ঢাকা ০১:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘আমার ছেলেকে কেন মারল, সে তো কোনো অপরাধ করেনি’

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১১:০৬:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ১৬ Time View

নিহত সিয়ামের পরিবারের সদস্যদের আহাজারি। ছবিঃ সংগৃহীত

রাজধানীর মগবাজার এলাকায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ডের সামনে দুর্বৃত্তদের ছোড়া ককটেল বিস্ফোরণে সিয়াম মজুমদার (২০) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন।

বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচে এ ঘটনা ঘটে। নিউ ইস্কাটন রোডের জাহিদ কার ডেকোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন সিয়াম।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সামনের ফুটপাতে ফারুকের চায়ের দোকান।

ফারুক বলেন, ‘এক তরুণ এক কাপ চা দিতে বলেছিল। কয়েক সেকেন্ড পর ওই তরুণের মাথায় কিছু একটা পড়ল। এর সঙ্গে সঙ্গেই মাথার ছিন্নভিন্ন অংশ চায়ের কেটলিতে এসে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, সন্ধ্যার দিকে ফ্লাইওভারের ওপর থেকে শক্তিশালী ককটেল ছোড়া হয়। এটি বিস্ফোরিত হলে ঘটনাস্থলেই সিয়াম গুরুতর আহত হন। পরে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ফ্লাইওভারের ওপর থেকে ককটেল নিচে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এটি সিয়ামের মাথায় গিয়ে পড়ে।  এতে তার মাথা দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। ওই পথচারী ফুটপাতের দোকানে চা খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সিয়ামের মা-বাবা ও ভাই ঘটনাস্থলে ছুটে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিহতের বাবা আলী আকবর বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। আমি কোন রাজনীতি করিনি। সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে কেন মারল। আমার ছেলে তো কোন অপরাধ করিনি। সন্ত্রাসীদের কারণে রাস্তায় কী চলা যাবে না? আমার ছেলে খুনের বিচার চাই।’

নিহতের মা শিজু বেগম আর্তনাদ করে বলেন,‘ সিয়াম তুই কই, আমার কোলে ফিরে আয়। আমার বুক খালি হয়ে গেল। বাপ তুই বুকে আয়।’ কথা বলতে বলতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। স্বজনরা তার চোখেমুখে পানি দেন৷ মিনিট দুয়েক পরে চেতনা ফিরে পেয়ে আবার আর্তনাদ করতে থাকেন তিনি।

ঘটনার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এবং পুলিশের রমনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। এছাড়া সিটিটিসির বোম ডিসপোজাল ইউনিট এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ইউনিট আলামত সংগ্রহ করে।

রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ককটেলটি ফ্লাইওভার থেকে ছুড়ে মারা হয়েছে। এটি শক্তিশালী ককটেল। ধারণা করা হচ্ছে, ককটেলটি সরাসরি তরুণের মাথায় পড়ে বিস্ফোরিত হয়। এ কারণে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, সিয়াম তার কর্মস্থল থেকে ঘটনাস্থলের পাশে নাস্তা কিনতে এসেছিলেন। নাস্তা কেনার পর তিনি ফুটপাতে ফারুকের চায়ের দোকানে দাঁড়ান। ফারুককে চা দিতে বলেন তিনি। এরই মধ্যে ককটেল এসে তার মাথায় পড়ে।

সিয়ামের ছোট ভাই সিজান মজুমদার জানান, নিউ ইস্কাটন রোডে একটি বাসায় তারা ভাড়া থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি খুলনা জেলায়। সাড়ে চার বছর আগে তাদের দুই ভাইকে নিয়ে বাবা মা ঢাকায় চলে আসেন। বাবা আলী আকবর ঢাকায় রিকশা চালান। চার বছর ধরে সিয়াম ইস্কাটন রোডে কার ডেকোরেশনের দোকানে কাজ করছিলেন। আজ সকাল ৯ টায় বাসা থেকে বের হন সিয়াম। কর্মস্থল থেকে রাতে বাসায় ফেরার কথা ছিল।

আজ রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডিএমপির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের ছোঁড়া বিস্ফোরক দ্রব্যের আঘাতে সিয়াম নিহত হয়েছেন। ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য তা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।  দুষ্কৃতকারীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।

ডিএমপি জানায়, ঢাকায় চলমান চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয় ঘটনাটি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত ও ধারাবাহিক ককটেল সন্ত্রাসেরই অংশ। যার উদ্দেশ্য জনমনে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়ানো। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিষয়ে কোন তথ্য থাকলে নিকটস্থ থানা অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে অবহিত করার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ করে ডিএমপি।

