জাতীয় নির্বাচনে নাশকতার আশঙ্কা, ইসির প্রস্তুতি
- Update Time : ১২:০৮:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৩ Time View
ডিসেম্বরের প্রথমদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে রয়েছে কমিশন। তবে নির্বাচনের আগে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসি।
সাম্প্রতিক এক উচ্চপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসংক্রান্ত বৈঠকে কমিশন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশে নাশকতা, সহিংসতা ও গুজব ছড়ানোর মতো ঘটনা ঘটতে পারে। সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরাও বৈঠকে একই ধরনের শঙ্কা জানিয়েছেন।
বৈঠকের কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, ভোটারদের বাধা দেওয়া, নির্বাচনি কর্মকর্তাদের ওপর হামলা এবং ভোটের সততা (ইন্টিগ্রিটি) নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনের মোট ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৮ হাজার ৬৬৩টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
রোববার বৈঠকের কার্যবিবরণী সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), র্যাব, সিআইডি, ডিজিএফআই ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ইসির ধারণা, বিদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের পোস্টাল ভোটিং প্রক্রিয়ায় নাশকতা বা জালিয়াতির চেষ্টা হতে পারে। নির্বাচনকালীন সময়ে দেশে অবৈধ অস্ত্রের জোগান আসতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে।
এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে গুজব, ভুল তথ্য ও ভয়েস ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে চরিত্র হননের প্রচেষ্টা হতে পারে, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “নির্বাচনপূর্ব সময়ে কিছু অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, পরাজিত প্রার্থীর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা নির্বাচনের সততা নিয়ে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “মানুষের ভয়েস ক্লোন করে বিভ্রান্তি ছড়ানো কিংবা প্রবাসীদের ভোটিং প্রক্রিয়া বানচাল করার চেষ্টা হতে পারে। এসব মোকাবিলায় সব বাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকতে হবে।”
বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হামলা, ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, “ভোটগ্রহণের সময় সেনাবাহিনীকে যদি বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়, তাহলে তারা আরও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে।”
এছাড়া ভোটগ্রহণ সামগ্রী ও নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার সুপারিশও করেন তিনি।
বৈঠকে আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক বলেন, “আগের নির্বাচনের সঙ্গে এবারের তুলনা করা ঠিক হবে না, কারণ এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ। রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত আনসার সদস্যদের নির্বাচনে মোতায়েন করা হবে না।”
ডিজিএফআই প্রধান বলেন, নির্বাচনে গুজব অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
সিআইডি প্রধান জানান, ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ও এআই-নির্ভর গুজব ছড়ানোর একাধিক প্রচেষ্টা শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র্যাবের সাইবার ইউনিট এ বিষয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এসবি প্রধানের প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনের সময় অবৈধ অস্ত্র ও অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন। সিআইডিকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
ওই বৈঠকে ২২টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, নাশকতা প্রতিরোধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। জুলাই সনদ অনুযায়ী গণভোট করতে গেলে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে পরিবর্তন আসতে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা করা হবে এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ভোটগ্রহণ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।
একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “তফসিল ঘোষণার সময় ঘনিয়ে এসেছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক উত্তাপ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কমিশনের প্রধান উদ্বেগের বিষয়।”
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিশন ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে গুজব, ডিজিটাল বিভ্রান্তি ও সম্ভাব্য নাশকতা মোকাবিলাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে নির্বাচন কমিশন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়





































































































































































































