ঢাকা ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বুটেক্সের আবাসিক হলে মশার উপদ্রব, বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক

নিয়ামুল ইসলাম তামিম, বুটেক্স প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৩:৪০:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
  • / ২৮ Time View

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) আবাসিক হলগুলোতে সম্প্রতি মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হলে বসবাসরত আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

​বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের জন্য বরাদ্দ তিনটি হল— জি এম এ জি ওসমানী হল, সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল ও শহীদ আজিজ হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অক্টোবর এবং নভেম্বরের এই সময়টায় অন্যান্য মাসের তুলনায় মশার উপদ্রব বেড়েছে কয়েক গুণ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনিয়মিত ফগিংয়ের পাশাপাশি হল প্রশাসন থেকে নেওয়া হচ্ছে না বাড়তি কোনো মশা নিধন ব্যবস্থা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দিনের বেলাতেও মশারি টাঙিয়ে পড়ছেন কিংবা শুয়ে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর পাশে অবস্থিত ড্রেনে বহুদিন ধরে জমে আছে নোংরা এবং জীবাণুবাহী স্থির পানি। হল সংলগ্ন খেলার মাঠের পাশে রাখা হয়েছে ময়লার স্তূপ। এছাড়া হলের পচাবাসি খাবারও ড্রেনের ভেতরেই আটকে থাকতে দেখা যায়। এসব ময়লার স্তূপ ও ড্রেনে আটকে থাকা নোংরা পানিতে মশার প্রজনন দ্রুত বাড়ছে।

জি ​এম এ জি ওসমানী হলে বসবাসরত ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইকরামুল হাসান বলেন, হলের নাজুক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং সময়মতো ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না হওয়ায় ডেঙ্গু বাহিত মশার উপদ্রব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। আমাদের ২৪ ঘণ্টা মশারির মধ্যে থাকতে হচ্ছে। তার ওপর নিয়মিত মশার স্প্রে না করায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। আমাদের ব্যাচের জন্য বরাদ্দ চারটি রুমে আমরা ৩০ থেকে ৩২ জন থাকি। এর মধ্যে ১৪-১৫ জন ইতোমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, এদের মধ্যে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

​ডেঙ্গুতে আক্রান্ত জি এম এ জি ওসমানী হলের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জুবায়ের বলেন, আমি প্রায় ৭ দিন ধরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আমার প্লাটিলেট ২৯,০০০ এ নেমে গিয়েছিল এবং আমাকে প্লাজমা দিতে হয়েছে। হাসপাতালে থাকার কারণে আমি ক্লাস টেস্ট ও ল্যাব ফাইনালে অংশ নিতে পারিনি।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও মশা নিধনে হল কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে জি এম এ জি ওসমানী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক কিছু সমস্যার কারণে ব্যস্ত থাকায় আমি এখনও হলে পুরোপুরিভাবে কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। তবে, হল প্রতিনিধিরা মশা ও ডেঙ্গু সংক্রান্ত সমস্যা জানানোর পর আমি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ডিএনসিসি অফিসে যোগাযোগ করেছি। তারা নিশ্চিত করেছে হলে নিয়মিত মশার স্প্রে কার্যক্রম চালানো হবে। এছাড়াও ডেঙ্গু ঝুঁকি কমাতে আমরা পরিচ্ছন্নতা, পানি নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিচ্ছি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থীরাও প্রায় একই পরিস্থিতির কথা জানান। তাদের মতে, প্রতিদিন হলের বাইরে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে দীর্ঘদিনের আবর্জনা এক জায়গায় পড়ে থাকায় মশা–মাছির উপদ্রব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ফগার মেশিনও বেশ কিছুদিন ধরে চালু করা হচ্ছে না। এতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটছে আবাসিক শিক্ষার্থীদের।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের ৪৯তম ব্যাচের আবাসিক শিক্ষার্থী মুজাহিদ শুভ বলেন, হলের মাঠের উত্তর-পূর্ব দিকটায় স্টাফ কোয়ার্টারের আশপাশে অনেক দিন ধরে ময়লা-আবর্জনা জমে রয়েছে। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, মশার উপদ্রবও ভয়াবহভাবে বেড়েছে। ডেঙ্গুর এমন সংবেদনশীল সময়ে এটি আমাদের জন্য বড়ো ধরনের ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই আমরা চাই হল প্রশাসন খুব দ্রুত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ নিক।