Please Share This Post in Your Social Media

‘আমার ছেলেকে কেন মারল, সে তো কোনো অপরাধ করেনি’

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ১১:০৬:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

রাজধানীর মগবাজার এলাকায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ডের সামনে দুর্বৃত্তদের ছোড়া ককটেল বিস্ফোরণে সিয়াম মজুমদার (২০) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন।

বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচে এ ঘটনা ঘটে। নিউ ইস্কাটন রোডের জাহিদ কার ডেকোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন সিয়াম।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সামনের ফুটপাতে ফারুকের চায়ের দোকান।

ফারুক বলেন, ‘এক তরুণ এক কাপ চা দিতে বলেছিল। কয়েক সেকেন্ড পর ওই তরুণের মাথায় কিছু একটা পড়ল। এর সঙ্গে সঙ্গেই মাথার ছিন্নভিন্ন অংশ চায়ের কেটলিতে এসে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, সন্ধ্যার দিকে ফ্লাইওভারের ওপর থেকে শক্তিশালী ককটেল ছোড়া হয়। এটি বিস্ফোরিত হলে ঘটনাস্থলেই সিয়াম গুরুতর আহত হন। পরে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ফ্লাইওভারের ওপর থেকে ককটেল নিচে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এটি সিয়ামের মাথায় গিয়ে পড়ে।  এতে তার মাথা দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। ওই পথচারী ফুটপাতের দোকানে চা খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সিয়ামের মা-বাবা ও ভাই ঘটনাস্থলে ছুটে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিহতের বাবা আলী আকবর বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। আমি কোন রাজনীতি করিনি। সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে কেন মারল। আমার ছেলে তো কোন অপরাধ করিনি। সন্ত্রাসীদের কারণে রাস্তায় কী চলা যাবে না? আমার ছেলে খুনের বিচার চাই।’

নিহতের মা শিজু বেগম আর্তনাদ করে বলেন,‘ সিয়াম তুই কই, আমার কোলে ফিরে আয়। আমার বুক খালি হয়ে গেল। বাপ তুই বুকে আয়।’ কথা বলতে বলতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। স্বজনরা তার চোখেমুখে পানি দেন৷ মিনিট দুয়েক পরে চেতনা ফিরে পেয়ে আবার আর্তনাদ করতে থাকেন তিনি।

ঘটনার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এবং পুলিশের রমনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। এছাড়া সিটিটিসির বোম ডিসপোজাল ইউনিট এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ইউনিট আলামত সংগ্রহ করে।

রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ককটেলটি ফ্লাইওভার থেকে ছুড়ে মারা হয়েছে। এটি শক্তিশালী ককটেল। ধারণা করা হচ্ছে, ককটেলটি সরাসরি তরুণের মাথায় পড়ে বিস্ফোরিত হয়। এ কারণে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, সিয়াম তার কর্মস্থল থেকে ঘটনাস্থলের পাশে নাস্তা কিনতে এসেছিলেন। নাস্তা কেনার পর তিনি ফুটপাতে ফারুকের চায়ের দোকানে দাঁড়ান। ফারুককে চা দিতে বলেন তিনি। এরই মধ্যে ককটেল এসে তার মাথায় পড়ে।

সিয়ামের ছোট ভাই সিজান মজুমদার জানান, নিউ ইস্কাটন রোডে একটি বাসায় তারা ভাড়া থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি খুলনা জেলায়। সাড়ে চার বছর আগে তাদের দুই ভাইকে নিয়ে বাবা মা ঢাকায় চলে আসেন। বাবা আলী আকবর ঢাকায় রিকশা চালান। চার বছর ধরে সিয়াম ইস্কাটন রোডে কার ডেকোরেশনের দোকানে কাজ করছিলেন। আজ সকাল ৯ টায় বাসা থেকে বের হন সিয়াম। কর্মস্থল থেকে রাতে বাসায় ফেরার কথা ছিল।

আজ রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডিএমপির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের ছোঁড়া বিস্ফোরক দ্রব্যের আঘাতে সিয়াম নিহত হয়েছেন। ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য তা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।  দুষ্কৃতকারীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।

ডিএমপি জানায়, ঢাকায় চলমান চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয় ঘটনাটি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত ও ধারাবাহিক ককটেল সন্ত্রাসেরই অংশ। যার উদ্দেশ্য জনমনে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়ানো। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিষয়ে কোন তথ্য থাকলে নিকটস্থ থানা অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে অবহিত করার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ করে ডিএমপি।