৬০ বছর বয়সে আবার প্রেম, গৌরীকে নিয়ে কী বললেন আমির খান
- Update Time : ১২:৪৫:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
- / ২০ Time View
দীর্ঘ বিরতির পর নতুন সিনেমা ‘সিতারে জমিন পর’ দিয়ে ফিরেছেন আমির খান। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও আছে নতুন খবর—নতুন প্রেমিকা গৌরী স্প্র্যাটকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন অভিনেতা। গতকাল শনিবার হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিটে হাজির হয়ে নিজের ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন আমির।
টানা ফ্লপ, এরপর…
‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ সুপারহিট হয়। কিন্তু এরপর নিজের কাজ নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছিলেন আমির খান। তাঁকে বলা হচ্ছিল ‘ওয়ান-ফিল্ম ওয়ান্ডার’ বা এক ছবির বিস্ময়। কীভাবে তিনি সেই সংকট থেকে ফিরে এলেন, জানালেন নিজেই। হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিটে কথা বলতে গিয়ে আমির ফিরে গেলেন নিজের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে—এমন এক সময়ে, যখন বিভ্রান্তি, ভুল সিদ্ধান্ত আর সৃজনশীল অস্থিরতা প্রায় তাঁকে বলিউড ছেড়ে যেতে বাধ্য করছিল।
আমির বলেন, “কেয়ামত সে কেয়ামত তক” আমার প্রথম ছবি, আর সেটাই হিট। রাতারাতি তারকা হয়ে যাই। প্রচুর অফার আসতে থাকে। যেসব পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলাম, তাঁদের থেকে অফার পাইনি…কিন্তু ভাবলাম, সবাই যখন ৩০-৪০টি ছবি করছে, আমি যদি ৮-১০টা করি, সমস্যা কোথায়!”
কিন্তু সিদ্ধান্তটা যে ভুল; খুব দ্রুতই বোঝা গেল। একের পর এক সিনেমার শিডিউল দিতে দিতেই চাপ বাড়তে লাগল। আমির বললেন, ‘আমি বুঝলাম ভয়ংকর ভুল করেছি। একসঙ্গে ২-৩টি ছবি করার মানুষই নই…এটাই আমার প্রথম শিক্ষাটা।’
তিনটি বিষয় জরুরি
এরপর একের পর এক তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন আমির। তিনি বুঝতে পারেন, একটি ছবির ভিত্তি যদি দুর্বল হয়, সেটি কখনোই দাঁড়াতে পারে না। ‘তিনটি বিষয় খুব জরুরি—স্ক্রিপ্ট, পরিচালক আর প্রযোজক। এই তিনটি ঠিক না থাকলে আমি আর কোনো ছবি করব না,’ বললেন তিনি।
সেই সময়ে যেসব প্রকল্প তড়িঘড়ি করে সই করেছিলেন, একের পর এক সেগুলো মুক্তি পেতে শুরু করল—আর পরপরই মুখ থুবড়ে পড়ল বক্স অফিসে।
‘একটা ফ্লপ, আরেকটা ফ্লপ, তৃতীয়টাও ফ্লপ। আমাকে বলা হলো “ওয়ান-ফিল্ম ওয়ান্ডার”। ঠিকই বলা হয়েছিল,’ নির্দ্বিধায় স্বীকার করেন আমির। তিনি যে ধরনের নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করছিলেন, তাঁদের সঙ্গে তাঁর ভাবনার কোনো মিলই ছিল না। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে কাঁদতেন তিনি। নিশ্চিত ছিলেন—এবারই বুঝি সব শেষ। সেই সময়ের স্মৃতি মনে করে আমির বলেন, ‘জানতাম বাকি যেসব ছবি লাইন দিয়ে আছে, সেগুলোর অবস্থাও খারাপ হবে। মনে হচ্ছিল ডুবে গেছি। সেদিনই শপথ করেছিলাম—আর কখনো কাজের জায়গায় সমঝোতা করব না।’
ধীরে ধীরে বদলানো সময়
পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে ‘দিল’ দিয়ে। এরপর নব্বইয়ের দশকে এসে আমির হয়ে ওঠেন বলিউডের অন্যতম নির্ভরযোগ্য মুখ—‘রাজা হিন্দুস্তানি’, ‘সারফারোশ’সহ একাধিক হিট ছবি দিয়ে। তারপর আসে তাঁর কর্মজীবনের সবচেয়ে প্রভাবশালী সময়—‘গজনি’, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘পিকে’, ‘দঙ্গল’—যার মধ্যে ‘দঙ্গল’ এখনো পর্যন্ত ভারতের সর্বকালের সর্বোচ্চ আয় করা ছবি।
৬০ বছর বয়সে আবার প্রেম!
