ঢাকা ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অটোরিকশার জন্য বন্ধুর হাতে খুন হয় ইয়াসিন

মেহেদী হাসান মেহের, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৭:২৪:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৫০ Time View

স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠেছে ফরিদাবাদের আকাশ বাতাস। একটি অটোরিকশার জন্য ঢাকা জেলার দোহার থানায় নিজের বন্ধুর হাতে নির্মম ভাবে খুন হয়েছেন এই গ্রামের ইয়াসিন মিয়া। ইয়াসিনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ গ্রামে। লাশ বাড়িতে আনতেই ফরদাবাদ গ্রাম জুড়ে কান্নার রোল ওঠে! পরে ফরদাবাদ উত্তরপাড়া কবরস্থানে ইয়াসিন মিয়াকে দাফন করা হয়। স্থানীয় শতশত মানুষ উপস্থিত ছিলেন জানাজায়।

এলাকাসী জানায়, ইয়াসিন একজন পরিশ্রমী এবং নম্র স্বভাবের ছেলে ছিল। বন্ধুর হাতে এভাবে প্রাণ হারানো বেদনাদায়ক।

ইয়াসিন ঢাকার জুরাইন এলাকায় অটোরিকশা চালাতেন। গত ১৬ নভেম্বর অটোরিকশা নিয়ে বের হওয়ার পর তিনি আর ঘরে ফেরেননি। ফোন বন্ধ পাওয়ায় পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা জানতে পারেন ইয়াসিনের মরদেহ দোহার থানার হেফাজতে রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ইয়াসিনকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ছুরিকাঘাত করার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সোহাগ (২২) কে গ্রেফতার করেছে দোহার থানা পুলিশ। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে চুরি হওয়া অটোরিকশাটিও উদ্ধার করা হয়।

গত সোমবার (১৭ নভেম্বর)  সন্ধ্যা সাতটার দিকে নিকড়া বিল এলাকার রাস্তার পাশ থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের একজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করে হাসপাতালে আনেন সোহাগ। তবে তাঁর কথায় অসংগতি পাওয়ায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সোহাগ ও ইয়াছিন রাজধানীর জুরাইনে একসঙ্গে থাকতেন। ইয়াছিনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে। জুরাইনে থাকার সময় তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কিছুদিন আগে সোহাগ দোহার উপজেলার খাড়াকান্দা এলাকার একটি গ্যারেজে কাজ নেন।

গত রোববার সোহাগ জুরাইনে ইয়াছিনের বাসায় বেড়াতে গিয়ে রাত কাটান। পরদিন সোমবার দুপুরে ইয়াছিনের নতুন অটোরিকশা নিয়ে দুজন দোহারের উদ্দেশে রওনা হন। সন্ধ্যার দিকে নিকড়া এলাকার বিলে পৌঁছে রাস্তার পাশে রিকশা রেখে সোহাগ ইয়াছিনকে নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করান। এরপর গলা ও মুখে ছুরিকাঘাত করে তাঁকে হত্যা করেন। পরে নিহত বন্ধুকে অটোরিকশায় দোহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইয়াছিনকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরে খবর পেয়ে দোহার থানা–পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে সোহাগের কাছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, জয়পাড়া যাওয়ার পথে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তবে তাঁর কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

লাশের সুরতহাল শেষে পরদিন মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেন সোহাগ। পরে বেলা দেড়টার দিকে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। নিহত ইয়াছিনের বাবা বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে দোহার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আলী বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামি প্রাথমিক স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

অটোরিকশার জন্য বন্ধুর হাতে খুন হয় ইয়াসিন

মেহেদী হাসান মেহের, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
Update Time : ০৭:২৪:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠেছে ফরিদাবাদের আকাশ বাতাস। একটি অটোরিকশার জন্য ঢাকা জেলার দোহার থানায় নিজের বন্ধুর হাতে নির্মম ভাবে খুন হয়েছেন এই গ্রামের ইয়াসিন মিয়া। ইয়াসিনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ গ্রামে। লাশ বাড়িতে আনতেই ফরদাবাদ গ্রাম জুড়ে কান্নার রোল ওঠে! পরে ফরদাবাদ উত্তরপাড়া কবরস্থানে ইয়াসিন মিয়াকে দাফন করা হয়। স্থানীয় শতশত মানুষ উপস্থিত ছিলেন জানাজায়।

এলাকাসী জানায়, ইয়াসিন একজন পরিশ্রমী এবং নম্র স্বভাবের ছেলে ছিল। বন্ধুর হাতে এভাবে প্রাণ হারানো বেদনাদায়ক।

ইয়াসিন ঢাকার জুরাইন এলাকায় অটোরিকশা চালাতেন। গত ১৬ নভেম্বর অটোরিকশা নিয়ে বের হওয়ার পর তিনি আর ঘরে ফেরেননি। ফোন বন্ধ পাওয়ায় পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা জানতে পারেন ইয়াসিনের মরদেহ দোহার থানার হেফাজতে রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ইয়াসিনকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ছুরিকাঘাত করার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সোহাগ (২২) কে গ্রেফতার করেছে দোহার থানা পুলিশ। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে চুরি হওয়া অটোরিকশাটিও উদ্ধার করা হয়।

গত সোমবার (১৭ নভেম্বর)  সন্ধ্যা সাতটার দিকে নিকড়া বিল এলাকার রাস্তার পাশ থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের একজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করে হাসপাতালে আনেন সোহাগ। তবে তাঁর কথায় অসংগতি পাওয়ায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সোহাগ ও ইয়াছিন রাজধানীর জুরাইনে একসঙ্গে থাকতেন। ইয়াছিনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে। জুরাইনে থাকার সময় তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কিছুদিন আগে সোহাগ দোহার উপজেলার খাড়াকান্দা এলাকার একটি গ্যারেজে কাজ নেন।

গত রোববার সোহাগ জুরাইনে ইয়াছিনের বাসায় বেড়াতে গিয়ে রাত কাটান। পরদিন সোমবার দুপুরে ইয়াছিনের নতুন অটোরিকশা নিয়ে দুজন দোহারের উদ্দেশে রওনা হন। সন্ধ্যার দিকে নিকড়া এলাকার বিলে পৌঁছে রাস্তার পাশে রিকশা রেখে সোহাগ ইয়াছিনকে নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করান। এরপর গলা ও মুখে ছুরিকাঘাত করে তাঁকে হত্যা করেন। পরে নিহত বন্ধুকে অটোরিকশায় দোহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইয়াছিনকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরে খবর পেয়ে দোহার থানা–পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে সোহাগের কাছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, জয়পাড়া যাওয়ার পথে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তবে তাঁর কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

লাশের সুরতহাল শেষে পরদিন মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেন সোহাগ। পরে বেলা দেড়টার দিকে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। নিহত ইয়াছিনের বাবা বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে দোহার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আলী বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামি প্রাথমিক স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।