ঢাকা ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জামায়াতের টিকিট কাটলে জান্নাতের টিকিট হবে, কোথায় আছে বলুক: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৫:২০:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৬০ Time View

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জামায়াতের টিকিট (ভোট) কাটলে জান্নাতের টিকিট কাটা হবে। কোথায় আছে আমাকে বলুক তারা, দেখিয়ে দিক কোথায় আছে।’

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মাল্টিপারপাস হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথাগুলো বলেন।

ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নিয়ে নেওয়া ইসলাম কখনো বলে না বলে জানান ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এই কথাগুলো আমি এ জন্যই বলছি, যে এগুলো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কথাগুলো বলছে সবাই। এই কথাগুলো আজকে জনগণের সামনে আসা উচিত। বেশি করে আসা উচিত।’

‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উন্নয়নে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষার কেয়ারটেকারগণের দেশ ও জাতি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপি নেতা এ কথাগুলো বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে মসজিদভিত্তিক উপানুষ্ঠানিক শিক্ষক কার্যক্রম (মউশিক) কেয়ারটেকার কল্যাণ পরিষদ।

আলোচনা সভায় জামায়াতকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই মহলটি রাজনৈতিক অঙ্গনে দাঁড়াতে পারছিল না। জিয়াউর রহমান সাহেব তাদের সুযোগ করে দেন রাজনৈতিক অঙ্গনে আসার। (স্বাধীনতার পরে) তারা প্রথমে আইডিএল (ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ) নামে এসেছিল। তারপরে তারা বিএনপির সঙ্গে কাজ করেছে। বিএনপিও তাদের নিয়ে কাজ করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে গত ১০ বছর তাদের ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে পরাজিত করার জন্য দৃশ্যমান কোনো কাজ দেখা যায়নি।’

ফখরুল আরও বলেন, ‘শুনতে পাই ছাত্রলীগের মধ্যে তারা ঢুকেছিল। শুনেছি কিন্তু জানা নাই আমার। অর্থাৎ ছাত্রলীগ সেজে তারা সেখানে ছিল। এই ধরনের কাজ তো আমরা করতে পারি না। আমরা সরাসরি সামনাসামনি লড়াই করেছি। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ২০ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ১৭০০ মানুষকে নেতা, আমাদের এমপিসহ গুম করে দেওয়া হয়েছে। আমরা ২০০, ৩০০, ৪০০ মামলা নিয়ে আছি।’

খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারাগারে রাখা হয়েছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন পর্যন্ত দেশে ফিরতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘ছেলেরা জীবন দিয়েছে, সবার ত্যাগের কারণে একটা সুযোগ এসেছে। এখন সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেন সুন্দর, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে একটা গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে।’

পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) দিতে হবে বলে একটা রাজনৈতিক দল চিৎকার করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘তারা বলছে, পিআর না হলে নির্বাচন হবে না। অনেক হুংকারও দিয়েছে। এখন আবার সুর নরম হয়ে গেছে। এখন দেখা যাচ্ছে নির্বাচনের জন্য চতুর্দিকে দৌড়ঝাঁপ চলছে। এগুলো ঠিক নয়। মানুষকে যেটা বলা হবে, সেদিকেই সঠিকভাবে যাওয়া উচিত।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে মসজিদে খুতবায় কি পড়া হবে, তা কাগজে লিখে পাঠানো হতো। এটা ভেবে আরও দুঃখ হয়, এ দেশেরই কিছু আলেম শেখ হাসিনার সঙ্গে মিটিং করে তাকে “কওমি জননী” উপাধি দিয়েছে।’

একটা ফ্যাসিস্ট শক্তি দলীয় লোক বসিয়ে দেশের সব প্রতিষ্ঠান নষ্ট করে দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন একটা মর্যাদাশীল, ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। সেখানে যদি দলীয় লোককে বসানো হয়, যারা বাইরে ইসলামের কথা বলে কিন্তু মুখে ইসলাম বিশ্বাসই করে না, তাহলে সেটি সঠিকভাবে চলবে না। কোন দেশে জাতীয় মসজিদের খতিব পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যায়। এটি প্রমাণ করে নিয়োগটা রাজনৈতিকভাবে হয়েছে।

ঐকমত্য কমিশন যে পিআর পদ্ধতির কথা বলেছে সেটি সাধারণ মানুষ ঠিকমতো বুঝে না বলেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বোঝে ওয়ান ম্যান ওয়ান ভোট। একজন ব্যক্তি দাঁড়াবে, তার মার্কা থাকবে। যে মার্কায় আমি ভোট দেব, তাই তো? এটাই আমরা সব সময় সেই আদিকাল থেকে দেখে আসছি। এখন আপনি এটাকে পরিবর্তন করবেন তার জন্য আবার গণভোট করবেন। গণভোটে থাকবে “হ্যাঁ”, “না”। এখন গণভোটে নাকি চারটা প্রশ্ন থাকবে। চারটা প্রশ্ন একটা গণভোটের ব্যালটে এটা মানুষ কিছু এখন পর্যন্ত বুঝতেই পারছে না। শেষ দিন পর্যন্ত বুঝতেও পারবে না।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মাওলানা শাহ্ মো. নেছারুল হক। সঞ্চালনা করেন মসজিদভিত্তিক উপানুষ্ঠানিক শিক্ষক কার্যক্রম (মউশিক) কেয়ারটেকার কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. জবাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান।

সভায় আরও বক্তব্য দেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক (অব.) মুহাম্মদ রফিক উল ইসলাম, শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সফিকুর রহমান কিরণ, ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন প্রমুখ।