চলতি বছরের মার্চে নিজের জন্মদিনে প্রেমিকা গৌরী স্প্র্যাটের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন আমির খান। এদিনের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ৬০ বছর বয়সে যে আবার প্রেমের দেখা পাবেন, সেটা তিনি নিজেও ভাবেননি। এদিন তিনি কথা বলেন নিজের দুই সাবেক স্ত্রী রীনা দত্ত ও কিরণ রাওয়ের সঙ্গে।
আমির বলেন, ‘রীনা অসাধারণ একজন মানুষ। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে আমরা আলাদা হয়েছি ঠিকই, কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের ভাঙন ঘটেনি। কিরণও একই রকম। বিবাহবন্ধন থেকে আমরা সরে এসেছি, কিন্তু সম্পর্কটা মানুষ হিসেবে আলাদা হয়নি। রীনা, তার বাবা-মা, কিরণ আর তার বাবা-মা—আমার বাবা-মাসহ আমরা আসলে একটা বড় পরিবার।’
অনুষ্ঠানে সঞ্চালক তাঁকে প্রশ্ন করেন, তিনি কি কখনো ভেবেছিলেন আবার নতুন সম্পর্কে জড়াবেন? আমির সোজাসাপটা জবাব দেন, ‘না, ভাবিনি। আমি এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছিলাম, যখন মনে হতো আর কারও সঙ্গে জীবনের সঙ্গী হিসেবে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারব না। কিন্তু একেবারেই অপ্রত্যাশিতভাবে গৌরীকে পেয়েছি। সে আমার জীবনে অনেক শান্তি, স্থিরতা নিয়ে এসেছে। দারুণ এক মানুষ সে; তাকে পেয়ে আমি খুব ভাগ্যবান।’
অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিবাহিত জীবন দুবার সফল হয়নি ঠিকই, কিন্তু রীনা, কিরণ আর এখন গৌরী—এই তিনজনকে জীবনে পাওয়া আমার জন্য বিরাট সৌভাগ্য। তারা আমাকে মানুষ হিসেবে অনেকটা গড়ে দিয়েছে।’
আমির খানের ব্যক্তিজীবন
১৯৮৬ সালে আমির বিয়ে করেন রীনা দত্তকে। তাঁদের দুই সন্তান—জুনায়েদ ও ইরা। ১৬ বছরের দাম্পত্যের পর ২০০২ সালে বিচ্ছেদ হয়। পরে ২০০৫ সালে বিয়ে করেন নির্মাতা কিরণ রাওকে, ২০১১ সালে তাঁদের ঘর আলো করে আসে ছেলে আজাদ। ২০২১ সালে আমির-কিরণ আলাদা হওয়ার ঘোষণা দেন—তবে এটিকে সম্পর্কের ‘বন্ধুত্বে রূপান্তর’ বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি। আজাদকে তাঁরা এখনো যৌথভাবে লালন-পালন করছেন।
আগামী কাজ
আমিরকে সামনে দেখা যাবে ‘হ্যাপি প্যাটেল: খতরনাক জাসুস’ সিনেমার বিশেষ চরিত্রে। আমির খান প্রোডাকশনসের ব্যানারে তৈরি এই স্পাই-কমেডির মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটছে অভিনেতা-কৌতুকশিল্পী বীর দাসের। একই সঙ্গে বড় পর্দায় ফিরছেন আমিরের ভাগনে ইমরান খানও। ছবিটি মুক্তি পাবে ২০২৬ সালের ১৬ জানুয়ারি।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়

















































































































































































