ঢাকা ১০:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
অস্ত্রের মহড়া ও গোলাগুলিতে আতঙ্কিত চরবাসী

দৌলতপুরে পদ্মার দূর্গম চর দখল নিতে সক্রিয় এক ডজন সন্ত্রাসী বাহিনী

আব্দুস সবুর
  • Update Time : ১২:১৮:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১২০০ Time View

৩০ অক্টোবর সকাল থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনী ও হত্যা মামলার আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মার দূর্গম ও বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল দখল নিতে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে অন্তত একডজন সন্ত্রাসী বাহিনী। অস্ত্রের সশস্ত্র মহড়া ও গোলাগুলিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে চরের নিরীহ মানুষ।

পদ্মার চরের খড়ের মাঠ দখল নিয়ে গত কয়েকদিন আগে দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধে ৩জন নিহত হওয়ার ঘটনায় চরবাসীর দিন কাটছে উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। আবার কেউ ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।

ভারত সীমান্তঘেঁষা চরাঞ্চল হওয়ার কারণে পদ্মার চর অপরাধীদের যেন অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পদ্মার চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাকন বাহিনী ও মন্ডল বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আধিপত্য বিস্তার ও খড়ের মাঠ দখল নিতে এই দুই বাহিনীর মধ্যে প্রায়ই গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বালুমহল দখল নিয়েও রয়েছে তাদের মধ্যে বিরোধ। এরই জের ধরে গত ২৭ অক্টোবর দুপুরে মন্ডল বাহিনী ও কাকন বাহিনীর মধ্যে মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজার পদ্মার দূর্গম চরে ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কয়েক ঘন্টা ধরে চলা বন্দুকযুদ্ধে উভয় বাহিনীর আমান মন্ডল (৩৬), নাজমুল মন্ডল (২৬) ও লিটন আলী ঘোষ (৩০) নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় মুনতাজ মন্ডল (৩২) ও রাকিব মন্ডল (১৮) নামে আরো দু’জন। শুধু এই দুই সন্ত্রাসী বাহিনী নয়, সক্রিয় রয়েছে আরো অন্তত ১০টি সন্ত্রাসী বাহিনী। এরমধ্যে রয়েছে টুকু বাহিনী, সাইদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, শরিফ কাইগি বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনী বাহিনী উল্লেখযোগ্য।

২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে ফিলিপনগর ইউপি চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুকে হত্যার মধ্যদিয়ে বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের জানান দেয়। এরপর থেকে তারা নানা ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড ঘটিয়ে থাকে। এসব বাহিনীর দু’একজন সদস্য পুলিশের অভিযানে পড়লেও তারা জামিনে এসে আবারও সক্রিয় হয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে।

এসব বাহিনীর সদস্যরা রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে থাকার কারণে উপজেলার মরিচা, ফিলিপনগর ও চিলমারী ইউনিয়নের পদ্মার চরের জমি দখল, ফসল লুট, বাথানের গরু-মহিষ লুট, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, বালু উত্তোলন, মাদক ও অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব সন্ত্রাসী বাহিনী পদ্মার চরে নিজেরা সশস্ত্র সম্রাজ্য গড়ে তুলে অপরাধ কার্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিগ্নে ও নির্ভয়ে। সচারাচার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চালানো সম্ভব না হওয়ায় অপরাধের অভায়রণ্য হয়ে পড়েছে চরাঞ্চল। শুধুমাত্র দৌলতপুরের পদ্মার চর নয়, এসব বাহিনী রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলার দূর্গম চরের রয়েছে তাদের বিস্তার।

সম্প্রতি দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর চরে কাকন বাহিনী ও মন্ডল বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধে দুই বাহিনী ৩ সদস্য নিহত হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায়র আসামি ধরতে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের একাধিক টিম পদ্মার চরে সাঁড়াশি অভিযান চালায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করেত না পারলেও অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুরের পদ্মারচরে বর্তমানে ডজনখানেক সন্ত্রাসী বাহিনী থাকলেও ২০ বছর আগে এখানে দুটি সন্ত্রাসী বাহিনীর উত্থান ঘটেছিল। একটি ছাপাত-পান্না বাহিনী অপরটি ও লালচাঁদ বাহিনী। একইভাবে দুই বাহিনীর সন্ত্রাসীরা সেসময় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতো। তাদের অপরাধ কর্মকান্ডে এলাকার সাধারণ মানুষ ছিল অসহায়, ভীতসন্ত্রস্থ ও বন্দী। দুই বাহিনীর হাতে সেসময় অনন্ত ৪১ জন খুন হয়। যা ওই সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার হয়।

পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানে ‘ক্রসফাযারে’ দুই বাহিনীর প্রধান লালচাঁদ, ছাপাত ও পান্নাসহ তাদের সহযোগিরা নিহত হলে পরবর্তীতে কাকন বাহিনী চরাঞ্চল নিয়ন্ত্রনে নেয়। বাহিনী প্রধান কাকনের বিরুদ্ধে পাবনার ঈশ্বরদী, রাজশাহীর বাঘা, নাটোরের লালপুর ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানায় অর্ধডজন মামলা হয়েছে। কাকন পাবনার ঈশ্বরদী কলেজ রোডের বাসিন্দা হলেও তার বাবার বাড়ি দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামে।

এছাড়াও টুকু ও গিট্টু সোহাগ বাহিনী, সাইদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, নাজমুল বাহিনী, শরিফ কাইগি বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনীর প্রধান সহ সহযোগি সন্ত্রাসীদের বাড়ি ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়।

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুকে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করে আলোচনায় আসে টুকু বাহিনী। বাহিনীর প্রধান তরিকুল ইসলাম ওরফে টুকু’র বাড়ি ফিলিপনগর গ্রামে। বর্তমানে টুকু বাহিনীর সদস্য প্রায় ২০ জনের মত। ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হত্যায় বাহিনী প্রধান টুকু ও গিট্টু সোহাগ বাহিনীর বেশ কয়েকজন সহযোগী গ্রেপ্তার হলেও জামিনে মুক্ত হয়ে একই অপরাধে জড়িত রয়েছে তারা।

এছাড়াও চলতি বছরের ১০ ফেব্রয়ারি রাতে মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর মন্ডলপাড়া এলাকায় রাজু আহমেদ (১৮) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে সাইদ বাহিনী। বাহিনীর প্রধান আবু সাঈদ মন্ডল (৩৫) মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর দক্ষিণ ভাঙ্গাপাড়া এলাকার ভাদু মন্ডলের ছেলে। তাঁর বিরদ্ধে দৌলতপুর থানায় ৯টিরও বেশি মামলা রয়েছে। ২০০৯ সালে র‌্যাবের অভিযানে চরাঞ্চলের ত্রাস ফিলিপনগর গ্রামের সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান লালচাঁদ নিহত হওয়ার পর তাঁর ভাই সুখচাঁদ ও নাহারুল এ বাহিনীর দায়িত্ব নেন। তবে বর্তমানে নাহারুলের ছেলে মামুন, লালচাঁদের ছেলে রুবেলসহ ফিলিপনগর এলাকার একাধিক যুবক এ বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। এ বাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা, চরের জমি দখল, বাথানের রাখাল ও মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, মাদক ও অস্ত্র পাচার এবং ডাকাতির অভিযোগ ও মামলা রয়েছে।

এ বাহিনীর পাশাপাশি বর্তমানে বেশ আলোচনায় রয়েছে রাখি বাহিনী। এ বাহিনীর প্রধান রাকিবুল ইসলাম রাখি। তার বিরুদ্ধেও অন্তত ১৭টি মামলা রয়েছে। রাখি’র বাড়ি ফিলিপনগর ইউনিয়নের দারোগার মোড়ে। এ ছাড়াও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সক্রিয় রয়েছে শরিফ কাইগি বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনী।

গোয়েন্দা সূত্রমতে, ২০২৪ এর ৫ আগস্টের পর দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে এসব বাহিনীর মাধ্যমে দেশে বিপুল পরিমান অস্ত্র প্রবেশের তথ্য রয়েছে। পদ্মার চরের খড়ের মাঠ দখল নিয়ে দুই বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধের পর গত বৃহস্পতিবার ১২০ সদস্যের পুলিশের অভিযানিক দল সন্ত্রাসীদের ধরতে চরে অভিযান চালায়। কেউ গ্রেপ্তার না হলেও পুলিশের এমন অভিযানে চরবাসীর মাঝে স্বস্থি ফিরেছে।

এবিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মো. সোলায়মান মেখ বলেন, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে চরে অভিযান চলামান রয়েছে। সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল চরগুলোতে আর হতে দেয়া হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