 

Please Share This Post in Your Social Media

জামায়াতের টিকিট কাটলে জান্নাতের টিকিট হবে, কোথায় আছে বলুক: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০৫:২০:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জামায়াতের টিকিট (ভোট) কাটলে জান্নাতের টিকিট কাটা হবে। কোথায় আছে আমাকে বলুক তারা, দেখিয়ে দিক কোথায় আছে।’

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মাল্টিপারপাস হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথাগুলো বলেন।

ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নিয়ে নেওয়া ইসলাম কখনো বলে না বলে জানান ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এই কথাগুলো আমি এ জন্যই বলছি, যে এগুলো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কথাগুলো বলছে সবাই। এই কথাগুলো আজকে জনগণের সামনে আসা উচিত। বেশি করে আসা উচিত।’

‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উন্নয়নে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষার কেয়ারটেকারগণের দেশ ও জাতি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপি নেতা এ কথাগুলো বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে মসজিদভিত্তিক উপানুষ্ঠানিক শিক্ষক কার্যক্রম (মউশিক) কেয়ারটেকার কল্যাণ পরিষদ।

আলোচনা সভায় জামায়াতকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই মহলটি রাজনৈতিক অঙ্গনে দাঁড়াতে পারছিল না। জিয়াউর রহমান সাহেব তাদের সুযোগ করে দেন রাজনৈতিক অঙ্গনে আসার। (স্বাধীনতার পরে) তারা প্রথমে আইডিএল (ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ) নামে এসেছিল। তারপরে তারা বিএনপির সঙ্গে কাজ করেছে। বিএনপিও তাদের নিয়ে কাজ করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে গত ১০ বছর তাদের ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে পরাজিত করার জন্য দৃশ্যমান কোনো কাজ দেখা যায়নি।’

ফখরুল আরও বলেন, ‘শুনতে পাই ছাত্রলীগের মধ্যে তারা ঢুকেছিল। শুনেছি কিন্তু জানা নাই আমার। অর্থাৎ ছাত্রলীগ সেজে তারা সেখানে ছিল। এই ধরনের কাজ তো আমরা করতে পারি না। আমরা সরাসরি সামনাসামনি লড়াই করেছি। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ২০ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ১৭০০ মানুষকে নেতা, আমাদের এমপিসহ গুম করে দেওয়া হয়েছে। আমরা ২০০, ৩০০, ৪০০ মামলা নিয়ে আছি।’

খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারাগারে রাখা হয়েছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন পর্যন্ত দেশে ফিরতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘ছেলেরা জীবন দিয়েছে, সবার ত্যাগের কারণে একটা সুযোগ এসেছে। এখন সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেন সুন্দর, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে একটা গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে।’

পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) দিতে হবে বলে একটা রাজনৈতিক দল চিৎকার করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘তারা বলছে, পিআর না হলে নির্বাচন হবে না। অনেক হুংকারও দিয়েছে। এখন আবার সুর নরম হয়ে গেছে। এখন দেখা যাচ্ছে নির্বাচনের জন্য চতুর্দিকে দৌড়ঝাঁপ চলছে। এগুলো ঠিক নয়। মানুষকে যেটা বলা হবে, সেদিকেই সঠিকভাবে যাওয়া উচিত।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে মসজিদে খুতবায় কি পড়া হবে, তা কাগজে লিখে পাঠানো হতো। এটা ভেবে আরও দুঃখ হয়, এ দেশেরই কিছু আলেম শেখ হাসিনার সঙ্গে মিটিং করে তাকে “কওমি জননী” উপাধি দিয়েছে।’

একটা ফ্যাসিস্ট শক্তি দলীয় লোক বসিয়ে দেশের সব প্রতিষ্ঠান নষ্ট করে দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন একটা মর্যাদাশীল, ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। সেখানে যদি দলীয় লোককে বসানো হয়, যারা বাইরে ইসলামের কথা বলে কিন্তু মুখে ইসলাম বিশ্বাসই করে না, তাহলে সেটি সঠিকভাবে চলবে না। কোন দেশে জাতীয় মসজিদের খতিব পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যায়। এটি প্রমাণ করে নিয়োগটা রাজনৈতিকভাবে হয়েছে।

ঐকমত্য কমিশন যে পিআর পদ্ধতির কথা বলেছে সেটি সাধারণ মানুষ ঠিকমতো বুঝে না বলেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বোঝে ওয়ান ম্যান ওয়ান ভোট। একজন ব্যক্তি দাঁড়াবে, তার মার্কা থাকবে। যে মার্কায় আমি ভোট দেব, তাই তো? এটাই আমরা সব সময় সেই আদিকাল থেকে দেখে আসছি। এখন আপনি এটাকে পরিবর্তন করবেন তার জন্য আবার গণভোট করবেন। গণভোটে থাকবে “হ্যাঁ”, “না”। এখন গণভোটে নাকি চারটা প্রশ্ন থাকবে। চারটা প্রশ্ন একটা গণভোটের ব্যালটে এটা মানুষ কিছু এখন পর্যন্ত বুঝতেই পারছে না। শেষ দিন পর্যন্ত বুঝতেও পারবে না।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মাওলানা শাহ্ মো. নেছারুল হক। সঞ্চালনা করেন মসজিদভিত্তিক উপানুষ্ঠানিক শিক্ষক কার্যক্রম (মউশিক) কেয়ারটেকার কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. জবাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান।

সভায় আরও বক্তব্য দেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক (অব.) মুহাম্মদ রফিক উল ইসলাম, শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সফিকুর রহমান কিরণ, ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন প্রমুখ।