এ বিষয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের প্রভোস্ট (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী অধ্যাপক মো. মোতাকাব্বির হাসানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। হলের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, মশা নিয়ন্ত্রণ করা এবং ছাত্রদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা নিয়মিত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। প্রতিদিন দুই হলের মাঝের ড্রেনে লিকুইড মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, যা লার্ভা দ্রুত ধ্বংস করতে সহায়ক। পাশাপাশি, ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে নিয়মিত ফগিং কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও হলের ভেতর ও আশপাশে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি ফ্লোরে ডাস্টবিন ব্যবহার নিশ্চিত করতে ছাত্রদের সচেতন করা হচ্ছে এবং যেখানে ময়লা জমে— সেসব স্থান চিহ্নিত করে পরিষ্কার করা হচ্ছে। তারপরও ছাত্রদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছি। আর হলের মাঠে ময়লা জমার বিষয়টি আমি সম্প্রতি জানতে পেরেছি— খুব শিগ্‌গিরই এখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শহীদ আজিজ হলের পরিস্থিতিও ভিন্ন নয়। শিক্ষার্থীরা জানান, সন্ধ্যার পর রিডিং রুম ও থাকার কক্ষগুলোতে মশার উপদ্রব বাড়ায় শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পড়াশুনার পরিবেশ বিঘ্ন হচ্ছে। এছাড়া, আজিজ হলেও একজন শিক্ষার্থীর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শহীদ আজিজ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব জানান, এ বিষয়ে আমরা প্রভোস্ট টিমসহ ভিসি স্যারের সঙ্গে শিগ্‌গিরই বসব, যেন দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর না করে হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা নিজেরাই নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন; এজন্য একটি ফগিং মেশিন কেনার চিন্তা-ভাবনা করছি।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২২ হাজার, আর নভেম্বরে এখনই ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্বেগ বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে, বুটেক্স শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলোতে মশার উপদ্রব শিক্ষার্থীদের মনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রশাসন যেন দ্রুতই পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং এসব সমস্যার সমাধান করে।

উল্লেখ্য, হল প্রশাসন একাধিকবার মশানিরোধোক ঔষধ প্রয়োগ করলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

Please Share This Post in Your Social Media

বুটেক্সের আবাসিক হলে মশার উপদ্রব, বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক

নিয়ামুল ইসলাম তামিম, বুটেক্স প্রতিনিধি
Update Time : ০৩:৪০:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) আবাসিক হলগুলোতে সম্প্রতি মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হলে বসবাসরত আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

​বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের জন্য বরাদ্দ তিনটি হল— জি এম এ জি ওসমানী হল, সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল ও শহীদ আজিজ হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অক্টোবর এবং নভেম্বরের এই সময়টায় অন্যান্য মাসের তুলনায় মশার উপদ্রব বেড়েছে কয়েক গুণ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনিয়মিত ফগিংয়ের পাশাপাশি হল প্রশাসন থেকে নেওয়া হচ্ছে না বাড়তি কোনো মশা নিধন ব্যবস্থা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দিনের বেলাতেও মশারি টাঙিয়ে পড়ছেন কিংবা শুয়ে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর পাশে অবস্থিত ড্রেনে বহুদিন ধরে জমে আছে নোংরা এবং জীবাণুবাহী স্থির পানি। হল সংলগ্ন খেলার মাঠের পাশে রাখা হয়েছে ময়লার স্তূপ। এছাড়া হলের পচাবাসি খাবারও ড্রেনের ভেতরেই আটকে থাকতে দেখা যায়। এসব ময়লার স্তূপ ও ড্রেনে আটকে থাকা নোংরা পানিতে মশার প্রজনন দ্রুত বাড়ছে।

জি ​এম এ জি ওসমানী হলে বসবাসরত ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইকরামুল হাসান বলেন, হলের নাজুক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং সময়মতো ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না হওয়ায় ডেঙ্গু বাহিত মশার উপদ্রব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। আমাদের ২৪ ঘণ্টা মশারির মধ্যে থাকতে হচ্ছে। তার ওপর নিয়মিত মশার স্প্রে না করায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। আমাদের ব্যাচের জন্য বরাদ্দ চারটি রুমে আমরা ৩০ থেকে ৩২ জন থাকি। এর মধ্যে ১৪-১৫ জন ইতোমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, এদের মধ্যে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

