তারেক রহমান এখনও ভোটার হননি, ফিরছেন ডিসেম্বরের মাঝামাঝি
- Update Time : ০১:০২:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৬ Time View
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ কিংবা ভোট দিতে এখনও ভোটার হননি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আগামী মাসের মধ্যভাগে দেশে ফিরে তিনি ভোটার হবেন বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
নেতারা বলছেন, তারেক রহমান চাইলে লন্ডনে বসেই ভোটার হতে পারতেন। তবে তিনি বাংলাদেশে এসেই ভোটার হবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে ভোটার হয়েছেন কিনা, আমরা জানি না। প্রাপ্তবয়স্ক কেউ ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়লে তিনি যে কোনো সময় ভোটার হতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। যাদের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ১৮ বছর হয়েছে, তারা নতুন ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে যারা বাদ পড়েছেন, নির্বাচনের আগে তাদের আর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু যাদের বয়স বেশি বা আগে ভোটার ছিলেন, তাদের মধ্যে যারা বাদ পড়েছেন, তারা ভোটার হতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সুযোগ দেবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন সেই এলাকার ‘সাপ্লিমেন্টারি’ ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। যিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাঁকে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগেই ভোটার হতে হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। সে সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ছিলেন লন্ডনে। জোবাইদা রহমান সম্প্রতি দেশে ফিরে ভোটার হলেও তারেক রহমান ভোটার হননি। ভোটার হওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত তিনি নির্বাচন কমিশনে আবেদনও করেননি। দেশে ফিরেই তিনি ভোটার হবেন বলে বিএনপির দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
ছবিযুক্ত ভোটার আইডি কার্ড নিতে হলে আবেদনকারীর স্বাক্ষর, ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ বাধ্যতামূলক। ইতোমধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এর পরও নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে ভোটার হতে পারবেন তিনি। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যেহেতু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, তাই নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র দাখিলের আগেই তাঁকে ভোটার হতে হবে।
দেশে ফেরা নিয়ে প্রবল আগ্রহ
তারেক রহমানের দেশে আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও রয়েছে প্রবল আগ্রহ। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার কথা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তপশিলের পরপরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে দাবি দলের নেতাদের।
দলের কয়েকটি সূত্র জানায়, তারেক রহমান মধ্য ডিসেম্বরে দেশে ফিরতে পারেন। দেশে ফেরার আগে ওমরাহ হজ পালনের কথা রয়েছে। সেখান থেকে সরাসরি দেশে ফিরবেন তিনি। চার্টার্ড বিমানে তাঁর দেশে ফেরার সম্ভাবনার কথাও বলেছেন দলের এক শীর্ষ নেতা। তিনি বলেন, তাঁর নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থাও করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর চলাচলের বহরে থাকার জন্য দলের ত্যাগী আর সাহসী নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে একটি টিম গঠনও প্রায় চূড়ান্ত।
দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, তারেক রহমান দেশে ফিরে কোথায় উঠবেন এবং কোথায় অফিস করবেন, তাও প্রায় চূড়ান্ত। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিরাপত্তার বিষয় নিয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। এ ছাড়া খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে রেখে দুটি বুলেটপ্রুফ বাস ও গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেয় দলটি। এই গাড়ি কেনার অনুমতি দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে গাড়ি চলে এসেছে বলে দাবি সূত্রের। এ ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্যও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছে দলটি।
সরকারি সূত্র বলছে, তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই। তিনি যে কোনো সময় দেশে ফিরতে পারেন। তাঁর নিরাপত্তার জন্য যা যা চাওয়া হয়েছে, সেসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তিনি দেশে ফিরতে চাইলে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে সরকার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সমকালকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই জানেন, তিনি কবে দেশে ফিরবেন। তবে তাঁর দেশে ফেরার বিষয়ে আমরা সব সময়ই প্রস্তুত রয়েছি।
উঠবেন গুলশানের বাসভবনে
দলীয় সূত্র বলছে, গুলশান-২-এর ‘ফিরোজা’ ভবনে থাকেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এর পাশের ১৯৬ নম্বর বাড়িটি ১৯৮১ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর তৎকালীন সরকার তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেয়। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার গুলশান-২ অ্যাভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাড়ির নামজারি সম্পন্ন করে এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র বিএনপি চেয়ারপারসনের হাতে হস্তান্তর করে।
বাড়িটি এতদিন ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের কাছে ভাড়া দেওয়া ছিল। দেশে ফিরে এই বাড়িতেই থাকবেন তারেক রহমান। ইতোমধ্যে তাঁর থাকার জন্য বাড়িটি উপযোগী করে তুলতে সাজসজ্জা করা হয়েছে; লাগানো হয়েছে সিসিটিভি। বাড়িটির নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স। চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়েই অফিস করবেন তারেক রহমান। এ জন্য তাঁর বসার উপযোগী করেই কক্ষটি সাজানো হয়েছে।
দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তারেক রহমানের ফেরার বিষয়ে নানা কারণে গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। দলের অনেক সিনিয়র নেতাও জানেন না, কবে ফিরবেন তিনি। তবে তাঁর আসার কয়েক দিন আগে বিষয়টি প্রকাশ পাবে। তিনি যেদিন ফিরবেন, সেদিন লাখ লাখ নেতাকর্মী ও সমর্থক তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে রাজধানীতে জড়ো হবেন। দিনটি দেশের জন্য ঐতিহাসিক দিন হবে। সেদিনই বিএনপির নির্বাচনী প্রচারের অর্ধেকের বেশি হয়ে যাবে। তিনি দেশে এলে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস তৈরি হবে, সেটিও মাথায় রেখে নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
১৭ বছর ধরে লন্ডনে আছেন তারেক রহমান। ২০০৭ সালের ৭ মার্চ এক-এগারোর জরুরি অবস্থার সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাগারে তাঁর ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। পরের বছরে ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান। ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে যান তিনি। এর পর সেখান থেকেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়






































































































































































































