ভূমিকম্প হলে কী করবেন, কী করবেন না
- Update Time : ০২:৩৫:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
- / ৯৭ Time View
বড় ভূমিকম্পে ঢাকার কী হবে তার আভাস দিয়ে গেল ছুটির দিনের সকালে মাঝারি মাত্রার ভূকম্পনের ঘটনা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পে প্রাণক্ষয় কমাতে মহড়া বাড়ানোর পাশাপাশি সচেতনতা তৈরিতে জোর দিতে হবে।
আর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বলছে, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ এবং ঢাকা অঞ্চল ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সংস্থাটি ভূমিকম্প মোকাবিলায় সব পর্যায়ে পূর্বপ্রস্তুতি ও সচেতনতা তৈরির পরামর্শ দিয়েছে।
ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, “বাংলাদেশ কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও ঝুঁকির দিক দিয়ে খুব উপরে রয়েছে। যে পরিমাণ শক্তি ইন্ডিয়ান-বার্মা প্লেটের সংযোগ স্থলে জমা হয়ে আছে, সেই শক্তিটা যদি বের হয় তাহলে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে।
“এটা আগামীকালও হতে পারে, আগামী ৫০ বছর পরেও হতে পারে। কখন হবে সেটা আমরা বলতে পারি না, তবে যেটা হবে সেটা খুব মারাত্মক হবে। সাবডাকশন জোনের ভূমিকম্পগুলা ভয়ঙ্কর হয়।”
ভূমিকম্পে করণীয়
• ভূমিকম্পের প্রথম ঝাঁকুনির সঙ্গে সঙ্গে খোলা জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সম্ভব হলে আশপাশের সবাইকে বের হয়ে যেতে বলতে হবে। সম্ভব হলে দ্রুত বৈদ্যুতিক ও গ্যাসের সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে। কোনো কিছু সঙ্গে নেওয়ার জন্য অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না।
• যদি ঘর থেকে বের হওয়া না যায়, সে ক্ষেত্রে ইটের গাঁথুনি দেওয়া পাকা ঘর হলে ঘরের কোণে এবং কলাম ও বিমের তৈরি ভবন হলে কলামের গোড়ায় আশ্রয় নিতে হবে।
• ভূমিকম্পের সময় বেশি নড়াচড়া, বাইরে বের হবার চেষ্টা করা, জানালা দিয়ে লাফ দেবার চেষ্টা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা উচিত।
• সাধারণ নিয়ম হল- এ সময় যত বেশি মুভমেন্ট করবেন, তত বেশি আহত হবার সম্ভাবনা থাকবে।
• আমেরিকান রেডক্রসের পরামর্শ অনুযায়ী- ভূমিকম্পের সময় সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল ‘ড্রপ-কাভার-হোল্ড অন’ বা ‘ডাক-কাভার’ পদ্ধতি। অর্থাৎ কম্পন শুরু হলে মেঝেতে বসে পড়ুন, তারপর কোন শক্ত টেবিল বা ডেস্কের নিচে ঢুকে কাভার নিন, এমন ডেস্ক বেছে নিন বা এমনভাবে কাভার নিন যেন প্রয়োজনে আপনি কাভারসহ মুভ করতে পারেন।
• কোনো ভবন ভূমিকম্পরোধক হলে তা খুব কমই ধসে পড়ে; যেটা হয় তা হল আশেপাশের বিভিন্ন জিনিস বা ফার্নিচার গায়ের উপর পড়ে আহত হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই এগুলো থেকে বাঁচার জন্য এ সময় কোন শক্ত ডেস্ক বা টেবিলের নিচে ঢুকে আশ্রয় নেওয়া জরুরি।
• ভূমিকম্পের সময় এলিভেটর/লিফট ব্যবহার পরিহার করুন।
• ভূমিকম্পের সময় যদি গাড়িতে থাকেন তবে গাড়ি বন্ধ করে ভেতরে বসে থাকুন। গাড়ির বাইরে থাকলে আহত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
• ‘মেইন শক’ বা মূল ভূমিকম্পের আগে এবং পরে মৃদু থেকে মাঝারি আরো কিছু ভূমিকম্প হতে পারে যেগুলো ‘ফোরশক’ এবং ‘আফটার শক’ নামে পরিচিত। সতর্ক না থাকলে এগুলো থেকেও বড় বিপদ হয়ে যেতে পারে। সাধারণত কোনো বড় ভূমিকম্পে ‘আফটার শক’ প্রথম ঘণ্টার মধ্য থেকে শুরু করে কয়েক দিনের মধ্যে হতে পারে।
• প্রথম ভূমিকম্পের পর ইউটিলিটি লাইনগুলো (গ্যাস, বিদ্যুত ইত্যাদি) একনজর দেখে নিন। কোথাও কোন লিক বা ড্যামেজ দেখলে মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন।
ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়লে করণীয়
• বিম, দেয়াল, কংক্রিটের ছাদ ইত্যাদির মধ্যে শরীরের কোনো অংশ চাপা পড়লে, বের হওয়ার সুযোগ যদি না-ই থাকে, তবে বেশি নড়াচড়া করা যাবে না। তাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে।
• ম্যাচ জ্বালাবেন না। দালান ধসে পড়লে গ্যাস লিক হয়ে থাকতে পারে।
• চিৎকার করে ডাকাডাকি শেষ বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করুন। কারণ, চিৎকারের সময় মুখে ক্ষতিকারক ধুলাবালি ঢুকে যেতে পারে। পাইপে বা দেয়ালে বাড়ি দিয়ে বা মুখে শিস বাজিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে পারেন।
ভূমিকম্প মোকাবেলায় জন্য পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য ফায়ার সার্ভিস কিছু পরামর্শ দিয়েছে।
• বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০ অনুযায়ী ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মাণ।
• ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো ভবনগুলোর সংস্কার ও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।
• বহুতল ও বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা।
• ইউটিলিটি সার্ভিসের মধ্যে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের লাইনের সঠিকতা নিশ্চিত করা।
• ভূমিকম্প চলাকালীন সময়ে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বিভিন্ন করণীয় সম্পর্কে নিয়মিত মহড়া অনুশীলন ও প্রচারের ব্যবস্থা করা।
• জরুরি টেলিফোন নম্বর যেমন- ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশ, হাসাপাতাল ও অন্যান্য জরুরি নাম্বারসমূহ ব্যক্তিগত পর্যায়ের পাশাপাশি সকল ভবন বা স্থাপনায় সংরক্ষণ করা এবং তা দৃশ্যমান স্থানে লিখে রাখা।
• ভলান্টিয়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দুর্যোগকালীন সময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখা।
• জরুরি প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য সরঞ্জামাদির মধ্যে টর্চলাইট, রেডিও (অতিরিক্ত ব্যাটারিসহ), বাঁশি, হ্যামার, হেলমেট- কুশন, শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রী, ফার্স্ট এইড বক্স, শিশু যত্নের সামগ্রী ইত্যাদি বাসা-বাড়িতে নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা যাতে ভূমিকম্প পরবর্তীতে আটকা পরলে তা ব্যবহার করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা যায়।
• সকল পর্যায়ে তদারকি সংস্থার কার্যক্রমে সহযোগিতা করা।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়






































































































































































