অস্ত্রের মহড়া ও গোলাগুলিতে আতঙ্কিত চরবাসী

দৌলতপুরে পদ্মার দূর্গম চর দখল নিতে সক্রিয় এক ডজন সন্ত্রাসী বাহিনী

আব্দুস সবুর
Update Time : ১২:১৮:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মার দূর্গম ও বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল দখল নিতে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে অন্তত একডজন সন্ত্রাসী বাহিনী। অস্ত্রের সশস্ত্র মহড়া ও গোলাগুলিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে চরের নিরীহ মানুষ।

পদ্মার চরের খড়ের মাঠ দখল নিয়ে গত কয়েকদিন আগে দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধে ৩জন নিহত হওয়ার ঘটনায় চরবাসীর দিন কাটছে উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। আবার কেউ ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।

ভারত সীমান্তঘেঁষা চরাঞ্চল হওয়ার কারণে পদ্মার চর অপরাধীদের যেন অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পদ্মার চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাকন বাহিনী ও মন্ডল বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আধিপত্য বিস্তার ও খড়ের মাঠ দখল নিতে এই দুই বাহিনীর মধ্যে প্রায়ই গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বালুমহল দখল নিয়েও রয়েছে তাদের মধ্যে বিরোধ। এরই জের ধরে গত ২৭ অক্টোবর দুপুরে মন্ডল বাহিনী ও কাকন বাহিনীর মধ্যে মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজার পদ্মার দূর্গম চরে ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কয়েক ঘন্টা ধরে চলা বন্দুকযুদ্ধে উভয় বাহিনীর আমান মন্ডল (৩৬), নাজমুল মন্ডল (২৬) ও লিটন আলী ঘোষ (৩০) নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় মুনতাজ মন্ডল (৩২) ও রাকিব মন্ডল (১৮) নামে আরো দু’জন। শুধু এই দুই সন্ত্রাসী বাহিনী নয়, সক্রিয় রয়েছে আরো অন্তত ১০টি সন্ত্রাসী বাহিনী। এরমধ্যে রয়েছে টুকু বাহিনী, সাইদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, শরিফ কাইগি বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনী বাহিনী উল্লেখযোগ্য।

২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে ফিলিপনগর ইউপি চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুকে হত্যার মধ্যদিয়ে বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের জানান দেয়। এরপর থেকে তারা নানা ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড ঘটিয়ে থাকে। এসব বাহিনীর দু’একজন সদস্য পুলিশের অভিযানে পড়লেও তারা জামিনে এসে আবারও সক্রিয় হয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে।

এসব বাহিনীর সদস্যরা রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে থাকার কারণে উপজেলার মরিচা, ফিলিপনগর ও চিলমারী ইউনিয়নের পদ্মার চরের জমি দখল, ফসল লুট, বাথানের গরু-মহিষ লুট, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, বালু উত্তোলন, মাদক ও অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব সন্ত্রাসী বাহিনী পদ্মার চরে নিজেরা সশস্ত্র সম্রাজ্য গড়ে তুলে অপরাধ কার্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিগ্নে ও নির্ভয়ে। সচারাচার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চালানো সম্ভব না হওয়ায় অপরাধের অভায়রণ্য হয়ে পড়েছে চরাঞ্চল। শুধুমাত্র দৌলতপুরের পদ্মার চর নয়, এসব বাহিনী রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলার দূর্গম চরের রয়েছে তাদের বিস্তার।

সম্প্রতি দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর চরে কাকন বাহিনী ও মন্ডল বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধে দুই বাহিনী ৩ সদস্য নিহত হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায়র আসামি ধরতে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের একাধিক টিম পদ্মার চরে সাঁড়াশি অভিযান চালায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করেত না পারলেও অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুরের পদ্মারচরে বর্তমানে ডজনখানেক সন্ত্রাসী বাহিনী থাকলেও ২০ বছর আগে এখানে দুটি সন্ত্রাসী বাহিনীর উত্থান ঘটেছিল। একটি ছাপাত-পান্না বাহিনী অপরটি ও লালচাঁদ বাহিনী। একইভাবে দুই বাহিনীর সন্ত্রাসীরা সেসময় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতো। তাদের অপরাধ কর্মকান্ডে এলাকার সাধারণ মানুষ ছিল অসহায়, ভীতসন্ত্রস্থ ও বন্দী। দুই বাহিনীর হাতে সেসময় অনন্ত ৪১ জন খুন হয়। যা ওই সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার হয়।

পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানে ‘ক্রসফাযারে’ দুই বাহিনীর প্রধান লালচাঁদ, ছাপাত ও পান্নাসহ তাদের সহযোগিরা নিহত হলে পরবর্তীতে কাকন বাহিনী চরাঞ্চল নিয়ন্ত্রনে নেয়। বাহিনী প্রধান কাকনের বিরুদ্ধে পাবনার ঈশ্বরদী, রাজশাহীর বাঘা, নাটোরের লালপুর ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানায় অর্ধডজন মামলা হয়েছে। কাকন পাবনার ঈশ্বরদী কলেজ রোডের বাসিন্দা হলেও তার বাবার বাড়ি দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামে।

এছাড়াও টুকু ও গিট্টু সোহাগ বাহিনী, সাইদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, নাজমুল বাহিনী, শরিফ কাইগি বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনীর প্রধান সহ সহযোগি সন্ত্রাসীদের বাড়ি ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়।

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুকে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করে আলোচনায় আসে টুকু বাহিনী। বাহিনীর প্রধান তরিকুল ইসলাম ওরফে টুকু’র বাড়ি ফিলিপনগর গ্রামে। বর্তমানে টুকু বাহিনীর সদস্য প্রায় ২০ জনের মত। ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হত্যায় বাহিনী প্রধান টুকু ও গিট্টু সোহাগ বাহিনীর বেশ কয়েকজন সহযোগী গ্রেপ্তার হলেও জামিনে মুক্ত হয়ে একই অপরাধে জড়িত রয়েছে তারা।

এছাড়াও চলতি বছরের ১০ ফেব্রয়ারি রাতে মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর মন্ডলপাড়া এলাকায় রাজু আহমেদ (১৮) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে সাইদ বাহিনী। বাহিনীর প্রধান আবু সাঈদ মন্ডল (৩৫) মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর দক্ষিণ ভাঙ্গাপাড়া এলাকার ভাদু মন্ডলের ছেলে। তাঁর বিরদ্ধে দৌলতপুর থানায় ৯টিরও বেশি মামলা রয়েছে। ২০০৯ সালে র‌্যাবের অভিযানে চরাঞ্চলের ত্রাস ফিলিপনগর গ্রামের সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান লালচাঁদ নিহত হওয়ার পর তাঁর ভাই সুখচাঁদ ও নাহারুল এ বাহিনীর দায়িত্ব নেন। তবে বর্তমানে নাহারুলের ছেলে মামুন, লালচাঁদের ছেলে রুবেলসহ ফিলিপনগর এলাকার একাধিক যুবক এ বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। এ বাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা, চরের জমি দখল, বাথানের রাখাল ও মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, মাদক ও অস্ত্র পাচার এবং ডাকাতির অভিযোগ ও মামলা রয়েছে।

এ বাহিনীর পাশাপাশি বর্তমানে বেশ আলোচনায় রয়েছে রাখি বাহিনী। এ বাহিনীর প্রধান রাকিবুল ইসলাম রাখি। তার বিরুদ্ধেও অন্তত ১৭টি মামলা রয়েছে। রাখি’র বাড়ি ফিলিপনগর ইউনিয়নের দারোগার মোড়ে। এ ছাড়াও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সক্রিয় রয়েছে শরিফ কাইগি বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনী।

গোয়েন্দা সূত্রমতে, ২০২৪ এর ৫ আগস্টের পর দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে এসব বাহিনীর মাধ্যমে দেশে বিপুল পরিমান অস্ত্র প্রবেশের তথ্য রয়েছে। পদ্মার চরের খড়ের মাঠ দখল নিয়ে দুই বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধের পর গত বৃহস্পতিবার ১২০ সদস্যের পুলিশের অভিযানিক দল সন্ত্রাসীদের ধরতে চরে অভিযান চালায়। কেউ গ্রেপ্তার না হলেও পুলিশের এমন অভিযানে চরবাসীর মাঝে স্বস্থি ফিরেছে।

এবিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মো. সোলায়মান মেখ বলেন, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে চরে অভিযান চলামান রয়েছে। সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল চরগুলোতে আর হতে দেয়া হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।