ঢাকা ১০:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বুটেক্সে শিক্ষার্থীর ওপর শারীরিক হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল, বহিষ্কার দাবি

নিয়ামুল ইসলাম তামিম, বুটেক্স প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৬:০২:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫
  • / ২৫ Time View

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অভিষেক চন্দ শ্রাবণের ওপর শারীরিক হামলার প্রতিবাদে আজ (৬ নভেম্বর) দুপুরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বুটেক্সের পকেট গেট থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান নেয়। এ সময় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা ‘আমি কে, তুমি কে, অভিষেক অভিষেক!’, ‘আজ অভিষেক কাল কে, বুটেক্সে র‍্যাগিং থামাবে কে?’, ‘ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা কোথায়? জবাব চাই, জবাব দাও!’ এবং ‘বুটেক্সে অন্যায়ের বিচার চাই, সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার চাই’—এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।

তারা অভিযুক্ত এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ বিন কবির নির্ঝর, একই ব্যাচের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মৃদুল এবং টেক্সটাইল মেশিনারি ডিজাইন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স বিভাগের সাইদুর রহমান রাফির বহিষ্কার দাবি করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিষেক চন্দ শ্রাবণ বলেন, ‘আমার ওপর এরকম হামলা হবে আমি বুঝতেই পারিনি। আমি আমার বন্ধু শেফাককে বাঁচাতে গিয়ে ভাইকে শুধু থামিয়ে ছিলাম। সেখান থেকে ভাই আমাকে টার্গেট করে এমনভাবে হামলা করলেন এবং পরদিন ডেকে নিয়ে গিয়ে আমার কথা না শুনেই আবারও আক্রমণ করেন। আমি বুটেক্সে দুই বছর ধরে ক্লাস করছি—কখনও কোনো সিনিয়রের সঙ্গে বেয়াদবি করিনি। আমি এসেছি পড়াশোনা করতে, এই ধরনের ঘটনায় জড়ানোর কোনো কারণ নেই। আমার ওপর অন্যায় হয়েছে, আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সেই সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও চাই।’

ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাঈম বলেন, ‘র‍্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাসে অভিষেকের মতো একজন শিক্ষার্থীর গায়ে বিনা কারণে হাত তোলা হয়েছে। ও যদি কোনো ভুলও করে থাকে, তবুও এভাবে শারীরিকভাবে আঘাত করার অধিকার কারও নেই। সিনিয়রত্বের নামে এ ধরনের নির্যাতন মেনে নেওয়া হবে না। আমরা চাই, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিক, যেন ভবিষ্যতে আর কেউ এমন সাহস না পায়।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং তদন্ত কমিটি তাদের কাজ করছে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে আগামী রবিবার শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ক্যাম্পাসকে যারা অস্থিতিশীল করতে চাইবে, তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান খান বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলাকারী কেউ পার পাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় বিধান অনুযায়ী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।’

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেন, দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে তারা আইনি পদক্ষেপসহ আরও কঠোর আন্দোলনে নামবে।

উল্লেখ্য, গত ৪ নভেম্বর বুটেক্সে অনুষ্ঠিত ফুটবল ফিয়েস্তা ২.০–এর ফাইনাল ম্যাচে ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগের খেলোয়াড় ও দর্শকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সে সময় সাংবাদিকদের ভিডিও ধারণে বাধা দেওয়াসহ একাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ওই ঘটনার জের ধরে পরদিন ৫ নভেম্বর ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অভিষেক চন্দ শ্রাবণের ওপর শারীরিক হামলার ঘটনা ঘটে। দুই দিনের এই পৃথক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং উভয় ঘটনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী রবিবার শৃঙ্খলা বোর্ডের সভায় ঘোষণা করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

বুটেক্সে শিক্ষার্থীর ওপর শারীরিক হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল, বহিষ্কার দাবি

নিয়ামুল ইসলাম তামিম, বুটেক্স প্রতিনিধি
Update Time : ০৬:০২:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অভিষেক চন্দ শ্রাবণের ওপর শারীরিক হামলার প্রতিবাদে আজ (৬ নভেম্বর) দুপুরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বুটেক্সের পকেট গেট থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান নেয়। এ সময় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা ‘আমি কে, তুমি কে, অভিষেক অভিষেক!’, ‘আজ অভিষেক কাল কে, বুটেক্সে র‍্যাগিং থামাবে কে?’, ‘ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা কোথায়? জবাব চাই, জবাব দাও!’ এবং ‘বুটেক্সে অন্যায়ের বিচার চাই, সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার চাই’—এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।

তারা অভিযুক্ত এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ বিন কবির নির্ঝর, একই ব্যাচের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মৃদুল এবং টেক্সটাইল মেশিনারি ডিজাইন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স বিভাগের সাইদুর রহমান রাফির বহিষ্কার দাবি করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিষেক চন্দ শ্রাবণ বলেন, ‘আমার ওপর এরকম হামলা হবে আমি বুঝতেই পারিনি। আমি আমার বন্ধু শেফাককে বাঁচাতে গিয়ে ভাইকে শুধু থামিয়ে ছিলাম। সেখান থেকে ভাই আমাকে টার্গেট করে এমনভাবে হামলা করলেন এবং পরদিন ডেকে নিয়ে গিয়ে আমার কথা না শুনেই আবারও আক্রমণ করেন। আমি বুটেক্সে দুই বছর ধরে ক্লাস করছি—কখনও কোনো সিনিয়রের সঙ্গে বেয়াদবি করিনি। আমি এসেছি পড়াশোনা করতে, এই ধরনের ঘটনায় জড়ানোর কোনো কারণ নেই। আমার ওপর অন্যায় হয়েছে, আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সেই সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও চাই।’

ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাঈম বলেন, ‘র‍্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাসে অভিষেকের মতো একজন শিক্ষার্থীর গায়ে বিনা কারণে হাত তোলা হয়েছে। ও যদি কোনো ভুলও করে থাকে, তবুও এভাবে শারীরিকভাবে আঘাত করার অধিকার কারও নেই। সিনিয়রত্বের নামে এ ধরনের নির্যাতন মেনে নেওয়া হবে না। আমরা চাই, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিক, যেন ভবিষ্যতে আর কেউ এমন সাহস না পায়।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং তদন্ত কমিটি তাদের কাজ করছে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে আগামী রবিবার শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ক্যাম্পাসকে যারা অস্থিতিশীল করতে চাইবে, তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান খান বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলাকারী কেউ পার পাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় বিধান অনুযায়ী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।’

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেন, দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে তারা আইনি পদক্ষেপসহ আরও কঠোর আন্দোলনে নামবে।

উল্লেখ্য, গত ৪ নভেম্বর বুটেক্সে অনুষ্ঠিত ফুটবল ফিয়েস্তা ২.০–এর ফাইনাল ম্যাচে ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগের খেলোয়াড় ও দর্শকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সে সময় সাংবাদিকদের ভিডিও ধারণে বাধা দেওয়াসহ একাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ওই ঘটনার জের ধরে পরদিন ৫ নভেম্বর ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অভিষেক চন্দ শ্রাবণের ওপর শারীরিক হামলার ঘটনা ঘটে। দুই দিনের এই পৃথক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং উভয় ঘটনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী রবিবার শৃঙ্খলা বোর্ডের সভায় ঘোষণা করা হবে।