রংপুরে অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে রেখে ঢাকায় এসে হলেন ২৬ খণ্ড
- Update Time : ০৬:৩৪:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
- / ৩৬ Time View
তিন দিন আগে অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে রেখে প্রবাসী বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে ঢাকা যান কাচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হক। এরপর থেকে স্ত্রী লাকী বেগম আশরাফুলকে ফোন করলে তার বন্ধু জরেজ ফোন রিসিভ করতেন। আশরাফুলের খোঁজ করলে তিনি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত আছেন বলে জানায়। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ভাইকে নিয়ে থানায় যান লাকী বেগম। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন স্বামী আশরাফুল হকের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে ঢাকায়। এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন। বারবার মুর্ছা যান।
আশরাফুল হকের (৪২) বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে। বাবা মো. আব্দুর রশিদ ও মা মোছা. এছরা খাতুন। আশরাফুল হক ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ ও আলু আমদানির ব্যবসা করতেন। এ কাজে তার সরকারি লাইসেন্সও ছিল।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে নীল রঙের দুটি ড্রামের ভেতর থেকে ২৬ টুকরা খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে পরিচয় শনাক্ত করা না গেলেও পরে ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশ্লেষণে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হয় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট।
খুন হওয়া আশরাফুল হকের শ্যালক আব্দুল মজিদ জানান, আশরাফুল তার বাবাকে রংপুরে একটি হাসপাতালে রেখে মঙ্গলবার মালয়েশিয়া ফেরত বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে ঢাকায় যান। বুধবার বিকেল ৫টায় আশরাফুল তার স্ত্রী লাকী বেগমের সঙ্গে শেষ কথা বলেন। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। তাই তারা বৃহস্পতিবার বিকেলে বদরগঞ্জ থানায় জিডি করতে আসেন। এখানে এসে জানতে পারে আশরাফুল হক ঢাকায় খুন হয়েছেন।
আব্দুল মজিদ বলেন, বুধবার বিকেলে বোনের সাথে কথা হয় আশরাফুলের। তখন সে বোনকে বলেছে, বাবা হাসপাতালে রিলিজ দিবে, টাকা পয়সা দিছি। বাবাক নিয়া আইসো। এটাই শেষ কথা। এরপর থাকি আশরাফুলকে কল দিলে তার বন্ধু জরেজ ধরে। আর বলে, আশরাফুল ব্যস্ত আছে, কালেকশনে গেছে।
আব্দুল মজিদ বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে ফোন দিলে ফের জরেজ ফোন ধরে। কিন্তু আশরাফুলকে দেয় না। এ জন্য বোন জরেজের স্ত্রীর কাছে যায়। জরেজের স্ত্রী তাকে ফোন দিলে আশরাফুলের ফোন ধরে না কেন জানতে চাইলে জরেজ বলেন আশরাফুলের ফোন ড্রেনে কুড়ায় পাইছে। এরপর বোনসহ থানায় আসি। এসে শুনি তাকে খুন করছে। তাঁর লাশ উদ্ধার হইছে ঢাকায়। এ কথা শোনার পর আমার বোন তো পাগল হয়ে গেছে । আমরা হত্যাকারী বিচার চাই।
বদরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আতিকুর রহমান বলেন, নিহত আশরাফুল হকের স্ত্রী স্বজনেরা থানায় এসেছিল। তাদের কাছ থেকে আমরা বিভিন্ন প্রকার তথ্য নিয়েছি। সেগুলো দিয়ে ওসি রমনা ও শাহবাগকে সহযোগিতা করছি। এ ঘটনায় ঢাকাতে মামলা হচ্ছে। নিহতের পরিবার সেখানে যাচ্ছে।
আশরাফুল হক হিলি থেকে কাঁচামাল কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি বিক্রি করতেন। তার বন্ধু জরেজ মিয়া শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন তার পরিবার। তিনি দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় ছিলেন। দেশে আশার পর আশরাফুল হকের সঙ্গে ঘুরতেন। তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ধার চেয়েছিলেন।
নিহত আশরাফুল হকের মৃত্যুতে তার গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনরা বলছেন, কারা কেন তাকে এমন নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আর গ্রামবাসী বলছেন, আশরাফুল হক সহজসরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। গ্রামের বিভিন্ন গরীব-অসহায় মানুষদের পাশে থাকার পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয় কাজে তিনি সবসময় সহযোগিতা করতেন। তার এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ আশরাফুল হকের পরিচিত কয়েকজন জানান, মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে জমির রেজিস্ট্রি করতে ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করে নেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি স্থানীয় মসজিদে মাগরিবের নামাজও আদায় করেন। এরপর রাতে তার অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে রেখে বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে ঢাকায় যান।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়






































































































































































































