ঢাকা ০৮:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ অনুরোধে ভারত সাড়া দেবে, মনে করেন না জয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০২:৪১:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১১ Time View

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের রায় মাথায় নিয়ে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, তার মাকে প্রত্যর্পণের যে অনুরোধ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার করেছে, ভারত তা গ্রহণ করবে বলে তিনি মনে করেন না।

তিনি বলেন, “ভারত সবসময়ই ভালো বন্ধু, আর এই সংকটের সময় ভারত মূলত আমার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। তিনি যদি বাংলাদেশ না ছাড়তেন, তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। তাই আমার মায়ের জীবন রক্ষার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র) মোদীর সরকারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।”

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া থেকে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন জয়। তার ওই বক্তব্যের ভিডিও প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ক্ষমতা হারানোর পর দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আন্দোলন দমাতে হত্যার আদেশ, উসকানি এবং তা বাস্তবায়নে সহযোগিতার মত মানবতাবিরোধী অপরাধে তাকে পলাতক দেখিয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলে।

জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারবিরোধী ওই আন্দোলনে ১,৪০০ জনের মত নিহত হয়ে থাকতে পারে।

সেই বিচারের রায়ে গত ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

ওই রায়ে ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে’ মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সেদিন বলেন, শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণে ভারতকে আবার চিঠি দেবে অন্তর্বর্তী সরকার।

“ভারত যদি এই গণহত্যাকারীকে আশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রাখে, তাহলে ভারতকে বুঝতে হবে, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে একটা শত্রুতা এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় আচরণ।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সেদিন আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ফেরত দিতে ভারতের প্রতি আবারও আহ্বান জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আজকের রায়ে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জুলাই হত্যাকাণ্ডের জন্য অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশ আশ্রয় দিলে তা হবে অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল।

“আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন অবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে এটি ভারতের জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্বও বটে।”

অন্যদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকারের তরফে বলা হয়, “বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়ের বিষয় জেনেছে ভারত।

“নিকট প্রতিবেশী হিসেবে ভারত বাংলাদেশের জনগণের সর্বোচ্চ স্বার্থের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার মধ্যে দেশটির শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতার বিষয় রয়েছে। সেদিক বিবেচনায় আমরা সব অংশীজনের সঙ্গে সর্বদা গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ত হব।”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকায় শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে বড় ধরনের পরীক্ষায় ফেলেছে বলে বিশ্লেষকদের ভাষ্য।

তবে জয় বলছেন, “আমি মনে করি (নয়াদিল্লি) খুব ভালোভাবেই জানে এই প্রত্যর্পণ অনুরোধ কীভাবে সামলাতে হয়। আমি মনে করি না ভারত সরকার এ ধরনের বেআইনি অনুরোধে সাড়া দেবে।

“এ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই, কারণ আমি ভারতের গণতন্ত্রের ওপর এবং আইনের শাসনে তাদের বিশ্বাসের ওপর আস্থা রাখি।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেসব অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তা অস্বীকার করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তাকে আদালতে “আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যায্য সুযোগ দেওয়া হয়নি।”

তবে শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে চব্বিশের গণআন্দোলন সামাল দিতে চেয়েছে, তাতে ‘কিছু ভুল’ ছিল বলে মনে করেন জয়।

তিনি বলেন, “গত বছর বিক্ষোভ চলাকালে আমাদের সরকার—হ্যাঁ, শুরুতে কিছু ভুল ব্যবস্থাপনা হয়েছিল। বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। আমাদের সরকার সহিংসতা থামানোর চেষ্টা করেছিল।

“কিন্তু হ্যাঁ, এর পেছনে নিশ্চয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও ছিল। আপনি দেখেছেন, একটি অনির্বাচিত সরকার দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছে। সবকিছুই হয়েছে অগণতান্ত্রিকভাবে।”

Please Share This Post in Your Social Media

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ অনুরোধে ভারত সাড়া দেবে, মনে করেন না জয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০২:৪১:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের রায় মাথায় নিয়ে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, তার মাকে প্রত্যর্পণের যে অনুরোধ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার করেছে, ভারত তা গ্রহণ করবে বলে তিনি মনে করেন না।

তিনি বলেন, “ভারত সবসময়ই ভালো বন্ধু, আর এই সংকটের সময় ভারত মূলত আমার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। তিনি যদি বাংলাদেশ না ছাড়তেন, তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। তাই আমার মায়ের জীবন রক্ষার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র) মোদীর সরকারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।”

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া থেকে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন জয়। তার ওই বক্তব্যের ভিডিও প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ক্ষমতা হারানোর পর দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আন্দোলন দমাতে হত্যার আদেশ, উসকানি এবং তা বাস্তবায়নে সহযোগিতার মত মানবতাবিরোধী অপরাধে তাকে পলাতক দেখিয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলে।

জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারবিরোধী ওই আন্দোলনে ১,৪০০ জনের মত নিহত হয়ে থাকতে পারে।

সেই বিচারের রায়ে গত ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

ওই রায়ে ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে’ মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সেদিন বলেন, শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণে ভারতকে আবার চিঠি দেবে অন্তর্বর্তী সরকার।

“ভারত যদি এই গণহত্যাকারীকে আশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রাখে, তাহলে ভারতকে বুঝতে হবে, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে একটা শত্রুতা এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় আচরণ।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সেদিন আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ফেরত দিতে ভারতের প্রতি আবারও আহ্বান জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আজকের রায়ে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জুলাই হত্যাকাণ্ডের জন্য অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশ আশ্রয় দিলে তা হবে অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল।

“আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন অবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে এটি ভারতের জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্বও বটে।”

অন্যদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকারের তরফে বলা হয়, “বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়ের বিষয় জেনেছে ভারত।

“নিকট প্রতিবেশী হিসেবে ভারত বাংলাদেশের জনগণের সর্বোচ্চ স্বার্থের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার মধ্যে দেশটির শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতার বিষয় রয়েছে। সেদিক বিবেচনায় আমরা সব অংশীজনের সঙ্গে সর্বদা গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ত হব।”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকায় শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে বড় ধরনের পরীক্ষায় ফেলেছে বলে বিশ্লেষকদের ভাষ্য।

তবে জয় বলছেন, “আমি মনে করি (নয়াদিল্লি) খুব ভালোভাবেই জানে এই প্রত্যর্পণ অনুরোধ কীভাবে সামলাতে হয়। আমি মনে করি না ভারত সরকার এ ধরনের বেআইনি অনুরোধে সাড়া দেবে।

“এ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই, কারণ আমি ভারতের গণতন্ত্রের ওপর এবং আইনের শাসনে তাদের বিশ্বাসের ওপর আস্থা রাখি।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেসব অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তা অস্বীকার করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তাকে আদালতে “আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যায্য সুযোগ দেওয়া হয়নি।”

তবে শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে চব্বিশের গণআন্দোলন সামাল দিতে চেয়েছে, তাতে ‘কিছু ভুল’ ছিল বলে মনে করেন জয়।

তিনি বলেন, “গত বছর বিক্ষোভ চলাকালে আমাদের সরকার—হ্যাঁ, শুরুতে কিছু ভুল ব্যবস্থাপনা হয়েছিল। বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। আমাদের সরকার সহিংসতা থামানোর চেষ্টা করেছিল।

“কিন্তু হ্যাঁ, এর পেছনে নিশ্চয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও ছিল। আপনি দেখেছেন, একটি অনির্বাচিত সরকার দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছে। সবকিছুই হয়েছে অগণতান্ত্রিকভাবে।”