​ডেঙ্গুতে আক্রান্ত জি এম এ জি ওসমানী হলের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জুবায়ের বলেন, আমি প্রায় ৭ দিন ধরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আমার প্লাটিলেট ২৯,০০০ এ নেমে গিয়েছিল এবং আমাকে প্লাজমা দিতে হয়েছে। হাসপাতালে থাকার কারণে আমি ক্লাস টেস্ট ও ল্যাব ফাইনালে অংশ নিতে পারিনি।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও মশা নিধনে হল কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে জি এম এ জি ওসমানী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক কিছু সমস্যার কারণে ব্যস্ত থাকায় আমি এখনও হলে পুরোপুরিভাবে কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। তবে, হল প্রতিনিধিরা মশা ও ডেঙ্গু সংক্রান্ত সমস্যা জানানোর পর আমি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ডিএনসিসি অফিসে যোগাযোগ করেছি। তারা নিশ্চিত করেছে হলে নিয়মিত মশার স্প্রে কার্যক্রম চালানো হবে। এছাড়াও ডেঙ্গু ঝুঁকি কমাতে আমরা পরিচ্ছন্নতা, পানি নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিচ্ছি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থীরাও প্রায় একই পরিস্থিতির কথা জানান। তাদের মতে, প্রতিদিন হলের বাইরে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে দীর্ঘদিনের আবর্জনা এক জায়গায় পড়ে থাকায় মশা–মাছির উপদ্রব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ফগার মেশিনও বেশ কিছুদিন ধরে চালু করা হচ্ছে না। এতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটছে আবাসিক শিক্ষার্থীদের।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের ৪৯তম ব্যাচের আবাসিক শিক্ষার্থী মুজাহিদ শুভ বলেন, হলের মাঠের উত্তর-পূর্ব দিকটায় স্টাফ কোয়ার্টারের আশপাশে অনেক দিন ধরে ময়লা-আবর্জনা জমে রয়েছে। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, মশার উপদ্রবও ভয়াবহভাবে বেড়েছে। ডেঙ্গুর এমন সংবেদনশীল সময়ে এটি আমাদের জন্য বড়ো ধরনের ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই আমরা চাই হল প্রশাসন খুব দ্রুত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ নিক।

এ বিষয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের প্রভোস্ট (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী অধ্যাপক মো. মোতাকাব্বির হাসানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। হলের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, মশা নিয়ন্ত্রণ করা এবং ছাত্রদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা নিয়মিত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। প্রতিদিন দুই হলের মাঝের ড্রেনে লিকুইড মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, যা লার্ভা দ্রুত ধ্বংস করতে সহায়ক। পাশাপাশি, ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে নিয়মিত ফগিং কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও হলের ভেতর ও আশপাশে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি ফ্লোরে ডাস্টবিন ব্যবহার নিশ্চিত করতে ছাত্রদের সচেতন করা হচ্ছে এবং যেখানে ময়লা জমে— সেসব স্থান চিহ্নিত করে পরিষ্কার করা হচ্ছে। তারপরও ছাত্রদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছি। আর হলের মাঠে ময়লা জমার বিষয়টি আমি সম্প্রতি জানতে পেরেছি— খুব শিগ্‌গিরই এখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শহীদ আজিজ হলের পরিস্থিতিও ভিন্ন নয়। শিক্ষার্থীরা জানান, সন্ধ্যার পর রিডিং রুম ও থাকার কক্ষগুলোতে মশার উপদ্রব বাড়ায় শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পড়াশুনার পরিবেশ বিঘ্ন হচ্ছে। এছাড়া, আজিজ হলেও একজন শিক্ষার্থীর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শহীদ আজিজ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব জানান, এ বিষয়ে আমরা প্রভোস্ট টিমসহ ভিসি স্যারের সঙ্গে শিগ্‌গিরই বসব, যেন দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর না করে হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা নিজেরাই নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন; এজন্য একটি ফগিং মেশিন কেনার চিন্তা-ভাবনা করছি।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২২ হাজার, আর নভেম্বরে এখনই ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্বেগ বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে, বুটেক্স শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলোতে মশার উপদ্রব শিক্ষার্থীদের মনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রশাসন যেন দ্রুতই পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং এসব সমস্যার সমাধান করে।

উল্লেখ্য, হল প্রশাসন একাধিকবার মশানিরোধোক ঔষধ প্রয়োগ করলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।