়গুলোতেই আমরা কমিশনের সঙ্গে আলাপ জারি রাখব। প্রয়োজনে আমাদের যে রাজনৈতিক কর্মসূচি রয়েছে, সেগুলো জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পালন করব।’

সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এনসিপি অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় সরকারের সঙ্গে দলটির দূরত্ব তৈরি হলো কি না, তা নিয়েও কথা হচ্ছে। এ বিষয়ে সারোয়ার তুষারের বক্তব্য, ‘আমাদের দল নয়, বরং অন্যান্য দলের আরও বেশি প্রভাব সরকারের ওপর আছে। জুলাই সনদ নিয়ে আমাদের অবস্থান নতুন নয়। জুলাই পদযাত্রায় আমরা সারা দেশে বলেছি, সনদের আইনি ভিত্তি এবং সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই আইনি ভিত্তি, সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত করার জন্যই আমরা এখনো লড়াই করছি।’

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেছেন, জাতীয় ঐক্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই হচ্ছে। কিছু রাজনৈতিক দল জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে এই কাগজে স্বাক্ষর করছে।

Please Share This Post in Your Social Media

আন্দোলনে নামার ইঙ্গিত এনসিপির

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ১২:১৬:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রাজধানীতে গতকাল শুক্রবার সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা উপস্থিত থাকলেও সেখানে ছিলেন না এনসিপির কেউ। অথচ এই দলের উদ্যোগেই মূলত জুলাই জাতীয় সনদের দাবি উঠেছিল। তাদের ছাড়াই সনদ স্বাক্ষরকে প্রতারণা হিসেবে দেখছে দলটি। এই অবস্থায় সনদে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে আবারও রাজপথে আন্দোলনে নামার কথা বলছেন দলটির নেতারা।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘৩১ অক্টোবর পর্যন্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আমরা আশা করি, এই সময়ের মধ্যে সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে। সেটা না হলে প্রয়োজনে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আবারও রাজপথে নামব।’

সনদ স্বাক্ষরের আগের দিন বৃহস্পতিবার সকালেই এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়ে দেন, সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়াও তিনটি দাবি পূরণ না হলে তাঁরা সনদে স্বাক্ষর করবেন না।

এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এনসিপির নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা হয়। মধ্যরাতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে আলোচনা করেন একাধিক উপদেষ্টা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছে দলটি।

তারপরও যখন সনদ স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া এগিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে গতকাল সকালে সংসদ ভবন এলাকায় সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়েন জুলাই যোদ্ধারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষও হয়। এ ঘটনার সঙ্গে এনসিপির সনদ স্বাক্ষর না করাকে মেলাচ্ছেন রাজনীতিসংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। তবে এনসিপি বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘সংসদ ভবন এলাকায় জুলাই যোদ্ধাদের কর্মসূচির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই।’

জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে তিনটি দাবি জানিয়েছিল এনসিপি—সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগেই প্রকাশ করা; জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া ‘জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়’ অনুসারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মাধ্যমে জারি করা এবং জুলাই সনদের বৈধতার উৎস জুলাই গণ-অভ্যুত্থান হিসেবে অভিহিত করা।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘সনদে বাস্তবায়নের পদ্ধতি উল্লেখ না থাকায় আমরা যাইনি। আমরা যখন কমিশনকে বললাম যে আপনারা এটা সংশোধনী করেন, তখন তারা সংশোধনী করল না। বলল, এখন আর সংশোধনের সুযোগ নেই। অথচ আজকে দেখা গেল, যখন আহতরা (জুলাই যোদ্ধারা) গিয়ে দাবি তুলল, তখন কিন্তু তারা ওই ৫ নম্বর ধারায় ঠিকই সংশোধনী এনেছে। তার মানে এটা (তিন দাবি মেনে নেওয়া) চাইলেই তারা পারত। এটা করলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এবং আজকে এনসিপির ওখানে অনুপস্থিতি এগুলো কিছুই ঘটত না। এই পরিস্থিতির জন্য আসলে সরকার এবং ঐকমত্য কমিশন দায়ী।’

জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করায় এনসিপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং দলটির ভবিষ্যৎ নিয়েও নানা কথা হচ্ছে। তবে দলটির নেতারা বলছেন, তাঁদের নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং দাবি আদায়ের লড়াই সমানতালে চলবে।

৩১ অক্টোবরের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই সনদ বিষয়ে এনসিপির দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছি, সনদে যতটুকু অর্জিত হয়েছে, সেটাকে টেকসইভাবে বাস্তবায়ন, গণভোটের বিষয়ে ফয়সালা, নোট অব ডিসেন্টের (আপত্তি) জায়গাগুলো পরিষ্কার করা—এই বিষয়গুলোতেই আমরা কমিশনের সঙ্গে আলাপ জারি রাখব। প্রয়োজনে আমাদের যে রাজনৈতিক কর্মসূচি রয়েছে, সেগুলো জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পালন করব।’

সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এনসিপি অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় সরকারের সঙ্গে দলটির দূরত্ব তৈরি হলো কি না, তা নিয়েও কথা হচ্ছে। এ বিষয়ে সারোয়ার তুষারের বক্তব্য, ‘আমাদের দল নয়, বরং অন্যান্য দলের আরও বেশি প্রভাব সরকারের ওপর আছে। জুলাই সনদ নিয়ে আমাদের অবস্থান নতুন নয়। জুলাই পদযাত্রায় আমরা সারা দেশে বলেছি, সনদের আইনি ভিত্তি এবং সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই আইনি ভিত্তি, সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত করার জন্যই আমরা এখনো লড়াই করছি।’

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেছেন, জাতীয় ঐক্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই হচ্ছে। কিছু রাজনৈতিক দল জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে এই কাগজে স্বাক্ষর করছে।