ঢাকা ১০:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৭:০২:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৬ Time View

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পূর্বঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকেই নগর ও জেলার বিভিন্ন সড়কে ছিল স্বাভাবিক দিনের মতো যানবাহনের চলাচল। তবে দূরপাল্লার কিছু বাস কম দেখা গেছে।  দুপুরে কক্সবাজার প্রবেশমুখ, শাহ আমানত সেতু, কর্ণফুলী, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে- সড়কে নেই তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা, কোথাও নেই লকডাউনের ছায়া।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই মহাসড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। অফিসগামী মানুষ ও পণ্যবাহী ট্রাক নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে। লকডাউন ঘিরে কোনো ধরনের নাশকতা বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এখনো পর্যন্ত ঘটেনি। তবে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বা শঙ্কা কাজ করছে, যা অনেকের চলাচলে প্রভাব ফেলেছে।

বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, চাঁদগাঁও, নতুন ব্রিজ এলাকার বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে যাত্রী সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। অনেক বাস চালক ঢাকা ও আশপাশে সংঘটিত সহিংসতার খবরে আতঙ্কিত হয়ে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামেননি।

হানিফ পরিবহনের চালক মাহমুদ করিম বলেন, ‘আমরা একটু ভয়ে ভয়ে গাড়ি বের করেছি। কারণ রাতভর খবর পাচ্ছিলাম ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে আগুন, বাস ভাঙচুর চলছে। তবে চট্টগ্রামে এসে দেখি সব ঠিকঠাক আছে, রাস্তা স্বাভাবিক।’

এদিকে কর্ণফুলী ও পতেঙ্গা এলাকায় সিএনজি ও ছোট গাড়ির সংখ্যা কিছুটা কম হলেও ব্যক্তিগত গাড়ি, রাইডশেয়ার এবং মোটরসাইকেল চলাচল ছিল প্রায় স্বাভাবিক। শহরের অভ্যন্তরে সড়কগুলোতে যানজট না থাকলেও ব্যস্ত এলাকায় মানুষের চলাচল ছিল কম।

সিএনজি চালক রফিক মিয়া বলেন, ‘সকাল থেকে ভালো যাত্রী পাইনি। প্রতিদিনের মতো লোকজন নাই রাস্তায়। শুনছি আওয়ামী লীগ নাকি লকডাউন দিছে, কিন্তু চট্টগ্রামে কিছু দেখিনি। তবে মানুষজন একটু আতঙ্কে আছে রাস্তাঘাট ফাঁকা।’

পটিয়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জসিম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মহাসড়কে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যানচলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে। আমাদের নিয়মিত টহল অব্যাহত আছে, যাতে কেউ পরিস্থিতি অস্থির করতে না পারে।’

চট্টগ্রাম মহানগরের অভ্যন্তরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সকাল থেকে নগরের প্রধান প্রধান মোড়—কাজির দেউরি, নিউ মার্কেট, চকবাজার, কোতোয়ালি, জামালখান, আন্দরকিল্লা, দুইনম্বর গেইট, টাইগারপাস, আগ্রাবাদ, বাকলিয়া, বকশিরহাট ও বহদ্দারহাট এলাকায় লোকজনের চলাচল ছিল আগের তুলনায় অনেক কম। দোকানপাট খোলা থাকলেও ক্রেতা ছিল কম। রাস্তায় যানবাহন কম থাকায় কোথাও কোথাও নীরবতা নেমে এসেছে।

নগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে টহল দিচ্ছিল সিএমপি পুলিশ। পাশাপাশি গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যদেরও দেখা গেছে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) মোহাম্মদ লিয়াকত আলী খান বলেন, ‘বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা বা অস্থিরতার খবর পাওয়া যায়নি। ট্রাফিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক।’

এদিকে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেও নগরের বিভিন্ন মোড়ে বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে। তারা হাতে লাঠি ও ব্যানার নিয়ে মিছিল করেছে লকডাউনের বিপক্ষে। বিভিন্ন জায়গায় স্লোগান দিয়ে তারা জনগণকে স্বাভাবিক চলাচলের আহ্বান জানায়।

তবে এই লাঠিধারী অবস্থান অনেকের মনে কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ মনে করছেন, পরিস্থিতি যেকোনো সময় পাল্টে যেতে পারে। তাই অনেকেই প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। ফলে নগরের জনজীবনে এক ধরনের অস্বাভাবিক নীরবতা দেখা গেছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। বিমান ও ট্রেন চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। সকাল থেকে ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে এবং আগত যাত্রীদের মধ্যেও তেমন আতঙ্ক দেখা যায়নি।

চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, জনগণের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা কাজ করছে। অনেকে অফিসে না গিয়ে ঘরে অবস্থান করছেন, আবার কেউ কেউ জরুরি প্রয়োজনে বের হচ্ছেন। যানবাহন স্বাভাবিক হলেও যাত্রী কম থাকায় সিএনজি ও বাসচালকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারেনি। মহাসড়ক ও নগরজুড়ে ছিল স্বাভাবিক যানচলাচল, সক্রিয় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আর জনগণ—ভয় ও স্বস্তির মাঝামাঝি এক দিন পার করেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
Update Time : ০৭:০২:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পূর্বঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকেই নগর ও জেলার বিভিন্ন সড়কে ছিল স্বাভাবিক দিনের মতো যানবাহনের চলাচল। তবে দূরপাল্লার কিছু বাস কম দেখা গেছে।  দুপুরে কক্সবাজার প্রবেশমুখ, শাহ আমানত সেতু, কর্ণফুলী, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে- সড়কে নেই তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা, কোথাও নেই লকডাউনের ছায়া।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই মহাসড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। অফিসগামী মানুষ ও পণ্যবাহী ট্রাক নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে। লকডাউন ঘিরে কোনো ধরনের নাশকতা বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এখনো পর্যন্ত ঘটেনি। তবে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বা শঙ্কা কাজ করছে, যা অনেকের চলাচলে প্রভাব ফেলেছে।

বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, চাঁদগাঁও, নতুন ব্রিজ এলাকার বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে যাত্রী সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। অনেক বাস চালক ঢাকা ও আশপাশে সংঘটিত সহিংসতার খবরে আতঙ্কিত হয়ে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামেননি।

হানিফ পরিবহনের চালক মাহমুদ করিম বলেন, ‘আমরা একটু ভয়ে ভয়ে গাড়ি বের করেছি। কারণ রাতভর খবর পাচ্ছিলাম ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে আগুন, বাস ভাঙচুর চলছে। তবে চট্টগ্রামে এসে দেখি সব ঠিকঠাক আছে, রাস্তা স্বাভাবিক।’

এদিকে কর্ণফুলী ও পতেঙ্গা এলাকায় সিএনজি ও ছোট গাড়ির সংখ্যা কিছুটা কম হলেও ব্যক্তিগত গাড়ি, রাইডশেয়ার এবং মোটরসাইকেল চলাচল ছিল প্রায় স্বাভাবিক। শহরের অভ্যন্তরে সড়কগুলোতে যানজট না থাকলেও ব্যস্ত এলাকায় মানুষের চলাচল ছিল কম।

সিএনজি চালক রফিক মিয়া বলেন, ‘সকাল থেকে ভালো যাত্রী পাইনি। প্রতিদিনের মতো লোকজন নাই রাস্তায়। শুনছি আওয়ামী লীগ নাকি লকডাউন দিছে, কিন্তু চট্টগ্রামে কিছু দেখিনি। তবে মানুষজন একটু আতঙ্কে আছে রাস্তাঘাট ফাঁকা।’

পটিয়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জসিম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মহাসড়কে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যানচলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে। আমাদের নিয়মিত টহল অব্যাহত আছে, যাতে কেউ পরিস্থিতি অস্থির করতে না পারে।’

চট্টগ্রাম মহানগরের অভ্যন্তরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সকাল থেকে নগরের প্রধান প্রধান মোড়—কাজির দেউরি, নিউ মার্কেট, চকবাজার, কোতোয়ালি, জামালখান, আন্দরকিল্লা, দুইনম্বর গেইট, টাইগারপাস, আগ্রাবাদ, বাকলিয়া, বকশিরহাট ও বহদ্দারহাট এলাকায় লোকজনের চলাচল ছিল আগের তুলনায় অনেক কম। দোকানপাট খোলা থাকলেও ক্রেতা ছিল কম। রাস্তায় যানবাহন কম থাকায় কোথাও কোথাও নীরবতা নেমে এসেছে।

নগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে টহল দিচ্ছিল সিএমপি পুলিশ। পাশাপাশি গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যদেরও দেখা গেছে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) মোহাম্মদ লিয়াকত আলী খান বলেন, ‘বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা বা অস্থিরতার খবর পাওয়া যায়নি। ট্রাফিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক।’

এদিকে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেও নগরের বিভিন্ন মোড়ে বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে। তারা হাতে লাঠি ও ব্যানার নিয়ে মিছিল করেছে লকডাউনের বিপক্ষে। বিভিন্ন জায়গায় স্লোগান দিয়ে তারা জনগণকে স্বাভাবিক চলাচলের আহ্বান জানায়।

তবে এই লাঠিধারী অবস্থান অনেকের মনে কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ মনে করছেন, পরিস্থিতি যেকোনো সময় পাল্টে যেতে পারে। তাই অনেকেই প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। ফলে নগরের জনজীবনে এক ধরনের অস্বাভাবিক নীরবতা দেখা গেছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। বিমান ও ট্রেন চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। সকাল থেকে ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে এবং আগত যাত্রীদের মধ্যেও তেমন আতঙ্ক দেখা যায়নি।

চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, জনগণের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা কাজ করছে। অনেকে অফিসে না গিয়ে ঘরে অবস্থান করছেন, আবার কেউ কেউ জরুরি প্রয়োজনে বের হচ্ছেন। যানবাহন স্বাভাবিক হলেও যাত্রী কম থাকায় সিএনজি ও বাসচালকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারেনি। মহাসড়ক ও নগরজুড়ে ছিল স্বাভাবিক যানচলাচল, সক্রিয় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আর জনগণ—ভয় ও স্বস্তির মাঝামাঝি এক দিন পার করেছে।